সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

গবাদিপশুর চোখের কৃমি, কারণ ও প্রতিকার


গবাদিপশুর পেটে, যকৃতে (কলিজা) কৃমি খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু গরুর আরেক ধরনের কৃমি আছে। এটি একটি মারাত্মক পরজীবী। এই পরজীবী হলো চোখের কৃমি। গরুর অক্ষীগোলকের উপরে এই কৃমি কিলবিল করে বেড়ায়। এর খাদ্য মূলত রক্ত। এমনকি এই কৃমি মানুষের চোখেও হতে পারে। মানুষের চোখে গরুর এই কৃমির আক্রমণের বেশ কয়েকটি প্রমাণ আছে। ফলে খামারকে এই কৃমি থেকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি।

রোগের কারণ

থেলাজিয়া (স্পিরুরিডা, থেলাজিডি) জেনাসটি চোখের কৃমির একটি একটি কজমোপলিটান গ্রুপ। এটি গৃহপালিত এবং বন্যপশুর চোখে সংক্রমণ ঘটায়। এই কৃমির প্রধান বাহক হলো কয়েক ধরনের ডাশ। এর মধ্যে চোখের কৃমি (Thelazia spp) বিভিন্ন দেশে গরু ও ঘোড়ার একটি সাধারণ চোখের কৃমি। তবে এই কৃমি শুধু গরু-ঘোড়ার মতো বড় পশুতেই হয়। ছাগল ভেড়া এর থেকে নিরাপদ। 

পশুর চোখের কৃমি (থেলাজিয়া এসপিপি)

অনেক দেশে গবাদিপশু এবং ঘোড়ার সাধারণ পরজীবী। গবাদি পশুগুলো মূলত টি গুলোসা, টি স্ক্রাজিনী এবং টি রোডেসি দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে এর মধ্যে টি রোডেসি সবচেয়ে মারাত্মক। বিভিন্ন দেশে গরুকে সংক্রমিত করে এই প্রজাতির কৃমিই। এই কৃমি চোখের পাতার নিচে বসবাস করে। 

গরুর চোখের কৃমি ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দেখতে পাতলা এবং সাদা। এক বা উভয় চোখ আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত পশুর একটি চোখে সর্বোচ্চ ৯০টি পর্যন্ত এই পরজীবী পাওয়া গেছে। 

সংক্রমণের সময়

সংক্রমণ সারা বছর হতে পারে। তবে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটতে পারে গরমকালে। কারণ এসময় মাছির উৎপাত বাড়ে। এই মাছিই এই কৃমির প্রাথমিক বাহক।  ক্লিনিক্যাল রোগের প্রকোপগুলো বিশেষত গবাদিপশুতে সাধারণত মাছিদের উষ্ণ মৌসুমের তৎপরতা যেমন: আক্রমণ, প্রজনন, বিস্তার ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত। 

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গবেষণার কেস স্টাডিতে আক্রান্ত গরুর বাম চোখে কনজাঙ্কটিভাইটিস, ঘোলাভাব এবং কর্নিয়ায় অস্বচ্ছতা দেখা গেছে। আক্রান্ত গরুটি নিস্তেজ, ডিপ্রেসড এবং মারাত্মক কনজাঙ্কটিভাইটিস, বাম চোখের কনজাঙ্কটিভাল শোথ দেখা গেছে। তবে সেটির শরীরের তাপমাত্রা, নাড়ি এবং শ্বাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ছিল স্বাভাবিক। বিস্তারিত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় একটি চোখে কৃমির (থেলাজিয়া এসপিএস) ব্যাপক নড়াচড়ার সময় অক্ষিগোলকের উপর ভেসে উঠতে দেখা যায়।

টি রোডেসির জীবনচক্র

টি রোডেসির লার্ভা প্রথমে মাছিদের অন্ত্রে প্রবেশ করে এবং ডিম্বাশয়ের ফলিকালগুলোতে প্রবেশ করে, যেখানে তারা বড় হয়। এরপর লার্ভা দ্বিতীয় পর্যায় অতিক্রম করে তৃতীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ হলে সংক্রামক লার্ভাতে পরিণত হয়। তৃতীয় পর্যায়ের লার্ভা ডিম্বাশয় ফলিকলগুলো ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং মাছিটির মুখপত্রগুলিতে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা গবাদিপশুতে স্থানান্তরিত হয়।

গবাদিপশুদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক কৃমিতে পরিণত হতে লার্ভার প্রায় ১-৪ সপ্তাহ সময় লাগে। প্রাপ্তবয়স্ক পরজীবীগুলো চোখের ক্যাভিটির পৃষ্ঠের উপর এবং ল্যাক্রিমাল এবং ন্যাসো ল্যাক্রিমাল নালীগুলিতে ঝিল্লির পিছনে অবস্থান নেয়। কৃমির শরীরের ত্বক বেশ রুক্ষ্ণ, এ কারণে এটি কর্নিয়ায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি এবং ক্ষরণ নালীগুলোতে সংক্রমণের কারণে প্রদাহ এবং নেক্রোটিক এক্সিউডেশন হতে পারে। হালকা থেকে মারাত্মক কনজাঙ্কটিভাইটিস এবং ব্লিফারাইটিস হতে পারে। এছাড়া কর্নিয়ায় প্রদাহ, ঘা, কর্নিয়ায় ছিদ্র ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

চিকিৎসা

প্রাথমিকভাবে বাম চোখের মধ্যে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া প্রবেশের পরে চোখের কৃমিটি সার্জিক্যালি বের করা হয়। বোরিক পাউডার জলীয় দ্রবণ দিয়ে চোখটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা হয়। পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধে সিপলক্স-ডি (সিপ্রোফ্লোক্সাকসিন এবং ডেক্সামেথসোন) প্রতি ৫ ঘণ্টা অন্তর চোখে ৫ ফোঁটা করে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এছাড়া ইভারমেকটিন ০.২ মি.গ্রা / কেজি অনুসারে ইনজেকশন দিতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ধাপগুলে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলে গরুর চোখের কৃষি সহজেই সারানো যায়।

Post a Comment

1 Comments

  1. আমার কুকুরের চোখে হইছে এখন কি করব

    ReplyDelete