এলএসডি আক্রান্ত গরু |
প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি হলো গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিস (এলএসডি) বা চামড়ার পিণ্ড রোগ। এটির উপসর্গ ও ক্ষতির পরিমান ক্ষুরা রোগের মতোই। রোগটি মূলত আফ্রিকা থেকে এসেছে। সেখানে লাম্পি স্কিন ডিজিসে গবাদিপশুর গড় মৃত্যুহার ৪০ শতাংশ। ১৯২৯ সালে আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়ায় প্রথম এ রোগ ধরা পড়ে। তবে বাংলাদেশে এর আগে এভাবে কখনোই ছড়িয়ে পড়েনি।
লাম্পি স্কিন ডিজিসের কারণ
মূলত বসন্ত (পক্স) বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে এ রোগ হয়। রোগটি ছোঁয়াচে। অর্থাৎ একটি গরুর হলে আশেপাশের অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়বে। এমনটি আক্রান্ত গরুর সংস্পর্শে এলে, মল-মূত্র গায়ে লাগলে, একই খাবারের পাত্র ব্যবহার করলেও অন্য গরু আক্রান্ত হতে পারে।
রোগের মৌসুম
সাধারণত বর্ষার শেষে শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে যখন মশা-মাছির বংশবিস্তার বেড়ে যায় ফলে উপদ্রবও বাড়ে তখনই লাম্পি স্কিন ডিজিসের প্রাদূর্ভাব বেশি হয়। আমাদের দেশে মূলত মশার মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে আক্রান্ত গরুকে মশারির নিচে রাখতে পারলে ভালো।
লক্ষণ বা উপসর্গ
লাম্পি স্কিন ডিজিস শনাক্ত করতে হলে বেশি কয়েকটি উপসর্গের দিকে নজর রাখতে হবে। এসব লক্ষণ আক্রান্ত হওয়ার শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পেতে থাকে:
জ্বর: আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর হয়। এ কারণে খাবারে রুচি কমে যায়।
লালাক্ষরণ: মুখ ও নাক দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। যেমনটি ক্ষুরা রোগের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
ক্ষত: ক্ষুরা রোগের মতোই মুখে মধ্যে ক্ষত বা ঘা হয়। এ ক্ষত শ্বাসনালী, নাসারন্ধ/নাকের ছিদ্র, পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে পারে। পাকস্থলী ও মুখের ভেতরে ক্ষত হওয়ার কারণে গবাদি পশু পানি পান করতে চায় না। খাদ্য গ্রহণও অনেক কমিয়ে দেয়। ফলে দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে।
লাম্পি স্কিন ডিজিস কীভাবে ছড়ায়
মশা, মাছি এবং আক্রান্ত পশুর মল-মূত্র, লালা, রক্ত, সংস্পর্শ নানাভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এবং ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত। অনেক সময় খামারে বেশি গরু থাকলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়।
মশা/মাছি: এলএসডি ভাইরাসের প্রধান বাহক মশা ও মাছি। অন্য কীটপতঙ্গ (আঁঠালি বা আঁটুল, উকুন) এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেটি যদি পশুকে কামড়ায় সেক্ষেত্রেও পশুটি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লালা: আক্রান্ত গরুর লালা খাবারের মাধ্যমে, খামারি বা খামারের রক্ষণাবেক্ষণকারীর কাপড়ের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে সুস্থ গরুর গায়ে লাগলে সেটি আক্রান্ত হতে পারে।
দুধ: আক্রান্ত গাভীর দুধ খেলে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে
সিরিঞ্জ: আক্রান্ত গরুতে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ সুস্থ গরুতেও ব্যবহার করলে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।
আক্রান্ত গরুর সিমেন/বীজ: আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেনের মাধ্যমে হিটে আসা বকনার গরুর মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে।
প্রতিকার
খামারের ভিতরে ও আশপাশে মশা-মাছির প্রজনন স্থল ধ্বংস করে দিতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কাছাকাছি গোবরের স্তূপ, মজা পচা ডোবা এসব রাখা যাবে না।
আক্রান্ত গরুকে আলাদা করে রাখা। খাবার পাত্র ও ব্যবহৃত অন্যান্য সামগ্রি আলাদা করে ফেলা।
শেড থেকে আলাদা করে আক্রান্ত গরুকে মশারির ভেতরে রাখা যাতে মশা মাছি কামড়াতে না পারে। খামারের অন্যান্য পশুও যাতে মশা মাছি থেকে নিরাপদ থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
আক্রান্ত গাভীর দুধ বাছুর খেতে না দেওয়া।
গরুর ক্ষতস্থান টিঙ্কচার আয়োডিন মিশ্রন দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা।
## এলএসডি আক্রান্ত নিশ্চিত হলে দ্রুত রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বা আপনার কাছাকাছি প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন। ##
বিশেষ দ্রুষ্টব্য: এ রোগের কোনো টিকা নেই। যদিও আফ্রিকাতে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা কার্ক্রম চলছে। আর আক্রান্ত হলেও অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের মতোই এর কোনো চিকিৎসা নেই। শুধু সংক্রমণ প্রতিরোধে যা প্রয়োজন সেটিই করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নির্দেশনা দিতে পারেন। তবে প্রতিরোধ ব্যবস্থাই সবচেয়ে কাজের। শেড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আশের পাশের পরিবেশে মশা মাছি উকুন, আটালির বংশবিস্তার যাতে না হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখলে এ রোগ থেকে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা যায়।
0 Comments