সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

৯ ধরনের জৈব কীটনাশক: তৈরি ও ব্যবহার

জৈব কীটনাশক বা বালাইনাশক
জৈব বালাইনাশক
হাইব্রিড জাত ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার করতে করতে এখন এমন একটা অবস্থা যে, মাটি ও ফসল তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন নতুন রোগ। ফলে এই রোগ দমন করতে গিয়ে কীটনাশক কেনার পেছনেরই কৃষকের বাজেটের বড় অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে। আর ফুলে ফেঁপে বড় হচ্ছে বীজ ও কীটনাশক কোম্পানিগুলো।

কিন্তু অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার আমাদের আরো মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনছে। কীটনাশকের ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশে যাচ্ছে মাটি ও পানিতে। ফলে দীর্ঘমেয়াদের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অতিমাত্রায় কীটনাশক  ও আগাছানাশক ব্যবহারের কারণে ইতিমধ্যেই আমরা অনেক উপকারী উদ্ভিদ প্রজাতি, পোকামাকড়, পাখি, মাছ ও জলজ প্রাণি হারিয়ে ফেলেছি। এর ফলে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। এতে কৃষকরা দিন দিন আরো বেশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশক নির্ভর হয়ে পড়ছে।

পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই আমাদের জৈব নিরাপত্তার দিকে যেতে হবে। এর জন্য জৈব সার, জীবাণু সার, ভার্মি কম্পোস্ট ইত্যাদি উন্নতমানের জৈব সার ও জৈব কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে যেমন খরচ বাঁচবে তেমনি রক্ষা পাবে পরিবেশ প্রতিবেশ।  এবার কিছু জৈব কীটনাশক কোন কাজে লাগে সেটি জানবো:

১. নিম
প্রাচীন ভারতীয়রা নিমের তেলকে শক্তিশালী বালাইনাশক হিসেবে অভিহিত করতেন। নিম গাছের পাতাকে জুস আকারে প্রাকৃতিক বালাইনাশক হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ১-২ আউন্স উচ্চ গুণগতমান সম্পন্ন অর্গানিক নিম ওয়েল, আধা চামচ মৃদু অর্গানিক তরল সাবান (হাত ধোয়ার লিকুইড সোপ হলেও চলবে), আধা গ্যালন পানি আস্তে আস্তে নাড়াচাড়া করতে হবে। কীটনাশক তৈরির পরপরই স্প্রে করতে হবে।

২. লবণ স্প্রে
মাকড়সা, মাইট আক্রান্ত গাছের রোগ দমনের জন্য ২ চামচ হিমালয়ান ক্রিস্টাল সল্ট, ১ গ্যালন উষ্ণ গরম পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে স্প্রে করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে মাকড়সা মানেই কিন্তু ক্ষতিকর নয়। ফসলে মাকড়সা জাল বুনলে সেই জালে ক্ষতিকর পোকামাকড় আটকে যায়। ফলে মাকড়সাও একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক।

৩. খনিজ তেল
১০-৩০ সষ উচ্চ মাত্রার খনিজ তেল ১ লিটার পানির সাথে মিশাতে হবে। তারপর নাড়াতে হবে। বোতল স্প্রেতে ভরে রাখতে হবে। সকাল বেলা স্প্রে করতে হবে। এই জৈব বালাইনাশক কীটপতঙ্গ এবং তাদের ডিম আর্দ্রতাশূন্য করে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।

৪. সাইট্রাস ওয়েল এবং সাইয়িন পিপার (গোল মরিচ)
১০ ড্রপ সাইট্রাস তেল, ১ চামচ সাইয়িন পিপার এবং এক কাপ উষ্ণ পানি মিশিয়ে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে আক্রান্ত স্থানে স্প্রে করতে হবে।

৫. সাবান, অরেঞ্জ সাইট্রাস ওয়েল এবং পানি
৩ চামচ তরল জৈব সাবান (Organic Castile Soap), ১ আউন্স কমলালেবুর তেল ও ১ গ্যালন পানি একসাথে মিশাতে হবে। ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে Slugs দমন করা যায়। পিঁপড়া এবং তেলাপোকা এর উপর এই স্প্রে সরাসরি প্রয়োগ করা যায়।

৬. ইউক্যালিপটাস তেল
মাছি, মৌমাছি এবং বোলতা দমনের জন্য এই তেল ব্যবহার করা যায়। কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল ছিটালে এগুলো গাছ থেকে সরে যায়।

৭. রসুন, পেঁয়াজ ও অন্যান্য
এক কোয়া রসুন এবং একটি মাঝারি আকারের পেঁয়াজের সাথে চারভাগের এক ভাগ গ্যালন পানি যোগ করি। এর পর ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ১ চামচ সায়ানিন পিপার এবং এক চামচ তরল সাবান যোগ করি। এই জৈব স্প্রের মেয়াদ ৭ দিন থাকে, অবশ্যই ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।

৮. ক্রাইসেনথিমাম ফ্লাওয়ার টি
এই ফুলের মধ্যে শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ পাইরিথ্রাম থাকে। এই পদার্থ কীটপতঙ্গের নারভাস সিস্টেমকে (স্নায়ুতন্ত্র) আক্রমণ করে এবং নিশ্চল (প্যারালাইজড) করে দেয়। ১ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম শুকনো ফুল ২০ মিনিট গরম করে ঠান্ডা করতে হবে। এখন স্প্রে বোতলে ঢালতে হবে। এটি ২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

৯. তামাক স্প্রে
তামাক মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু বালাই যেমন- পেস্ট, ক্যাটারপিলার (শুয়োপোকা), জাব পোকা দমনের জন্য এটি একটি সাধারণ বালাইনাশক। ১ কাপ অর্গানিক তামাক ১ গ্যালন পানিতে মিশাতে হবে। সারা রাত মিশ্রণটি রেখে দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টা পর এটি হালকা বাদামী রং ধারণ করবে। বেশি কালো হলে আরো পানি যোগ করতে হবে। সোলানেসি (আলু, টমেটো) পরিবারের গাছ ছাড়া সব গাছে স্প্রে করা যাবে।

Post a Comment

0 Comments