সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

শিমের নাম ‘তলোয়ার’, চাষ করুন সহজেই

sword bean and BARI jack bean-01
তলোয়ার শিম ও বারি জ্যাক শিম-১

তলোয়ার শিম বা তরবারি শিম। এটি বেশ পুরনো এবং অনেকটা বুনো প্রজাতির শিম। মানুষ আগে বাড়ির আশেপাশে ঝোড়ঝাড় এলাকায় এ শিম গাছ লাগাতো। গাছ বেশ বড় হয়। ফলে আশেপাশের অনেকখানি এলাকা ছেয়ে যায়।

তলোয়ার শিম দেশে নতুন করে চাষ শুরু হয়েছে। বাজারে বেশ দামও। অনেক জায়গায় এই শিমকে মাখন শিম, হাতি আনাজ বা ক্যাটরা শিমও বলে। তবে দেখতে তলোয়ারের মতো বলে তলোয়ার বা তরবারি শিম নামেই বেশি পরিচিত। এই শিমের নতুন একটি ভ্যারাইটি উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নামকরণ করা হয়েছে ‘বারি জ্যাক শিম-১’।

তবে সাধারণ তলোয়ার শিমের চেয়ে বারি জ্যাক শিম-১ এর বৈশিষ্ট্য বেশ আলাদা। জ্যাক শিমের গাছ তলোয়ার শিমের মত দীর্ঘজীবী ও লতানো নয়। অনেকটা বেগুন গাছের মত খাটো ও ঝোপালো। জ্যাক শিমের পড সবুজ, ঘোড়ার কেশবের মতো বাঁকা, এ কারণে একে ঘোড়া শিমও বলে। শিম ২০-২৪ সেমি লম্বা এবং ১.৮-২.২ সেমি প্রশস্ত হয়। বারো মাস ফলে।

ফুল গোলাপী, থোকায় থোকায় সবুজ শিম ধরে। বীজ সাদা। ফুলে পরাগায়নের ১০-১২ দিন পর শিম খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি গাছে শিমের সংখ্যা ৪৫-৫৫ টি। অর্থাৎ প্রতিটি গাছ থেকে ১.০-১.৫ কেজি শিম ধরে। গাছের আকার ছোট হওয়ার কারণে এটি টবেও চাষ করা সম্ভব।

তবে খুব দ্রুতই আঁশ শক্ত হয়ে যায়, তখন খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জাতটি সারা বছর চাষ করা গেলেও খরিফ মৌসুমে ফলন ভালো হয়।

অপরিপক্ব বা কচি ফল শিমের মতো সবজি হিসেবে ভেজে বা রান্না করে খাওয়া হয়। তবে ভেজে ভর্তা করলে বেশি মজা পাওয়া যায়। এটির বীজ ভেজে বা রান্না করে খাওয়া যায়। এটি বিন জাতীয় সবজির মতোই প্রচুর আমিষ সমৃদ্ধ সবজি।

তলোয়ার শিমের চাষ পদ্ধতি
জমি ছাড়াও বসত বাড়ির আঙিনা, রাস্তার ধারে, জমির আইলে, ঘরের চালে, বিভিন্ন গাছের সাথে এ শিম চাষ করা যায়। দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে এই শিমের  ভাল ফলন হয়।

দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি স্থানীয় শিমের জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাইনতারা, হাতিকান, চ্যাপ্টাশিম, ধলা শিম, পুঁটিশিম, ঘৃত কাঞ্চন, সীতাকুন্ড, নলডক ইত্যাদি। এছাড়া বারি শিম ১, বারি শিম ২, বিইউ শিম ৩, ইপসা শিম ১, ইপসা শিম ২, একস্ট্রা আর্লি, আইলেট ইত্যাদি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত। তলোয়ার শিমের আকার ১০ ইঞ্চির উপরে হতে পারে।

মাটি
উঁচু জমি বেছে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে শিম গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তবে তলোয়ার শিমের গাছের শিঁকড় মাটির গভীরে চলে গেলে আর তেমন একটা যত্ন নিতে হয় না। সামান্য ছায়া পড়ে এমন জায়গাতেও আবাদ করা যায়। তবে ভালো ফলন পেতে হলে একটু বেশি যত্ন নিতেই হবে। 

জমি তৈরি ও বীজ বপন
মে থেকে জুন মাসে শিমের বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। শিমও পাওয়া যায় আগাম। ফলে বাজারে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তলোয়ার শিম সারি করে চাষ করতে চাইলে এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব হবে ৭৫ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার। এতে হেক্টর প্রতি ২৫ থেকে ৪০ কেজি বীজ লাগে। 

সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
বাড়িতে তলোয়ার শিম চাষ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার সারের প্রয়োজন হয় না। তবে মাদা তৈরি করার সময় ৪ থেকে ৫ কেজি গোবর বা কেঁচো সার, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার ও ৫০ গ্রাম এমওপি সার দিলে গাছে ফলন ভালো হয়। তবে ইউরিয়া সার না দিলেও চলে। কারণ এটি লিগিউম জাতীয় উদ্ভিদ। বড় হলে শিকড়ে যে নডিউল তৈরি হবে সেখানে নাইট্রোজেন ধারণকারী ব্যাকটেরিয়া জড়ো হবে। ফলে গাছ নিজে থেকেই যথেষ্ট নাইট্রোজেন পাবে।

সেচ ও পানি নিষ্কাশন
মে-জুন মাসে সারধারণত বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। অর্থাৎ এটি খরার সময়। এসময় তলোয়ার শিম গাছে নিয়মিত পানি দিতে হবে। তবে বৃষ্টি হলে যেন গোড়ায় পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পানি জমে থাকলে গাছ বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে। 

গাছ এক ফুটের মতো লম্বা হলে গোড়ার মাটি কুপিয়ে ঝাঁজরি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এরপর প্রয়োজন হলে সেচ দিতে হবে। আবার সার দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলে মাটিতে রস আছে কিনা পরীক্ষা করে প্রয়োজনে সেচ দিয়ে নিতে হবে। তলোয়ার শিমের গাছ যখন একটু বড় হবে তখনই বাঁশে আগা পুঁতে দিয়ে বাউনি দিতে হবে। তবে জ্যাক শিমের ক্ষেত্রে বাউনি লাগে না।

আগাছা দমন
চারা বড় হয়ে ঝোপের মতো না হওয়া পর্যন্ত গোড়ার আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। ইউরিয়া সার ও সেচ দেয়ার আগে নিড়ানি দিয়ে গাছের গোড়ার চারপাশে থাকা ঘাস পরিষ্কার করে দিতে হবে। 

পোকামাকড় ও রোগদমন
তলোয়ার শিমের তেমন কোন রোগবালাই হয় না। তাছাড়া বারি জ্যাক শিম-১ ভাইরাস প্রতিরোধী।  তবে কখনো কখনো শিকড় পচা রোগে গাছ আক্রান্ত হয়। আবার দেখা যায় বিছা পোকা গাছের পাতা খেয়ে নষ্ট করে। আবার লেদা পোকাও গাছের পাতা খায়। 

পোকামাকড় জৈব পদ্ধতিতে দমন করাই ভালো। সেক্স ফেরোমোন বা জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে দেখতে পারেন। 

তলোয়ার শিমের বীজ বোনার পর ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যে কচি ফল তুলে খেতে হয়। ভালোভাবে যত্ন নিলে হেক্টর প্রতি ৭২০০ থেকে ১৫০০০ কেজি তলোয়ার শিমের ফলন পাওয়া যায়। ফল তুলতে কয়েক দিন দেরি করে ফেললেই ফল শক্ত হয়ে যায়। তখন আর খাওয়া যায় না। তাই সময় মতো ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments