চট্টগ্রামের অষ্টমুখী লাল গরু |
বৈশিষ্ট্য
হালকা লাল বর্ণের এ জাতের গরু আকারে ছোটো খাটো, পেছনের দিক বেশ ভারী, চামড়া পাতলা, শিং ছোটো ও চ্যাপ্টা। এদের মুখ খাটো, চওড়া, মাঝারি ধরনের গলকম্বল, গলাখাটো ও সামান্য কুঁজ আছে। ওলান বেশ বড়, বাট সুডৌল, দুগ্ধ শিরা স্পষ্ট, গাভী অনুপাতে লেজ যথেষ্ট লম্বা, শেষ প্রান্তের লেজের গুচ্ছ লাল বর্ণের। প্রজনন অঙ্গ লাল বর্ণের।
গরুর দৈহিক ওজন ২০০-৩০০ কেজি। দুধ উৎপাদন ২.২ কেজি। দুগ্ধদান কাল ২৬০ দিন। এক বিয়ানে সর্বমোট ৫০০-৬০০ কেজি দুধ পাওয়া যায়। এ জাতের গরুর দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি (৫-৬% পর্যন্ত হয়ে থাকে)। ১০ বছরে এ জাতের গরু থেকে ৬-৭টি বাচ্চা পাওয়া যায়।
|আরো পড়ুন
বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরই) চট্টগ্রামের ৫টি উপজেলাতে (পটিয়া রাউজান, চন্দনাইশ, আনোয়ারা ও সাতকানিয়া) এ জাতের গরু পালনের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখেছে, আরসিসি জাতের গরুর গর্ভধারণের হার বেশি, প্রায় প্রতি বছর বাচ্চা দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি, প্রান্তিক চাষি পর্যায়ে এ জাতের গরুর খামার লাভজনক। দৈনিক দুধ উৎপাদন ২.৭ লিটার, এক বিয়ানে দুগ্ধদানকাল ২১৫ দিন এবং এক বিয়ানে প্রাপ্ত দুধের পরিমাণ সর্বমোট ৫৮১ লিটার। বিএলআরআইয়ের অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬-৭ বছর বয়সে অথবা ৫ম বিয়ানে দুধের পরিমাণ বেশি পাওয়া যায়। যার পরিমাণ ৫৫০-৬০০ কেজি।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য
দেশী জাতে গরুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা এখানকার আদি জাত হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে চমৎকারভাবে অভিযোজিত হয়েছে। ফলে এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। কারণ দীর্ঘদিন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানীয় রোগগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে করতে এদের শরীরে সেসব রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, এ প্রতিরোধ ক্ষমতা বংশানুক্রমে প্রবাহিত হয়। ফলে সাধারণ ব্যবস্থাপনায়ও দেশী জাতের গরু থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিকূল পরিবেশের সাথে এরা সহজে মানিয়ে নিতে পারে। রেড চিটাগাং ক্যাটেলেরও একই বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে দুধ ও মাংসের স্বাদে অন্যান্য দেশী জাতের চেয়ে এ জাতটিকে এগিয়ে রাখতেই হবে।
বিদেশী জাতের গরুতে কিন্তু এ সুবিধা পাওয়া যাবে না। কারণ তারা এক পরিবেশ ও আবহাওয়া থেকে নতুন আবহাওয়ায় এসে মানিয়ে নিতে দীর্ঘদিন সময় নেয়। পুরোপুরি অভিযোজিত হতে কয়েক প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হতে পারে। বিশেষ করে শীতের দেশের গরুগুলো যেমন হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান, এদেশের গরম সহ্য করতে পারে না। শীতের দেশে মশা-মাছি না থাকার কারণে এরা এদেশে এসে মশা-মাছি বাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দেশী জাতের গরু মশা-মাছ বাহিত রোগে কম আক্রান্ত হওয়ার বড় কারণ এরই মধ্যে এদের শরীরের মধ্যে সেসব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেছে। এ কারণে সরাসরি বিদেশী গরু না বা বিদেশী বকনার মধ্যে বিদেশী জাতের সিমেন দেওয়ার চেয়ে দেশী গরুতে বিদেশী গরুর সিমেন দিয়ে জাত উন্নয়ন করা বেশি নিরাপদ। তাতে নতুন সংকর জাতটি কিছু হলেও মায়ের বৈশিষ্ট্য পায় এবং এদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।
চট্টগ্রামের লাল গরু |
0 Comments