সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

সব গরুর দুধ ভালো নয়, দেশী গরুর অবস্থান কোথায়?

types of cattle milk, which is good

গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও পরিচিত প্রাণী হচ্ছে গরু। এরা Bovidae পরিবারের Bovinae উপপরিবারের অন্তর্গত Bos গণের indicus ও taurus প্রজাতির হয়ে থাকে।

সব গরুর দুধ এক নয়। মোটা দাগে গরুর দুধকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে - A1 এবং A2.

ব্যাপারটা একটু ভেঙে বলা যাক।

আমরা পৃথিবীজুড়ে যেই প্রাণীটাকে 'গরু' হিসেবে চিনে থাকি তার মধ্যে অনেকগুলো জাত(Breed) আছে। এই বিষয়টা আমরা খেয়াল করলেও প্রায় সিংহভাগ লোক যেটা জানি না, সেটা হলো- গরু মূলত ২টি আলাদা প্রজাতিতেও (আসলে প্রজাতি নয়, গণ) বিভক্ত:

১. Bos indicus (কুঁজওয়ালা, উষ্ণমণ্ডলীয় জাতের গরু)

২. Bos taurs (কুঁজবিহীন, শীতপ্রধান অঞ্চলের গরু)

বস ইন্ডিকাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য

প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশে যে গরু পালিত হয়ে আসছে এরা জেবু অর্থাৎ বস ইন্ডিকাস (Bos indicus) প্রজাতিভুক্ত। এদেশের আবহাওয়ার সাথে ভালোভাবে খাপ খেয়ে বেঁচে থাকা এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বস ইন্ডিকাসের অনেকগুলো জাত ভারতীয় উপমহাদেশে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এ অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তেমন কোনো গরুর জাত ছিল না। যা ছিল তার সবই দেশী গরু। ১৯৩৭ সালের দিকে ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগো বর্তমান বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে বস ইন্ডিকাস প্রজাতির বিশুদ্ধ গরুর জাত, যেমন- হারিয়ানা, সিন্ধি, শাহিওয়াল আনেন (আলী, ১৯৮৫)। 

বস ইন্ডিকাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য

বস টরাস (Bos taurus) প্রজাতির উন্নত | জাতের গরু, যেমন- হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান, জার্সি প্রভৃতি আনা হয় ১৯৭৪ সালে (আলী, ১৯৮৫)। | নিয়মিত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এসব জাতের ষাড়ের বীজ দেশী গাভীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে সংকর | জাত সৃষ্টি করা হয় যা এখনও চলছে। এই সংকর জাতের গরুগুলো বর্তমানে পাবনা, সিরাজগঞ্জ,পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। এর উদ্দেশ্য উৎপাদন বাড়ানো। 

বর্তমানে বস টরাস ও বস ইন্ডিকাস ছাড়াও বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার ঘন জঙ্গলে মিথুন বা গয়াল অর্থাৎ বস ফ্রন্টালিস (Bos frontalis) প্রজাতির গরু দেখা যায়। বস ফ্রন্টালিস একটি বন্য প্রজাতির গরু। এদের বংশধরদের এখনও পোষ মানানোর চেষ্টা চলছে।

ইন্ডিকাস প্রজাতিভুক্ত গরুগুলো সব A2 type দুধ উৎপাদন করে। আর প্রায় ৯৮% টরাস জাতের গরুই A1 দুধ উৎপাদন করে।

A1 দুধকে বেশ কিছু কারণেই অধিকাংশ প্রগ্রেসিভ খাদ্যবিজ্ঞানী বর্জন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

কারণ শুধু যে এর পুষ্টিমাণ কম তাই নয়, বরং এটা কিছু মাত্রায় অস্বাস্থ্যকরও। তীব্র হজমজনিত সমস্যাসহ ডায়াবেটিসের একটা টাইপকে এই দুধ বাড়িয়ে দেয় বলেও এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

বিপরীতে A2 দুধের সবচেয়ে নিম্ন মানের দুধটাও যেকোনো A1 দুধের চেয়ে ভালো বলে জানা যায়।

সাম্প্রতিক সময়কার প্রগ্রেসিভ দুধের বাজারেও এই বিষয়টা দেখতে পাওয়া যায়।

স্পেসিফাইড A2 দুধের ফার্মগুলো থেকে যেসব দুধ বাজারজাত করা হয় সেগুলোর প্যাকেটের গায়ে বড় করে A2 সিল দিয়ে রাখা হয়।

এমনকি জেনে অবাক হবেন, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, পর্তুগাল, কলম্বিয়ার মতো দেশগুলো যারা A2 milk এর সবচেয়ে প্রগ্রেসিভ ফার্মগুলো চালায় তাদের দেশে ইন্ডিকাস বুলগুলোর পেডিগ্রি লিস্টের উপর বড় করে লেখা থাকে A2.

অর্থাৎ অধিক দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি এটাকেও বুলের একটা ইনহেরিটেন্স মেরিট হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইতালির ওপেন মার্কেটে A1 এর লিটার প্রতি দাম ১ ইউরো আর A2 ১ দশমিক ৮ ইউরো।

পৃথিবীর অলিখিত এগ্রো (ডেইরি+বিফ) জায়ান্টের ব্যাকবোন হলো উপমহাদেশের ইন্ডিকাস জাত - গীর, সিন্ধী, নিল্লোর ইত্যাদি।

এবার আসি এখানে আমাদের দেশী জাতের পার্টটা কোথায়।

আমাদের ১০০% দেশী জাতই ইন্ডিকাস প্রজাতির গরু।

তো এরা একে তো বেস্ট টাইপের দুধ অর্থাৎ A2 এর প্রোডাকশন করে, তার মধ্যে আবার A2 এর মধ্যেও মান বিচারে আমাদের দেশী জাতগুলোর দুধই সেরা।

মিল্ক ফ্যাটের পার্সেন্টেজ, ডাইজেস্টেবল প্রোটিনের পার্সেন্টেজ, টোটাল TDS এসব সূচকের বিচারে দুধের মান কেমন তা বিচার করা হয়। এসব বিচারে আমাদের দেশী জাতগুলো শ্রেষ্ঠ।

বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে আমাদের দেশের আরসিসি ক্যাটেল, মুন্সিগঞ্জ ক্যাটেল, পাবনা ক্যাটেলের প্রোডাকশন ট্রেইটস নিয়ে BLRI, BAU, DLS সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের রচিত গবেষণাপত্রে এসব তথ্য রয়েছে।

Post a Comment

0 Comments