সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

সুস্থ ও উন্নত গাভী কীভাবে চিনবেন



সতর্ক, সক্রিয়
ক্লান্ত বিহ্বল : এইটা দুর্বল স্বাস্থ্য, শক্তিহীন শরীর এবং ‍রুমেনে এসিডি হয়েছে।

পরিষ্কার, চকচকে উজ্জ্বল চোখ
বসা চোখ : এর মানে গাভী অসুস্থ

পরিষ্কার নাক/নাসারন্ধ্র
Ø  লালায় বা নাকের তরলের সাথে পুঁজ বা রক্ত এবং ত্বকে আঘাতের চিহ্ন: নাসারন্ধ্র বা নাকের ত্বকে ভাইরাস অথবা ঠান্ডাজনিত কারণে প্রদাহ
Ø  তবে পরিষ্কার লালা/নাসারস দেখে সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়।
Ø  নাক, চকচকে, পরিষ্কার, ও ভেজা থাকবে। গরমকালে ঘামতে পারে। মাথাটি ভূমির সমান্তরালে ধরলে নাক প্রসারিত হবে।
Ø  নিশ্বাস স্বাভাবিক। নিশ্বাসের গন্ধ নিলে রুমেনের গন্ধ পাওয়া যাবে

বন্ধ মুখ
Ø  মুখে সামান্য লালা/নাল : ক্ষুধার্ত
Ø  অনেক বেশি লালা : গিলতে সমস্যা অথবা মুখে ব্যথা
Ø  কাশি : ঠান্ডা বাতাস, ফুসফুসে কৃমি অথবা বাতাসে ধুলাবালি

স্বাভাবিক ও সহজভাবে জাবর কাটা
Ø  কম চিবায় : খাবারের মধ্যে ফাইবার বা উদ্দীপক উপাদানের অভাব
Ø  জাবর কাটার সময় থু থু বের হলে : দাঁতে ব্যথা, দাঁতে কোনো সমস্যা, খাবারের মধ্যে কাঁটার মতো খোঁচা লাগে এমন উপাদান আছে
Ø  স্বাভাবিক : প্রতিবার জাবর কাটার সময় ৫৫ থেকে ৭৫ বার চিবাবে।

সামনের পায়ের হাঁটু আঘাতহীন এবং লোমে ভরা
Ø  হাঁটুতে লোম নেই : শোয়া থেকে দাঁড়ানোর সময় মেঝের সাথে ঘষা খেয়ে উঠে গেছে
Ø  ফোলা হাঁটু : শোয়া থেকে উঠার সময় থেঁতলে গেছে, গরুর থাকার জায়গায় যথেষ্ট স্থান নেই

সুন্দর মসৃণ, সম্পূর্ণ খুড়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায়
Ø  সাবধানে হাঁটে (Tiptoeing): খুড়ের আগায় ভর দিয়ে দাঁড়ায়
Ø  করোনারি ব্যান্ড (খুড় ও চামড়ার সংযোগস্থল) আঘাতপ্রাপ্ত অথবা ফুলে যাওয়া
Ø  খুড়ের দুই ভাগের মাঝখানের অংশে একজিমা বা খোস পাঁচড়া

শান্ত ও সুস্থিরভাবে নিঃশ্বাস
Ø  ছোট ও দ্রুত নিঃশ্বাস : গরমের অস্থির অথবা ব্যথা। তবে কখনো কখনো জাবর কাটার ঠিক আগ মুহূর্তেও এমন হতে পারে
Ø  স্বাভাবিক নিঃশ্বাস : পাঁজর থেকে পেট পর্যন্ত খেয়াল করলে বুঝা যাবে। মিনিটে ১০ থেকে ৩০ বার

ভরা পেট
Ø  পেট খুব খালি : গত সপ্তাহে যথেষ্ট খাবার পায়নি বা খায়নি
Ø  যদি কোনো বাছুর থাকে তাহলে সেটির সাইজও লক্ষ্য করুন

সোজা পিঠ
Ø  বাঁকা পিঠ : খুরাইয়ে ব্যথা অথবা শরীরের কোথাও কাটা ছেঁড়া আছে
Ø  আঘাত : থাকার স্থানের পার্টিশনে আঘাত পেয়ে থেঁতলে গিয়ে থাকতে পারে

প্রথম পেট বা রুমেন ভালোভাবে পূর্ণ
Ø  একেবারে খালি : তার মানে আজ যথেষ্ট খায়নি বা খাবার পায়নি
Ø  আপাতদৃষ্টিতে স্তরীভূত কাঠামো (আপেলের আকার) : তার মানে খাবারে যথেষ্ট পরিমান ফাইবার নেই

নরম, সুষম আকৃতির ওলান
Ø  শক্ত : বাছুর প্রসবের সময় ওডেমা (edema) অর্থাৎ পানি জমা অথবা ম্যাসটাইটিস (ওলান ফোলা, ব্যথা)
Ø  চার ভাগের এক ভাগ অংশ লম্বাটে : ম্যাসটাইটিস হয়েছে
Ø  চার ভাগের এক ভাগ সঙ্কুচিত : আগে কখনো ম্যাসটাইটিস হয়েছিল
Ø  ওলানের গঠন  হবে কোমল এবং নমনীয় অনেকটা থলের মত গঠন। ওলান দ্যোদুল্যমান হবে না বরং সাসপেনসরি লিগামেন্ট (এক ধরনের বন্ধনী যা ওলানকে শরীরের সাথে আটকে রাখে) দ্বারা শক্ত ভাবে আটকানো থাকবে যা প্রায় যোনিদ্বারে কাছাকাছি পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।বড় ওলান মানেই কিন্তু সবসময় ভাল গাভী নয়।অনেক সময় মাঝারি আকারের ওলান হলেও ভাল দুধের গাভী হতে পারে।তবে তার গোড়াটি বিস্তৃত হতে হবে।এই ক্ষেত্র খেয়াল রাখতে হবে যেন তা হাটুর (Hock joint) নীচে ঝুলে না পড়ে। ওলানের বাটগুলো একই আকারের হওয়া একটি ভাল লক্ষন।আর চারটি বাঁটই পরষ্পর থেকে সমান দূরত্বে এবং সমান্তরাল হওয়া চাই।বাটগুলো সোজাঁ (straight) হয়ে ওলান থেকে নীচের দিকে ঝুলে থাকবে। দুগ্ধ শিরা মোটা ও স্পষ্ট হবে।তলপেটে নাভির পাশ দিয়ে দুগ্ধ শিরা আঁকাবাঁকাভাবে বিস্তৃত থাকবে।

বাঁট  ও বাঁটের মাথায় কোনো আঘাত বা ক্ষত নেই
Ø  পিষ্ট বা থেঁতলানো বাঁট : খুবই অস্থির, থাকার জায়গা খুবই সঙ্কীর্ণ অথবা পিচ্ছিল
সম্ভব হলে মিল্কিং মেশিন এবং দুধ দোহনের পদ্ধতি খেয়াল করুন।
Ø  বাঁটের আগার চামড়া শক্ত : মিল্কিং মেশিন সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না
Ø  স্ফীত, লালচে, হালকা রক্তের ছাপ এগুলোও ওলান ওডেমার কারণে হতে পারে

সন্তোষজনক অবস্থা
Ø  খুব হালকা : অপর্যাপ্ত শক্তি সম্পন্ন খাবারের অভাব
Ø  বেশ মোটা : অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করছে
Ø  স্বাভাবিক : সুন্দর ভালো কোয়ালিটির মাংসের উপর সামান্য চর্বি দিয়ে ঢাকা
Ø  ভালো অবস্থা বলতে বোঝায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রবল, উর্বর এবং বাছুর গর্ভে থাকতে ভালো স্বাস্থ্য ছিল

সঠিক তাপামাত্রা
Ø  খুব বেশি ( ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০২.২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি) : জ্বর
Ø  খুব কম (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কম) : দুধ জ্বর অথবা গুরুতর অসুস্থ
Ø  স্বাভাবিক : ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০১.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে (তাপমাত্রা নিতে হবে মলদ্বার থেকে)

নিতম্বের অংশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন
Ø  নিতম্বের দুই পাশেই গোবর লেগে থাকলে : গোবর খুব পাতলা
Ø  অসামঞ্জস্যপূর্ণ গোবর (নরম , শক্ত, পাতলা মিলিয়ে) : গোয়াল বা রাখার পরিবেশ খুব নোংরা

গা ভর্তি চকচকে মসৃণ লোম
Ø  বিবর্ণ, ম্যাড়ম্যাড়ে লোম : দুর্বল স্বাস্থ্য বা পুষ্টির অভাব
Ø  ত্বকে আঘাতের চিহ্ন বা ক্ষত : ছটফটে হওয়ার কারণে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
Ø  তবে গরুর শরীর গ্রীষ্মে চকচকে, শীতে সামান্য মলিন হতে পারে

পেছনের পায়ের কনুই সম্পূর্ণ লোমে ঢাকা
Ø  কনুইতে কোনো লোম নেই : মেঝের বাইরে বাইরে কোথাও ঘষা লেগেছে
Ø  স্থূল কনুই : থাকার জায়গা যথেষ্ট নয়, ঘরের মেঝে খুব শক্ত
Ø  কনুইতে খোস পাঁচড়া : ময়লা নোংরা অথবা অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে প্রদাহ

সমান বা অনুভূমিক কিন্তু মসৃণ আকৃতির গোবরের দলা
Ø  দলা থেকে লম্বা শাখা : যথেষ্ট জাবর কাটছে না
Ø  গোবর খুব কঠিন বা নরম নয় : খাবারের ‍উপাদান যেমন : দানাদার খাবারের পরিমান ও প্রকারের উপর নির্ভর করে। এছাড়া ল্যাকটেশন স্টেজ অর্থাৎ দুগ্ধ দানের ধাপের উপরও নির্ভর করে যেমন : শুষ্ক পর্যায় (প্রসবের পর পরবর্তী গর্ভধারণ পর্যন্ত সময়) এবং পিক ল্যাকটেশন বা সর্বোচ্চ দুগ্ধ দানের সময় (বাছুর প্রসবের পর ৩১তম দিন থেকে ১৩০তম দিন পর্যন্ত)
Ø  গোবর দেখে ডায়েট বুঝা যায় : খাবার দেওয়ার পদ্ধতি, খাবার গ্রহণের পরিমান, হজম, পানি পান এবং স্বাস্থ্য
Ø  গোবর যদি স্বাভাবিক মনে না হয় তাহলে পুষ্টিবিদের সাথে আলোচনা করা উচিৎ

আরো কিছু বিষয়
Ø  কান নাড়াবে। একটা সামনে আরেকটা পেছনে
Ø  মাথা উপরের দিকে তুলতে চাইলে চোখ দুটি নিচের দিকে আসবে। বড় হবে। চোখের নিচে সামান্য পানি গড়িয়ে পড়তে পারে।
Ø  বাম পাশে থাকে রুমেন। (আপনার বাম গরুর বাম)। শেষ রিবের শেষ খালি অংশটিতে রুমেন থাকে। হালকা চাপ দিলে ভর্তি বুঝা যাবে। স্টেথেস্কোপ বসালে বজ্রপাতের মতো শব্দ পাওয়া যাবে। গড়ে এক মিনিট পরপর। কান পাতলেও শোনা যেতে পারে। দেড় মিনিট পরপর।
Ø  হার্টবিট সাধাণত ৭২। সামনের পায়ের ঠিক গোড়ার পাশে স্টেথেস্কোপ ধরতে হবে।
Ø  শোল্ডার ব্লেডে লম্বা চুল থাকে। উপরে স্টেথেস্কোপ ধরলে ফুসফুসের শব্দ পাবেন। বাতাস আসা যাওয়ার শব্দ পাওয়া যাবে। মসৃণ শব্দ হবে (windpipe) বাঁশির মতো শব্দ
Ø  বাম পাশ ফাঁপা থাকলে বুঝতে হবে পেট ফাঁপা
Ø  ডান পাশের গলার নিচের দিকে ভেইন। সেখানে চেপে ধরলে চোয়ালে কাছাকাছি ফুলে যাবে

পায়ের গঠন
ভাল গাভীর জন্য পায়ের গঠন একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বেশি লম্ব বা একদম খাটো পায়ের গরু ডেইরী খামারের জন্য উপযুক্ত নয়।পায়ের আকৃতি হওয়া চাই মাঝারি আকৃতি শক্ত সামর্থ্য। কারন গাভীর জীবনের অনেকটুকু সময় গর্ভবতী অবস্থায় কাটায়।তাই পাগুলো এমন হওয়া চাই যাতে দুধ দান কালীন সময়ে গর্ভবতী হলেও যাতে শক্ত পায়ে চলা ফেরা করতে পারে।পায়ের গঠন  মোটা সোটা এবং শক্ত হলে এই গাভী বছরের পর বছর দুধ দিবে অর্থাৎ বাঁচবে দীর্ঘ দিন।
যদি পিছন থেকে তাকান তাহলে দেখতে হবে পিছনের পাগুলো সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে কি না। যদি তাই হয় তাহলে খেয়াল করুন পিছনের দুই পায়ের মাঝখানে বেশ ফাঁকা আছে কি না। এবার পাশে থেকে তাকান, তাহলে দেখতে হবে হাটুর ভাঁজটি সামান্য পিছনের দিকে আছে কি না (sickle hock) অর্থাৎ হাঁটুর পিছনে সামান্য কোণাকৃতি হয়ে থাকবে ।
সামনের পাগুলোও খাড়া থাকবে এবং খুঁড়ের উপরে জোড়াটি (Pastern joint) সুঠাম হবে। আর এই দুই পায়ের মাঝখানটা পর্যাপ্ত ফাঁকা হবে। পিছনের নিতম্বের হাড়গুলো (Pin bones) প্রসারিত হবে।

দৈহিক আকৃতি
Ø  ভালো গাভীর দেহ সাধারন সামনের দিকে হালকা এবন পিছনে দিকে ভারী  ও সুগঠিত
Ø  ভালো গাভীর দেহের আকৃতিটা হয় অনেক ত্রিকোনাকার অর্থাৎ সামনের দিকে একটু সরু এবং সামনে থেকে পিছনের দিকে তা ক্রমান্বয়ে প্রশস্ত। 
Ø  গাভীর ঘাড়টা লম্ব হওয়া চাই। থুতনি হবে বড় আর পিঠের মেরুদণ্ড হবে সোজা।
Ø  গাভীর চামড়া হবে পাতলা ডিলে-ঢালা। চামড়ার নিচে অহেতুক চর্বি জমবে না। তবে চামড়ার রং উজ্জ্বল হতে পারে।

পাঁজর
Ø গাভীর বুকের পাঁজর হবে প্রসারিত যতে করে শরীর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো সঠিক পরিমান জায়গা পায়। তাছাড়া গর্ভবতীকালীন যাতে বারতি চাপ সামলাতে পারে এ জন্যও পর্যাপ্ত জায়গা প্রয়োজন।

Post a Comment

0 Comments