সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

দেশি, সোনালি, লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির বয়স ভেদে খাদ্য তালিকা

ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির খাদ্য তালিকা

খামারি ভাইদের অনেকে মুরগির রেশন নিয়ে খুব চিহ্নিত বা কনফিউজড থাকেন। কোন জাতের মুরগির কোন বয়সে কোন ধরনের খাবার দেন, কী পরিমাণে দেবেন বা দিনে কতোবার খাবার দেওয়ার উচিত এসব নিয়ে তাঁরা কিছুটা উদ্বেগের মধ্যে থাকেন।

তাদের এখানে একটি সাধারণ গাইড তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো। সুবিধার জন্য বর্ণনার পাশাপাশি টেবিল করেও খাদ্য তালিকা দেওয়া হলো।

একটি সাধারণ কথা হলো: বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশ্রিত করে পাখির রেশন তৈরি করা হয়। রেশন হচ্ছে ২৪ ঘণ্টায় কোনো পশু বা পাখির গ্রহণ করা খাদ্য। রেশন অবশ্যই পুষ্টি উপাদানে সুষম হতে হবে। যেহেতু মুরগি ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়, তাই ডিমপাড়া মুরগি ও ব্রয়লার মুরগির জন্য আলাদা রেশন তৈরি করা হয়। 

মুরগির জন্য সাধারণ খাদ্য উপকরণ

মুরগির খাদ্য তৈরিতে প্রধানত দানাশস্য (গম, ভুট্টা ইত্যাদি) ও এসব শস্যের উপজাত (ভুসি, কুড়া ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়। রেশন তৈরির জন্য দানাশস্য হিসেবে প্রধানত গম, ভুট্টা ও ভুসি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বসতবাড়িতে পারিবারিক মুরগি পালনে যে কোনো শস্যদানা যেমন- ধান, চাল, খুদ, ডাল, সরিষা ইত্যাদি মুৃরগিকে খেতে দেওয়া হয়। খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান, প্রাপ্যতা ও বাজারদর বিবেচনা করে রেশন তৈরির জন্য নির্বাচন করতে হবে। নিচে পুষ্টি উপাদান বিবেচনায় খাদ্য উপকরণের একটি তালিকা দেওয়া হলো:

পুষ্টি উপাদান খাদ্য উপকরণ

শর্করা:                গম, ভুট্টা, ধান, চাল, চালের কুড়াঁ, গমের ভুসি ইত্যাদি।

আমিষ:                শুঁটকি মাছের গুঁড়া, তিলের খৈল, সরিষার খৈল, সয়াবিন মিল রক্তের গুঁড়া ইত্যাদি।

স্নেহ/চর্বি:                বিভিন্ন উদ্ভিজ তৈল যেমন : পাম তৈল, তিলের তৈল, সয়াবিন তৈল ইত্যাদি।

খনিজ পদার্থ: খাদ্য লবণ, ঝিনুক খোসা চূর্ণ, হাঁড়ের গুঁড়া ডিমের খোসা, চুনা পাথর ইত্যাদি

ভিটামিন:            শাকসবজি, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ইত্যাদি।

পানি:                    পরিষ্কার বিশুদ্ধ (জীবাণুমুক্ত) পানি।

লেয়ার মুরগির বয়স অনুযায়ী সাধারণত রেশনের তিনটি পর্যায় আছে:

১. লেয়ার স্টার্টার বা প্রারম্ভিক রেশন : ০-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত

২. বাড়ন্ত মুরগির রেশন : ৯-১৯ সপ্তাহ পর্যন্ত

৩. ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির রেশন: ২০-৭২ সপ্তাহ পর্যন্ত

একই ভাবে ব্রয়লার মুরগিরও কিন্তু রেশনের তিনটি পর্যায় আছে:

ব্রয়লার মুরগিকে ৩ প্রকার রেশন সরবরাহ করা হয়:

১. ব্রয়লার স্টার্টার বা প্রারম্ভিক রেশন: ০-২ সপ্তাহ পর্যন্ত

২. ব্রয়লার গ্রোয়ার বা বাড়ন্ত বাচ্চার রেশন: ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত

৩. ব্রয়লার ফিনিশার রেশন: ৫-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত

মুরগির খাদ্য গ্রহণ

এবার আমরা লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ জানবো। খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ মুরগির জাত, বয়স, তাপমাত্রা, আবহাওয়া ও জলবায়ু, খাদ্যের মান, বাসস্থান, খাদ্যের আকার ও পরিবেশনের ওপর নির্ভর করে। এরপরও বিশেষজ্ঞরা একটি আদর্শ মান দিয়েছেন। নিচে সেটির একটি তালিকা দেওয়া হলো:

বয়স লেয়ার মুরগি (গ্রাম) ব্রয়লার মুরগি (গ্রাম)
প্রথম সপ্তাহ ১০ ২৫
দ্বিতীয় সপ্তাহ ২০ ৬৫
তৃতীয় সপ্তাহ ২৫ ১০০
চতুর্থ সপ্তাহ ৩০ ১৩০
পঞ্চম সপ্তাহ ৩৫ ১৬০
ষষ্ঠ সপ্তাহ ৩৭ ১৬৫
সপ্তম সপ্তাহ ৪০ -
অষ্টম সপ্তাহ ৪৫ -
বাড়ন্ত ৭০ -
বয়স্ক ১১৫ -

নোট: অষ্টম সপ্তাহ থেকে ব্রয়লারের ঘর খালি রাখার কারণ হলো- সাধারণত এই সময়ের মধ্য ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করে দেওয়া হয়।

প্রথমে আমরা লেয়ার মুরগির রেশন নিয়ে আলোচনা করবো। সোনালি/লেয়ার মুরগির খাদ্য তালিকা করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। যেমন বয়স, পালনের উদ্দেশ্য, আবহাওয়া, পুষ্টিমান ইত্যাদি। সাধারণত এক মাস বয়স পর্যন্ত স্টার্টার, বাড়ন্ত সময়ে গ্রোয়ার ও ডিম পাড়ার সময়ে লেয়ার ফিড সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যথাযথ পুষ্টিমান জেনে আপনি সহজেই সোনালি মুরগির খাদ্য তৈরি করতে পারেন।

বিভিন্ন বয়সের লেয়ার বা ডিমপাড়া মুরগির একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা (মাত্র তিনটি ধাপের খাদ্য তালিকা দেওযা হলো):

উপাদান প্রারম্ভিক রেশন (%) বৃদ্ধি রেশন (%) লেয়ার রেশন (%)
গম/ভূট্টা ভাঙা ৫২.০ ৪৮.০ ৫০.০
গমের ভূষি ৮.০ ৮.০ ৬.০
চালের মিহিকুঁড়া ১১.০ ১৫.০ ১৫.০
তিলের খৈল ১২.০ ১১.০ ৮.০
শুটকি মাছের গুঁড়া ১৩.০ ১২.০ ১২.০
হাড়ের গুঁড়া ১.৫ ৩.০ ২.৫
ঝিনুক চূর্ণ ২.০ ২.৫ ৬.০
লবণ ০.৫ ০.৫ ০.৫
সর্বমোট ১০০ ১০০ ১০০

নোট: শতাংশের হিসাব বুঝতে যাদের সমস্যা হয় তাদের জন্য একটি সহজ কৌশল: ধরুন আপনি ১০ কেজি রেশন তৈরি করতে চান। তাহলে বিভিন্ন উপাদান আলাদা করে মেপে নিবেন। উপরের তালিকা অনুযায়ী পরিমাণের হিসাব হবে এরকম: গমের ভুসি=(৮×১০)/১০০=০.৮ কেজি বা ৮০০ গ্রাম। অর্থাৎ ১০ কেজি রেশনে লাগবে ৮০০ গ্রাম গমের ভুসি। এভাবে বাকিগুলো হিসাব করুন। 

বিভিন্ন বয়সী ব্রয়লার মুরগির একটি আদর্শ রেশন:

উপাদান প্রারম্ভিক রেশন (%) বৃদ্ধি রেশন (%)
গম/ভুট্টা ভাঙা ৫০.০ ৫২.০
চালের মিহিকুঁড়া ১৫.০ ১২.০
তিলের খৈল ১২.০ ১০.০
শুটকি মাছের গুঁড়া ১৪.০ ১২.০
সয়াবিন মিল
সয়াবিন তৈল ০.০ ২.০
হাড়ের গুঁড়া ১.৫ ২.৫
খাদ্য লবণ ০.৫ ০.৫
সর্বমোট ১০০ ১০০

ব্রয়লারের খাবার নিয়ে বিস্তারিত

দেশে এখন পর্যন্ত পোল্ট্রির মধ্যে ব্রয়লার মুরগির পালনের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে একসব মুরগি বিক্রির উপযুক্ত হয়, জনপ্রিয় এটা একটা বড় কারণ।

তবে লাভজনকভাবে ব্রয়লার মুরগি পালনের অন্যতম উপায় হলো খাবারের পেছনে খরচ কমিয়ে আনা। সঠিক ফিড ফরমুলেশন জানা থাকলে খামারি খরচ কমানোর কৌশল বের করে ফেলতে পারবেন।

নিচে ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তৈরির একটি সাধারণ তালিকা দেওয়া হলো। তবে মনে রাখতে হবে, ব্রয়লারের জাত বিবেচনায় খাদ্য পুষ্টিমান চাহিদা ভিন্ন হতে পারে।

নিচে ১০০ কেজি রেশনের জন্য বিভিন্ন উপাদানের হার উল্লেখ করা হলো:

খাদ্য উপাদান প্রারম্ভিক/স্টার্টার (কেজি) বৃদ্ধি/গ্রোয়ার (কেজি) ফিনিশার (কেজি)
গম/ভুট্টা ভাঙা ৪৮ ৫০ ৫৩
সয়াবিন মিল ৩০ ২৬ ২৪
রাইচ পলিশ ১০ ১২ ১০
শুটকি গুঁড়া/আমিষ (৬০%)
লাইমস্টোন/ঝিনুক চূর্ণ
লবণ ৩০০ গ্রাম ২৮০ গ্রাম ২৮০ গ্রাম
ডিসিপি ৩০০ গ্রাম ৩০০ গ্রাম ৩০০ গ্রাম
*সালমোনেলা কিলার ২৫০ গ্রাম ২৫০ গ্রাম ২৫০ গ্রাম
*প্রিমিক্স ৩০০ গ্রাম ৩০০ গ্রাম ৩০০ গ্রাম
ডিএল-মিথিওনিন ১৫০ গ্রাম ১৩৫ গ্রাম ১৩০ গ্রাম
এল-লাইসিন ৮০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
কোলিন ক্লোরাইড ৭০ গ্রাম ৭০ গ্রাম ৬০ গ্রাম
*টক্সিন বাইন্ডার ১২৫ গ্রাম ১৩৫ গ্রাম ৩৫০ গ্রাম
*সয়াবিন তেল ৫০০ গ্রাম ২৫০ গ্রাম -
সর্বমোট ১০০ কেজি ১০০ কেজি ১০০ কেজি

নোট: ব্রয়লারের টার্গেট বডি ওয়েট পেতে এই খাদ্য তালিকায় সামান্য পরিবর্তন, পরিমার্জন করা যেতে পারে। আবহাওয়ার সঙ্গেও পরিবর্তন আনতে হতে পারে। তারকা চিহ্নিত উপাদানের পরিমাণের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কোম্পানির প্যাকেটের গায়ের নির্দেশনা মেনে চলুন।

রেশনে কিছু ফিড অ্যাডিটিভ যুক্ত করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। নিচের এর একটি তালিকা দেওয়া হলো:

উপাদান প্রারম্ভিক/স্টার্টার বৃদ্ধি/গ্রোয়ার ফিনিশার
এনজাইম ৬০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৭০ গ্রাম
প্রোবায়োটিক ৬০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৪৫ গ্রাম
ককসিডিওস্টাট ৩০ গ্রাম ৩৫ গ্রাম -
গ্রোথ প্রমোটার - ১০০ গ্রাম ১৫০ গ্রাম

** ফিড অ্যাডিটিভসের ব্যবহার কোম্পানির নির্দেশনা মেনে করতে হবে।

সোনালি মুরগির খাদ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলাপ

সোনালি মুরগি পালন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। ফলে এই মুরগি পালনে দক্ষতা খুব জরুরি। সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। যেমন: বয়স, পালনের উদ্দেশ্য, আবহাওয়া, পুষ্টিমান ইত্যাদি। সাধারণত এক মাস বয়স পর্যন্ত স্টার্টার, বাড়ন্ত সময়ে গ্রোয়ার ও ডিম পাড়ার সময় লেয়ার ফিড সরবরাহ করা হয়। পুষ্টিমান জানা থাকলে নিজেই সোনালি মুরগির রেশন তৈরি করতে পারবেন।

বয়স অনুসারে সোনালি মুরগির জন্য সাধারণত ৩-৫ ধরনের খাবার দেওয়া হয়:

খাবারের নাম বয়স (সপ্তাহ)

স্টার্টার         ০-৬ সপ্তাহ

গ্রোয়ার         ৭-১২ সপ্তাহ

প্রিলেয়ার         ১৩-১৭ সপ্তাহ

লেয়ার ১         ১৮-৪৫ সপ্তাহ

লেয়ার ২         ৪৬-৯৫ সপ্তাহ

সোনালি মুরগি খাদ্য ও পুষ্টিমান চাহিদা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

বয়স অনুযায়ী খাবারে পুষ্টিমানের চাহিদা পরিবর্তন হয়। শীত গরম অনুযায়ী শরীরে শক্তি (এনার্জি) কম বেশি লাগে। অর্থাৎ আবহাওয়া ভেদে কম বা বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়। যেমন: গরমকালে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার দিতে হবে। আর শীতকালে বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার। সোনালি মুরগির খাদ্য তৈরিতে নিম্নলিখিত চার্টটি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে:

খাদ্য উপাদান প্রারম্ভিক/স্টার্টার বৃদ্ধি/গ্রোয়ার প্রি-লেয়ার লেয়ার ১ লেয়ার ২
মেটাবলিক এনার্জি (kcal/kg) ২৮৫০-৩০৫০ ২৮০০-৩০০০ ২৭৫০-২৯৫০ ২৭৮০-২৯৮০ ২৭৫০-২৯৯০
ক্রুড প্রোটিন (g/day) ২০-২২ ১৮-২০ ১৫.৫-১৭.৫ ১৬.৫-১৮.৫ ১৬-১৬.৫
লাইসিন (mg/day) ৯৫০-১১১০ ৮২০-৮৯০ ৭২০-৭৫০ ৭২০-৭৮০ ৬৭০-৭৪০
মিথিওনিন (mg/day) ৪৫০-৪৯০ ৩৯০-৪৩০ ২৮০-৩০০ ৩৫০-৩৮০ ৩৪০-৩৭০
ক্যালসিয়াম (g/day) ০.৯০ ২.৬০ ২.৮০-৩.৯০
সোডিয়াম ও ক্লোরাইড (mg/day) ২০০ ১৮০ ১৭০ ১৮০ ১৮০
থায়োনিন (mg/day) ৬৫০-৭৮০ ৫৫০-৬৪০ ৪৩০-৫১০ ৫৫০-৫৮০ ৫০০-৫৬০

সোনালি মুরগির জন্য ১০০ কেজি খাবার তৈরির একটি তালিকা দেওয়া হলো:

খাদ্য উপাদান প্রারম্ভিক/স্টার্টার বৃদ্ধি/গ্রোয়ার প্রি-লেয়ার লেয়ার ১ লেয়ার ২
ভুট্টা (কেজি) ৫১ ৫২.৫ ৫৪ ৫৫ ৫৬
সয়াবিন মিল (কেজি) ২৬ ২৫ ২২.৫ ২৩ ২২
রাইচ পলিশ (কেজি) ১০ ১০ ১২ ৭.৫
প্রোটিন ৬০% (কেজি) ৫.৫
লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ (কেজি) ২.৫ ১০
লবণ (গ্রাম) ৩০০ ২৮০ ২৫০ ২৮০ ২৮০
ডিসিপি (গ্রাম) ৩০০ ৩০০ ২৫০ ৫০০ ৫০০
সালমোনেলা কিলার (গ্রাম) ৩০০ ২৫০ ২৫০ ৩০০ ৩২০
প্রিমিক্স (গ্রাম) ২০০ ২৫০ ২০০ ৩০০ ৩০০
ডিএল- মিথিওনিন (গ্রাম) ১৫০ ১৩৫ ১২০ ১৩০ ১২৫
এল-লাইসিন (গ্রাম) ১০০ ৯০ ৭০ ৮০ ৬০
কোলিন ক্লোরাইড (গ্রাম) ৬০ ৫০ ৪০ ৫০ ৫০
টক্সিন বাইন্ডার (গ্রাম) ১২৫ ১৩৫ ১৫০ ১৫০ ১৫০
সোডা (গ্রাম) - - - ৫০ ৭৫
সয়াবিন তেল (গ্রাম) ২০০ ১৫০ - ১০০ -
মোট (কেজি) ১০০ ১০০ ১০০ ১০০ ১০০

বিশেষ নোট: উল্লেখিত তালিকাতে সয়াবিন তেলের ওজন ধরা হয়নি। এবং টক্সিন বাইন্ডার, সালমোনেলা কিলার, ভিটামিন-মিনারেলস প্রিমিক্স প্রয়োজন অনুযায়ী স্ব-স্ব কোম্পানির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।

খামারের মুরগির স্বাস্থ্য, উৎপাদন, খাদ্য উপাদানের গুণগত মান ও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন করা যেতে পারে।

খাদ্য তালিকায় উল্লেখিত ফিড অ্যাডিটিভসগুলো স্ব-স্ব কোম্পানির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে অথবা অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ানকে দিয়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা যেতে পারে।

দেশি মুরগি পালন

আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ ফিড বা বাজারের রেডি ফিড খাইয়ে বড় করা দেশি মুরগি আর চেহারায় বা স্বাদে দেশি মুরগির মতো থাকে না। ফলে বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায় না। 

প্রাকৃতিক উপায়ে বড় হওয়া দেশি মুরগি আর শুধু ফিডনির্ভর দেশি মুরগির স্বাদে আকাশ-পাতাল তফাত থাকে। দেখতেও দেশি মুরগির মতো চঞ্চল ও স্লিম লাগে না। শরীরও তেমন চকচকে হয় না।

এ ধরনের বিড়ম্বনা এড়াতে যতোটা সম্ভব দেশি মুরগি পালনে বাজারের ফিড নির্ভরতা কমাতে হবে। আবদ্ধ অবস্থায় পালন করলেও বেশ বড় জায়গা নিয়ে করা উচিত। সবচেয়ে ভালো হয়, ফ্রি রেঞ্জে অর্থাৎ একটি ঘেরা মাঠে ছেড়ে দিয়ে পালন করা। এতে কিন্তু উৎপাদন খরচ কমে যায়, আবার দেশি মুরগির আদল, আচরণ ও স্বাদ বজায় থাকে। ফলে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়।

যদি যথেষ্ট জায়গা না থাকে তাহলে নিচের পদ্ধতিটি অনুসরণ করা যেতে পারে:

সাধারণত ফার্মে বাচ্চার এক মাস বয়স পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা আলোতে রেখে ব্রয়লার স্টার্টার খাওয়ানো হয়।

২য় মাস থেকে আলোতে রাখা হয় ১৪-১৬ ঘণ্টা আর খাবার দেওয়া হয় ধান, গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, প্রোটিন/ফিশমিল ও কাঁচা ঘাস।

সাধারণত ৬০ কেজি ভুট্টা ভাঙ্গার সাথে ২০ কেজি ধান, ২০ কেজি গম, ২ কেজি লবণ একত্রে মিক্স করা হয়। এই মিক্সার সিদ্ধ করে ঠান্ডা করার পর প্রতি ১ কেজি মিক্সারের সাথে ৮০-৯০ গ্রাম প্রোটিন/ফিসমিল মাখিয়ে নিতে হবে। নিচের টেবিল দেখুন:

খাদ্য উপাদান পরিমাণ
ভুট্টা ভাঙা (কেজি) ৬০
ধান (কেজি) ২০
গম (কেজি) ২০
লবণ (কেজি)

১ মাস বয়সের প্রতি পিস দেশি মুরগির বাচ্চার জন্য ১ম সপ্তাহে ৩০ গ্রাম করে এই মিক্সার দিত হবে। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫ গ্রাম করে খাবার বাড়াতে হবে। এই খাবারের সাথে পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস দিতে হবে। ৩১ দিন বয়স থেকে বিক্রি করার আগে পর্যন্ত এই মিক্সারই চলবে।

এভাবে একটা দেশি মুরগি ১ম মাসে মোট ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ব্রয়লার স্টার্টার, ২য় মাসে ওই মিক্সার ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম এবং ৩য় মাসে ১ কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ৭০০ গ্রাম খাবার খায়।

এ খাবার খেয়ে একটা দেশি মুরগি ৮০ থেকে ৮৫ দিনে গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।

মনে রাখতে হবে, ৭০ দিন বয়সের পর থেকে দেশি মুরগির গ্রোথ খুব কম হয়। সুতরাং দেশি মুরগি ৮০০ থেক ৯০০ গ্রাম ওজন হওয়ার পর দ্রুত বিক্রি করে দেওয়া ভালো।

গুরুত্বপূর্ণ নোট: আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা দেশি মুরগির কৃমির সমস্যা বেশি হয়। তাই বাচ্চার বয়স ৪৫ দিন পার হওয়ার পর অবশ্যই কৃমির ডোজ দিতে হবে।

ঘরে খাদ্য তৈরির নিয়ম

গম বা ভুট্টাকে প্রথমে মিলিয়ে ভেঙে নিতে হবে। খৈলকেও (সরিষা বা সয়াবিন) ভালোভাবে গুঁড়া করে নিতে হবে। খাদ্য উপকরণ মাপার পাল্লা ব্যবহার করতে হবে। খাদ্য তৈরির জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। 

>প্রথমে গম বা ভুট্টা মেপে মেঝেতে ঢালতে হবে। 

>তারপর চালের মিহিকুঁড়া ও গমের ভুসি, ভুসির ওপর শুঁটকি মাছের গুঁড়া, তার উপর খৈল ও সয়াবিন মিল ঢালতে হবে।

> এভাবে সবগুলো উপকরণ ঢালার পর খাদ্যের স্তূপটিকে একটি পিরামিডের মতো দেখা যাবে। 

>এবার ঝিনুকের গুঁড়া, হাড়ের গুঁড়া ও লবণ ওই পিরামিডের ওপর ছিটিয়ে দিতে হবে। 

>এবার আধা কেজি খাদ্য আলাদা করে নিয়ে তার মধ্যে ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স উত্তমরূপে মেশাতে হবে।

>এরপর মিশ্রিত ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স পিরামিডের ওপর সমস্ত খাদ্য ছিটিয়ে দিতে হবে। 

>সয়াবিন তেল দেওয়ার দরকার হলে তা পিরামিডের চারদিকে ঢেলে দিতে হবে। 

>এবার খাদ্যে স্তূপটির ভেতরে বারবার হাত ঢুকিয়ে সবগুলো উপকরণ ভালো ভাবে উলট পালট করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রিত এ খাদ্য বাদামি রঙের দেখাবে।

অবশ্য হাঁস-মুরগির জন্য বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাদ্য বাজারে পাওয়া যায়। এসব খাদ্য অত্যাধুনিক ফিড মিলে তৈরি করা হয়। পাখির বয়স ও উদ্দেশ্য অনুসারে বাজারে ম্যাশ (পাউডার), ক্র্যাম্বল (দানা) ও পিলেট (বড়ি) আকারের খাদ্য বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

Post a Comment

0 Comments