সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ধানের খড়ের সঙ্কটে ভালো বিকল্প গমের খড়

ধানের খড়ের চেয়ে বেশি পুষ্টি গমের খড়ে

শীতকালে গরুর খড়ের ঘাটতি সব খামারিকেই কম-বেশি ভোগায়। এসময় অনেকে হন্যে হয়ে দেশের আনাচে কানাচে খড়ের খোঁজে ঘুরতে থাকেন। এমনকি দেখা যায়, এই সঙ্কটকালে কিছু মৌসুমী খড় ব্যবসায়ীর আবির্ভাব ঘটে। এরা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে খড় বিক্রি করে। ফলে নতুন ধান না আসা অবধি খামারির খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

তবে গমের খড় কিন্তু ধানের খড়ের একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এমনকি পুষ্টিমান বিবেচনায় গমের খড় ধানের খড়ের চেয়ে ভালো।

সহজ করে বললে, গমের খড় কোনও উচ্চ প্রোটিন বা শক্তির উৎস নয়। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে গমের খড়  ৫ থেকে ৬ বডি কনডিশন স্কোরের (বিসিএস) ব্রিডার গাভীর জন্য দারুণ একটা বিকল্প খাদ্য হতে পারে। বিসিএস স্কোর ৫-৬ বলতে বুঝায় মূলত সুস্থ এবং স্বাভাবিক স্বাস্থ্য (অতিরিক্ত চর্বি নেই) বিশিষ্ট গাভী।

এছাড়া বাছুর কেবল ঘাস বা শক্ত খাবার খেতে শুরু করেছে এমন গাভীকেও গমের খড় দেওয়া যেতে পারে। 

তবে কেবল দুধ ছেড়েছে এমন বাছুরের ডায়েটে গমের খড় দিয়ে তেমন উপকার পাওয়া যাবে না।

সাবধানতা

প্রাপ্তবয়স্ক এবং ব্রিডার গাভী সারাদিনে মোট যা ড্রাই ম্যাটার খায় তার প্রায় ৫০ শতাংশ খড় দেওয়া যেতে পারে। এর বেশি দিলে রেশনে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হবে। বাকি ৫০ শতাংশে থাকতে হবে কাঁচা ঘাস বা লিগিউম জাতীয় ফসলের গাছ (খেসারি, আলফালফা ইত্যাদি) এবং উচ্চ শক্তি ও প্রোটিনযুক্ত সম্পূরক খাবার।

কিছু ক্ষেত্রে, প্রয়োজনীয় ড্রাই ম্যাটারের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত খড় দেওয়া যেতে পারে তবে, প্রোটিন, শক্তি, খনিজ এবং ভিটামিন ‘এ’ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।

সাধারণ খড় বা শুকনো ঘাস (হে)- এর চেয়ে গমের খড় পুষ্টিগুণে উন্নত। এতে পরিপাকযোগ্য পুষ্টির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ। আর আছে ৩ শতাংশ ক্রুড প্রোটিন।

একজন খামারি প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ পাউন্ড গমের খড়ের পাশাপাশি ৮ থেকে ১০ পাউন্ড মধ্যম থেকে নিম্নমানের ঘাস এবং ৫ থেকে ৬ পাউন্ড ড্রায়েড ডিস্টিলারস কর্ন (ডিডিজিএস) বা ফারমেন্ট করা শুকনো ভুট্টা ব্যবহার করে একটি সুন্দর রেশন তৈরি করতে পারেন। এই রেশনটি ১১০০ থেকে ১২০০ পাউন্ড ওজনের গরুর জন্য উপযুক্ত। স্বাভাবিক দুধ উৎপাদন শুরুর প্রথম ৯০ দিন পরে বা শুকনো (ড্রাই পিরিয়ডে থাকা গাভী) বা গর্ভবতী গাভীকে এই রেশন দেওয়া যেতে পারে।

গরু যাতে গমের খড় বেশি খায় এবং সেই সঙ্গে এই খড়ের পুষ্টির স্তর বাড়ানোর জন্য এটিকে অ্যামোনিয়েট (ইউরিয়া যুক্ত) করা যেতে পারে। এর জন্য বিদেশে খামারিরা একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। 

ঠান্ডা আবহাওয়ার সময় অ্যানহাইড্রাস অ্যামোনিয়া যুক্ত করে পুরো অ্যামোনাইজেশন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৩০ থেকে ৬০ দিন লাগতে পারে। এইভাবে, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রক্রিয়াজাত খড় ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত করা যায়।

সংক্ষেপে খড় অ্যামোনিয়েট করার কৌশল

রুমিন্যান্ট (রুমেনযুক্ত) পশু খড়ের সেলুলোজ অংশ হজম করতে পারে। তবে লিগনিন অংশটি হজম হয় না। অ্যামোনাইজেশনের মূল কাজটি হলো অ্যামোনিয়া এবং খড় ব্যবহার করে অ্যামোনোলাইসেস বিক্রিয়া তৈরি করা। এর মাধ্যমে লিগনিন এবং পলিস্যাকারাইডের মধ্যে থাকা এস্টার বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়। এতে পাকস্থলীর এনজাইমগুলোর জন্য খড় হজমে সহায়তা করা সহজ হয়। অ্যামোনিয়েটেড খড়ের হজম যোগ্যতা এবং শরীরে শোষণের পরিমান প্রায় ২০% বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়া এতে অপরিশোধিত আমিষের (ক্রুড প্রোটিন) পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বাড়ে।

ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র বা সংক্ষেপে ইউএমএস তৈরির প্রক্রিয়াও কিন্তু মূলত খড় অ্যামোনিয়েট করার কৌশল। খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া মিশিয়ে খাওয়ানোর যে প্রচলিত পদ্ধতি সে পদ্ধতিতেই এটি করা যায়। ছোট করে কাটা খড়ে পরিমান মতো তরল অ্যামোনিয়া বা ইউরিয়া বা অ্যামোনিয়াম বাইকরবোনেট মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো যেতে পারে।

তবে গমের খড়ের ক্ষেত্রে ঘাস কাটার মেশিনে না কেটে ধান মাড়াই করার মেশিনে দিয়ে নরম করে নিলে ভালো হয়।

Post a Comment

0 Comments