ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছেলে প্রিন্স চার্লস তার পারিবারিক খামারে গরু ও ভেড়ার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করেন। বিষয়টি ২০১৬ সালের ২০টি দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে ওই সময় ব্রিটেনে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু প্রিন্স চার্লস দাবি করেন, তিনি অত্যন্ত সফলভাবেই হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করছেন। ৩০ বছর আগেই তিনি তার খামারকে অর্গানিক বা পরিবেশ বান্ধব করার প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি সফলভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন।
প্রাণী ও মানবদেহে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এখন রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন গণমাধ্যমে প্রায়ই ’সুপারবাগ’ নামে একটি শব্দ দেখা যায়। এর অর্থ এই রোগজীবাণুগুলো সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক এদের ওপর কাজ করে না।
খামারে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে দুইভাবে ক্ষতির আশঙ্কা আছে। প্রথমত, ঘন ঘন এবং অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে গবাদি পশু-পাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দুগ্ধ ও ডিমের খামারের মতো দীর্ঘমেয়াদি পশু-পাখি পালন খামারের জন্য এটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। দ্বিতীয়ত, এই অ্যান্টিবায়োটিক মাংস, ডিম ও দুধের মাধ্যমে ভোক্তার শরীরে প্রবেশ করে। ফলে মানুষও অজান্তে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে ফেলে। এতে মানুষের শরীরেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ বাসা বাঁধতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর উপায়
সহজ হিসাব হলো, খামারের পশু-পাখি যাতে অসুস্থ না হয় সেদিকে জোর দিতে হবে। এর জন্য পশুপাখিকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, খামারের বায়োসিকিউরিটি (স্বাস্থ্যবিধি) নিশ্চিত করা, নিয়মিত টিকা দেওয়া এবং সর্বোপরী খামার শুরু করার আগে পশুপাখির পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার।
আর সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরও পশু-পাখি নানা কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এ সময় যতোটা পারা যায় ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি (ভেষজ, কবিরাজি, আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, হোমিওপ্যাথি) ব্যবহার করা। কোনোভাবেই রোগ নিয়ন্ত্রণে আসছে না এমন পরিস্থিতি হলেই কেবল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। তাও অবশ্য সঠিক মাত্রায়।
হোমিওপ্যাথি বিতর্ক
সারা বিশ্বেই এলোপ্যাথি ডাক্তাররা হোমিওপ্যাথিকে এককথায় ‘আবর্জনা’ বলে উড়িয়ে দেন। যদিও যুক্তরাজ্যের মতো দেশের স্বাস্থ্যবিভাগে হোমিওপ্যাথি বিভাগ রয়েছে। কোনো রোগী চাইলে সেই চিকিৎসাও নিতে পারেন।
বিশেষ করে ব্রিটিশ রাজপরিবার এখনো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ওপর আস্থা রাখে। এমনকি প্রিন্স চার্লসের অর্থায়নে হোমিওপ্যাথির একটি সংস্থাও পরিচালিত হয়। প্রিন্স চার্লস তার খামারে অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য অন্যান্য প্রচলিত ওষুধের পাশাপাশি কেস-বাই-কেস (লক্ষণ দেখে) ভিত্তিতে হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করেন। এটি তিনি ৩০ বছর ধরে করে আসছেন।
রাজকীয় খামারে প্রিন্স চার্লস ও তার ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম |
২০১৬ সালে রাজপুত্র তার খামারে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহারের কথা ঘোষণা করার পর ব্রিটেনে চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তারা বলেন, এ চিকিৎসা যে কাজ করে এর কোনো প্রমাণ নেই। এটি সম্পূর্ণই বিশ্বাসভিত্তিক চিকিৎসা। কিছু বিশেষজ্ঞ অবশ্য স্বীকার করেন, হোমিওপ্যাথি তাদের জন্য প্লাসিবো প্রভাব ফেলতে পারে যারা বিশ্বাস করেন যে এটি তাদের সত্যিই রোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
ব্রিটেনের হোমিওপ্যাথি অ্যাট ওয়েলি লেভেল (এইচএডব্লিউএল) নামে সংস্থা যেটি প্রিন্স চার্লসের অর্থায়নে পরিচালিত হয়, তারা কৃষকদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেয়। তারা বলে, এটি অবসাদগ্রস্ত (মানসিক চাপগ্রস্ত) প্রাণীদের সাহায্য করতে পারে।
তাদের যুক্তিগুলো কিন্তু চমৎকার, মেনে না নিয়ে উপায় থাকে না। এইচএডব্লিউএল তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, এটি এখন সবাই মেনে নিয়েছেন যে পশু যখন অবসাদগ্রস্ত থাকে তখনই মূলত শারীরিক সমস্যাগুলো শুরু হয়। যেমন: দুধ ছাড়ানো, পরিবহন বা স্থানান্তর, খামার বা পাল থেকে আলাদা করা ইত্যাদি কারণে পশু-পাখি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই সময় হোমিওপ্যাথি বেশ কাজে দেয়। এতে কিন্তু উৎপাদনও বাড়ে।
ব্রিটেনের পরিবেশ, খাদ্য ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, হোমিওপ্যাথিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৫০০ জন খামারি এবং ৩৮ জন হোমিওপ্যাথি ভেট রয়েছে দেশটিতে।
0 Comments