সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

পশুখাদ্যের জন্য বিশেষ জাতের বাঁধাকপি: বোমা বা জার্সি

Jersey cabbage or Walking stick

পশুখাদ্য হিসেবে বাঁধাকপির ব্যবহার নিয়ে আলাদা একটি আর্টকেল রয়েছে। এখানে এমন দুইটি বাঁধাকপির জাত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যেটি পশুখাদ্যের জন্যই চাষ করা হয়। দুটি জাতই অবশ্য এখন বিলুপ্তপ্রায়। অথচ কৃষির জন্য অত্যন্ত কাজের একটা উদ্ভিদ এটি। এই কপির কান্ডের নিচের অংশের পাতা গবাদি পশু ও পাখিকে খাওয়ানো যায়, উপরের নরম পাতা ও গুটি রান্না করে খাওয়া যায়, এটির কান্ড দিয়ে শক্ত সৌখিন লাঠি তৈরি করা যায় এবং এই বাঁধাকপি ক্ষেতের বেড়া হিসেবেও রোপণ করা যায়।

বোমা

পোল্যান্ডে এই কপির ব্যাপক চাষ হয়। স্থানীয়ভাবে এটিকে বলে ‘বোমা’। এই বাঁধাকপির বৈজ্ঞানিক নাম ব্রাসিকা ওলেরাসিয়া, এটি ব্রাসিক্যাসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। 

পোল্যান্ড এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে স্থানীয় জাতের মধ্যে সবচেয়ে উৎপাদনশীল একটি পশুখাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বাঁধাকপি উচ্চ পুষ্টিরমান সম্পন্ন। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে তাজা সবুজ পদার্থ, যা উন্নতজাতের ঘাসের চমৎকার বিকল্প। এই বাঁধাকপিতে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন সি, প্রোভিটামিন ‘এ’ এবং মিনারেলস/খনিজ রয়েছে। এটি সবুজ বা টাটকা, সাইলেজ এবং এমনকি শুকিয়ে গরুকে খাওয়ানো যায়। এই বাঁধা সমস্ত গবাদিপশুর জন্য একটি আদর্শ সবুজ খাদ্য।

চাষ পদ্ধতি

ফডার ক্যাবেজ বা পশুখাদ্যের বাঁধাকপি যেটির স্থানীয় নাম ‘বোমা’, এর চাষ খুবই সহজ। সাধারণ কপির মতো এটিও শীতকালীন ফসল। বোমা সাধারণত চাষ ও সার দিয়ে তৈরি করা জমিতে ছিটিয়ে বপন করা হয়। তবে সাধারণ বাঁধাকপির মতো চারা তৈরি করে রোপণ করলে ফলন ভালো হয়।

উপযুক্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ উর্বর মাটিতে বোমা চাষ করতে হবে। খনিজ সমৃদ্ধ বেলে মাটিতে বোমা সবচেয়ে ভালো হয়। এই জাতের বাঁধাকপির ভালো ফলন পেতে হলে প্রচুর আলো এবং মোটামুটি আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। শীতপ্রধান দেশে এটি বরফের ভেতরও ভালোভাবে গজায় এবং বেড়ে ওঠে। ‘বোমা’-এর বীজ ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও অঙ্কুরিত হয়। 

জার্সি বাঁধাকপি

জার্সি বাঁধাকপি (ব্রাসিকা ওলরেসিয়া লংগাটা) ইংল্যান্ডের চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জের একটি স্থানীয় জাত। এই বাঁধাকপি কান্ড অস্বাভাবিকরকম বড় হয়। এটি গৃহপালিত পশুপাখির সবুজ খাদ্য এবং হাঁটার লাঠি (ওয়াকিং স্টিক) তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতো। এটি জার্সি পালং বা গোখাদ্যের বাঁধাকপি নামেও পরিচিত।

‘জার্সি বাঁধাকপি’র ডালপালা বেশ লম্বা হয়। এক একটি কপি গাছের গড় উচ্চতা ৬ থেকে ১০ ফুট অবধি হয়। তবে এটি ১৮ থেকে ২০ ফুট পর্যন্তও লম্বা হতে পারে। ঐতিহ্যগতভাবে বিশেষ করে জার্সি দ্বীপের বাসিন্দারা এই বাঁধাকপির কান্ড দিয়ে হাঁটার লাঠি তৈরি করতেন। এমন এক সময় ছিল যখন প্রতি বছর ৩০ হাজার লাঠি বিক্রি হতো, শুধু তাই নয়, এই বিক্রির বেশিরভাগই ছিল রফতানি। 

walking stick Kale

জার্সি বাঁধাকপি ক্ষেতের বেড়া দেওয়ার জন্য এবং ঘরের উয়া-বাটাম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। কপি গাছের কান্ডের বেশিরভাগ অংশ খালি; অর্থাৎ কোনো পাতা থাকে না। জার্সি দ্বীপবাসীরা এই কান্ডটি আরো বড় করতে পাতা ছিঁড়ে ফেলতেন এবং ডালপালা ছাড়া বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করতেন। প্রাপ্তবয়স্ক গাছের কেটে কান্ডটি সুন্দর করে বার্নিশ করা হয়। এরপর হাতল তৈরি করার জন্য গোড়ার দিকের অংশ আগুনে গরম করে বাঁকানো হতো অথবা রোপন করাই হতো এমনভাবে বাঁকিয়ে যাতে মূলের দিকটি প্রাকৃতিকভাবেই হাতলের মতো বাঁকিয়ে যায়।

জার্সি বাঁধাকপির নিচের পাতাগুলো গবাদিপশুকে খাওয়ানো হতো। পর্তুগালের একটি জাত চাষ করা হতোই পশুখাদ্যের জন্য। এই জাতটি খামারিদের জন্য অনেক সাশ্রয়ী ছিল। ফারমার্স ম্যাগাজিনের ১৮৩৬ সালের সংখ্যায় বলা হয়, পর্তুগালের বাঁধাকপির জাতটির মাত্র পাঁচটি গাছ দিয়ে ১০০টি ভেড়া বা ১০টি গরু পালন করা যেত। এরকম কথা প্রচলিত ছিল যে, এই কপির পাতা খাওয়ালে ভেড়ার লোম হয় সিল্কের মতো এবং ২৫ ইঞ্চি লম্বা। 

এই বাঁধাকপি কিন্তু খাওয়ার জন্যও চাষ করা হতো। এর একেবারে মাথায় ছোট আকৃতির গুটি হয়। এটি নরম ও খাওয়া যায়। তবে এই গুটি এতোই ছোট যে মনে হবে যেন এই জাত পশুখাদ্য আর লাঠি তৈরির জন্যই উপযুক্ত।

চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জে এই কপিটি এখন খুব একটা দেখা যায় না। খরগোশকের খাওয়ানোর জন্য অনেকে ব্যক্তিগতভাবে সামান্য চাষ করেন। 

Post a Comment

0 Comments