সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ধানের লিফ ব্লাইট বা পাতা পোড়া রোগ (সচিত্র)

ধানের ব্লাইট বা পাতা পোড়া রোগ
ধানের পাতা পোড়া রোগ
ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ (Bacterial Blight), পাতা পোড়া রোগ। এ রোগের আক্রমণে চারা গাছ নুয়ে পড়ে।  পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়। জমিতে বেশি আগাছা এবং কাছাকাছি আক্রান্ত কোনো উদ্ভিদ থাকলে সহজেই ধানক্ষেতও এ রোগে আক্রান্ত হবে। আবহাওয়ার তাপমাত্রা ২৫-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ৭০% এর বেশি থাকলে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।

প্রবল বাতাস এবং টানা বৃষ্টি হলে এ রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ধান গাছের ক্ষততে জমা পানি ফোঁটা নিংড়ে পানির সাথে মিশে বা অন্য সুস্থ ধান গাছের সাথে মিশে রোগের বিস্তার ঘটায়। জমিতের অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার (ইউরিয়া) প্রয়োগ করলে এ রোগের আক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু
জ্যানথোমোনাস অরাইজি পিভি অরাইজি (Xanthomonas oryzae pv.oryzae) এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তার
রোগটি আউশ, আমন ও বোরো এ তিন মৌসুমেই ব্যাপকভাবে দেখা  যায়। উচ্চ তাপমাত্রা (২৫-৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস), ৭০% এর বেশি আপেক্ষিক আর্দ্রতা, টানা ঝড়ো-বৃষ্টি, রোগপ্রবণ জাত লাগানো,  রোপণের সময় শিকড় অথবা গাছে ক্ষত সৃষ্টি, উচ্চ মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ ইত্যাদির কারণে রোগের প্রকোপ বেশি হয়। পাতাপোড়া রোগ ধানের খড়, মাটি, পোকা, বাতাস ও সেচের পানির মাধ্যমে এক জমি থেকে অন্য জমিতে ছড়ায়।

রোগের লক্ষণ
পাতার নুয়ে পড়া ও হলুদ রঙ ধারণা করা খেয়াল করুন।
প্রথমে পাতার অগ্রভাগ বা কিনারায় নীলাভ পানিচোষা দাগ দেখা যায়। দাগগুলো আস্তে আস্তে হালকা হলুদ বা ধূসর হলুদ রঙ ধারণ করে পাতার আগা থেকে নিচের দিকে বাড়তে থাকে। শেষের দিকে আংশিক বা সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায় এবং হলুদ বা শুকনো খড়ের রঙ ধারণ করে। ফলে পাতাটি বা পুরো গাছটি প্রথমে নেতিয়ে পড়ে ও আস্তে আস্তে পুরো গাছটি মরে যায়।
ব্লাইট রোগের ধানের পাতায় ক্ষত
ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইটে সৃষ্ট ক্ষত
চারা ও কুশি অবস্থায় সাধারণত ক্রিসেক (হলুদ হয়ে নুয়ে পড়া) লক্ষণ প্রকাশ পায়।
এ রোগের ফলে গাছটি প্রথমে নেতিয়ে পড়ে ও আস্তে আস্তে পুরো গাছটি মরে যায়।
অনেক সময় এ রোগের লক্ষণের অগ্রভাগ দিয়ে ব্যাকটিরিয়ার কোষগুলো বেরিয়ে আসে এবং কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভোরের দিকে হলদে পুঁতির দানার মতো গুটিকা সৃষ্টি করে এবং এগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার গায়ে লেগে থাকে।
পরবর্তীকালে পাতার গায়ে লেগে থাকা জলকণা গুটিকাগুলোকে গলিয়ে ফেলে, ফলে এ রোগের জীবাণু অনায়াসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ধানের পাতা পোড়া রোগের লক্ষণ
পাতা  পোড়া রোগের লক্ষণ
আক্রান্ত গাছের কাণ্ড ছিঁড়ে চাপ দিলে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজের মতো তরল পদার্থ বের হয়।
হলুদ হয়ে নেতিয়ে পড়া ধান গাছ সহজে উপড়ে ফেলা যায় না।
রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) হলে কচি পাতায় ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের লক্ষণটি প্রকাশ পায়।

ক্ষত পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করা
বয়স্ক ধান গাছে ক্ষতটি প্রথমে পানি শোষক হয়। পরে পাতা, পাতার আগা বা পাতার কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত অংশে হলুদাভ কমলা রঙ ধারণ করে।
ক্ষতটির কিনারা হয় ঢেউ খেলানো এবং এটি ক্রমেই পাতার গোড়ার দিকে প্রসারিত হয়।
ক্ষতটির বয়স যদি বেশি না হয়, অর্থাৎ আক্রান্তের পরপর সকাল বেলা আক্রান্ত স্থানে দুধের মতো শিশির বিন্দু ঝুলতে দেখা দেয়। এটি আসলে ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ একটি তরল। এ তরলটি পরে শুকিয়ে ছোট ছোট হলুদাভ পুঁতির মতো পাতার নিচের দিকে লেগে থাকে।
পাতায় ব্যাকটেরিয়ার দানা
ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ হলুদাভ পুঁতি
ক্ষতর বয়স বেশি হলে সেটি হলুদাভ থেকে ধূসর রঙ ধারণ করে। এতে কালো ডট বা বিন্দু দেখা যায়, কারণ এখানে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক জন্মে। পাতা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে ক্ষতটি পাতার গোড়া অবধি প্রসারিত হতে পারে।
আক্রান্ত ধানের পাতা
ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ শুকিয়ে গেছে
এ রোগের গুরুত্ব
ব্যাকটেরিয়াল ব্লাইট বা পাতা পোড়া রোগ ধানের খুবই মারাত্মক রোগ। ধানের যতো কম বয়সের এ রোগ আক্রমণ করবে ফলন ততো কমবে। পাতা পোড়া রোগের কারণে ধানের ফলন ৭০% পযন্ত কমে যেতে পারে। গামর বা থোড় হওয়ার সময় এ রোগের আক্রমণ হলে ফলনে যেমন ক্ষতি হয় না তবে দানার কোয়ালিটি খুব খারাপ হয় এবং অনেক দানার ভেতরে চাল অসম্পূর্ণ থাকে।

রোগের প্রতিকার
রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে।
রোগাক্রান্ত জমির ধান কাটার পর নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
জমি তৈরির সময় চাষ করার পর ভালোমতো শুকাতে হবে যাতে মাটিতে বা খড় ও আগাছায় রোগের জীবাণু বেঁচে না থাকে।
চারা উঠানোর সময় যেন শিকড় কম ছিঁড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।
সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার ও ইউরিয়া সার ৩/৪ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু রোগ দেখার পর ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
ক্রিসেক আক্রান্ত জমি শুকিয়ে ৫-১০ দিন পর আবার পানি দিতে হবে।
রোগ দেখার পর বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ৫ কেজি পটাশ সার ছিপছিপে পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে চিলিটেড জিংক স্প্রে করলে রোগের তীব্রতা কমে যায়।

আরো পড়ুন
বায়ো এজেন্ট: পোকা দিয়ে ফসলের পোকা দমন
ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার (সচিত্র)
ধানের বাদামী দাম রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার (সচিত্র)

Post a Comment

0 Comments