চিভ |
তবে বাঙালির রসনাবিলাসে পেঁয়াজ অপরিহার্য। সাময়িক এ সংকট কেটে গেলে রান্নার পাশাপাশি কাঁচা পেঁয়াজও দেদার খাবে মানুষ। এমন সংকটকালের জন্য পেঁয়াজের বিকল্প ভাবছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা। মসলার অন্যতম অনুষঙ্গটির বিকল্প হিসেবে দেশের বিজ্ঞানীরা এখন চিভ বা চাইভ নামে পেঁয়াজ প্রজাতির একটি ফসলের চাষ ও ব্যবহারে উৎসাহ বাড়াতে কাজ করছেন।
চিভ পেঁয়াজ বা রসুন প্রজাতির বহুবর্ষজীবী একটি ফসল। এটি অ্যামারাইলিডেসি (Amaryllidaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এ উদ্ভিদের উত্পত্তিস্থল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও উত্তর চীন অঞ্চল। চীনের জনপ্রিয় একটি মসলা ফসলের তালিকায় অবস্থান এ চিভের। অন্যান্য ফসলের পাশে বা বাড়িতে টবেও এটি চাষ করা যায়।
চিভে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, ‘বি-১’, ‘বি-২’ এবং নায়াসিন (ভিটামিন ‘বি৩’), ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। চিভ সাধারণত দেশের পাহাড়ি এলাকা সিলেট ও চট্টগ্রামে চাষ হয়ে থাকে। তাছাড়া পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা, বগুড়া ও লালমনিরহাট এলাকায় চিভ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে
স্বল্প পরিসরে হলেও আমাদের দেশে এখন এটির চাষ হচ্ছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু ও আবহাওয়া চিভ চাষের জন্য বেশ অনুকূল। বছরব্যাপী চাষ করা যায় বলে এটি সম্ভাবনাময় একটি মসলা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে মানুষ, যা পেঁয়াজ ও রসুনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে সহায়ক হবে।
পেঁয়াজের স্বাদ বা গুণাগুণ চিভের মধ্যে থাকায় আপত্কালীন বিকল্প হয়ে উঠতে পারে চিভ, এমন ভাবনায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বারি চিভ-১ জাতের একটি উচ্চফলনশীল জাত অবমুক্ত করেন। দেশের মানুষের কাছে পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে চিভের ব্যবহার বাড়ানো নিয়ে এখন আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি।
দীর্ঘদিন চিভ নিয়ে গবেষণা করছেন আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নুর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, পৃথিবীর অনেক দেশে চিভ স্যুপ, সালাদ ও চাইনিজ ডিশে ব্যবহূত হয়। এর পাতা লিলিয়ান আকৃতির ফ্ল্যাট, পাতার কিনারা মসৃণ ও এর বাল্ব লম্বা আকৃতির। এর ফুল সাদা-বেগুনি বর্ণের। চিভের স্বাদ অনেকটা আমাদের দেশীয় পেঁয়াজ ও রসুনের মতো।
চিভের ঔষধি গুণও রয়েছে। এটি হজমে সাহায্য করে, রোগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে। এছাড়া আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করার মাধ্যমে এটি কলার পানামা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরো জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে বর্তমানে বার্ষিক পেঁয়াজ উৎপাদন ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন। যদিও দেশে চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ টনের। বাকি পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে এ চিভকে ব্যবহার করা গেলে আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে। এছাড়া চিভজাতীয় ফসলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সারা বছর এর চাষ করা যায়।
চিভ খুব সহজে টবেও চাষ করা যায় |
# দেশীয় পাতা পেঁয়াজের চাষ #
সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত ও জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটি চিভ চাষের জন্য উপযুক্ত। মৃদু অম্লীয় মাটিতে (পিএইচ ৬.৩-৬.৮) চিভের বৃদ্ধি ভালো হয়। চিভ চাষের জন্য বছরে ২৫০০-৩০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষ করতে হয়। চারা লাগানোর ৬৫-৭০ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়। গাছের গোড়া থেকে ২-৩ ইঞ্চি উপর থেকে পাতা কেটে অথবা পুরো গাছ উঠিয়েই ফসল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে পাঁচ-ছয়বার ফসল পাওয়া যায়। পাতা ও গাছসহ প্রতি হেক্টরে ১০-১২ টন ফলন পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
বারি চিভ-১: দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালে বারি-১ নামের উচ্চফলনশীল চিভ জাতের অবমুক্ত করা হয়। চাষ সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। পাতার দৈর্ঘ্য হয় ২৩-৩০ সেন্টিমিটার।
0 Comments