যথাযথভাবে মাটির প্রস্তুত, পানি সেচ এবং মালচিংয়ের পরও ফসলের বৃদ্ধি যদি সন্তোষজনক না হয় তাহলে বুঝতে হবে কোনো একটি পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফল এবং শাকসবজি যদি কনটেইনার বা টবে চাষ করা হয় সেক্ষেত্রে পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত অ্যাসিডটিক (অম্লীয়) বা ক্ষারযুক্ত মাটিতে পুষ্টিহীনতার সমস্যা বেশি দেখা যায়। হলুদ বা লালচে বর্ণের পাতা, বৃদ্ধি থেমে যাওয়া এবং আশানুরূপ ফুল না আসা নাইট্রোজেন, ম্যাগনেসিয়াম বা পটাসিয়ামের ঘাটতির সাধারণ লক্ষণ।
পুষ্টির ঘাটতি কি?
ছোটখাট বাগানের মাটি এবং ছোট পাত্রে তৈরি কম্পোস্টে সব পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট পরিমানে থাকে না। এমনকি এ ধরনের মাটি বা কম্পোস্টে কিছু পুষ্টি উপাদান একেবারেই থাকে না। ফলে বাগানের ফসলে পুষ্টি ঘাটতির নানা লক্ষণ দেখা দেয়।
এছাড়া উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ যদি না থাকে এবং মাটিতে উপস্থিত পুষ্টি গ্রহণ করতে অক্ষম হয়, তাহলেও কিন্তু ফসল পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে। যেমন খুব অ্যাসিডিক বা ক্ষারীয় মাটি, খরা এবং জলাবদ্ধতা-এ ধরনের অবস্থা গাছকে মাটি থেকে পুষ্টি গ্রহণে বাধা দেয়।
পুষ্টির ঘাটতি থাকলে সাধারণত প্রথমে পাতা হালকা হলুদ বা বাদামি রঙ ধারণ করে। কখনও কখনও আলাদা লক্ষণও দেখা যেতে পারে। পুষ্টির ঘাটতির কারণে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং ফুল কম বা দুর্বল হয় ও ফল ধরে না।
লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকার
নাইট্রোজেনের ঘাটতি
লেটুস পাতা, নাইট্রোজেন ঘাটতির কারণে ক্রম পরিবর্তন |
লক্ষণ: স্পষ্ট হলুদ ডালপালা বা হলুদ পাতা, কখনও কখনও গোলাপী রঙের স্পট দেখা দেয়।
কারণ: উদ্ভিদের জীবনে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, গ্রন্থিরস (হরমোন), ক্লোরোফিল, ভিটামিন এবং উৎসেচকগুলোতে নাইট্রোজেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নাইট্রোজেন কাণ্ড ও পাতার বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত নাইট্রোজেনে যেমন ফুল, ফল ফুটতে দেরি হয়, তেমনই নাইট্রোজেনের ঘাটতি হলে গাছের ফলন ক্ষমতা কমে যায়, পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নাইট্রোজেন সবুজ পাতার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এর ঘাটতি হলে হলুদ হয় এবং বৃদ্ধি থেমে যায়। নাইট্রোজেন খুব দ্রবণীয়, তাই বর্ষাকালে বৃষ্টিতে খুব সহজেই মাটি থেকে ধুয়ে যায়, ফলে শরৎ কিংবা বসন্তকালে যখন উদ্ভিদের নতুন বৃদ্ধি শুরু হয় নাইট্রোজেনের ঘাটতির কারণে পাতা হলুদ হতে দেখা যায়।
প্রতিকার: দীর্ঘমেয়াদে জৈব পদার্থ দিয়ে (যেমন ভালো পচা কম্পোস্ট) মালচিং করলে নাইট্রোজেন আবদ্ধ থাকে। আর স্বল্পমেয়াদে সমস্যার সমাধান চাইলে উচ্চমাত্রার নাইট্রোজেন সার যেমন অ্যামোনিয়াম সালফেট বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা থেকে তৈরি জৈবসার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
পটাসিয়ামের ঘাটতি
লেটুস পাতা: পটাসিয়াম ঘাটতির ফলে ক্রম পরিবর্তন |
লক্ষণ: পাতার কিনারায় বাদামি রঙ এবং গোটা পাতা হলুদ বা বেগুনি রঙ ধারণ করে। ফুল কম ধরবে বা ফুলের মান খারাপ হবে। ফল ধরলেও মান খারাপ হবে।
কারণ: চিনি, শর্করা, কার্বোহাইড্রেট গঠন, প্রোটিন সংশ্লেষ, মূল ও উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গে কোষ বিভাজনের জন্য পটাসিয়াম অত্যন্ত জরুরি। পানির ভারসাম্য রক্ষা, কাণ্ডের দৃঢ়তা, ঠাণ্ডা সহ্য করার সক্ষমতা অর্জন, ফল ও সবজির গন্ধ ও রঙের তীব্রতা বাড়ানো, ফলে তেলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য পটাসিয়াম প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে পাতাবহুল ফসলের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম। পটাসিয়ামের অভাবে ফলন কমে যায়, পাতায় ছোপ ছোপ দাগ হয়, পাতা কুঁকড়ে যায়, পাতার ঝলসানো চেহারা হয়ে যায়।
পানি গ্রহণ এবং সূর্য থেকে শক্তি আহরণ (আলোকসংশ্লেষণ) থেকে শক্তি জোগানো উভয় প্রক্রিয়াই নিয়ন্ত্রণের জন্য দরকার পটাসিয়াম। পটাসিয়াম ফুল, ফল এবং সাধারণ টেকসই বৃদ্ধির প্রয়োজন। ঝরঝরে, বেলে বা চলা (বালকা) মাটি থেকে খুব সহজেই পটাশিয়াম ধুয়ে যায়। এর বিপরীতে কাদামাটি পটাসিয়াম ধরে রাখে।
প্রতিকার: উচ্চমাত্রায় পটাশিয়ামযুক্ত সার যেমন, সালফেট বা পটাশ, টমেটো ফিড বা সুগার বিট প্রক্রিয়াকরণ থেকে প্রাপ্ত কিছু জৈব পটাসিয়াম সার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ফসফরাস ঘাটতি
ফসফরাস ঘাটতির কারনে পাতায় ক্রম পরিবর্তন |
লক্ষণ: বৃদ্ধি খুবই ধীর গতির হয়ে যায় এবং পত্রমঞ্জুরি হলুদ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
কারণ: বীজের অঙ্কুরোদ্গম, সালোকসংশ্লেষ, প্রোটিন উৎপাদনসহ উদ্ভিদের সব রকমের বৃদ্ধি এবং বিপাক ক্রিয়ার জন্য ফসফরাস প্রয়োজনীয়। ফুল ও ফল হওয়ার জন্যও এটা জরুরি। পিএইচ মাত্রা ৪-এর কম () (অম্লীয়) হলে ফসফেট রাসায়নিকভাবে জৈব উপাদানযুক্ত মাটিতে আটকে থাকে। ফসফরাসের অভাবে কাণ্ড ও পাতার রঙ নীলাভ লাল হয়ে যায়, পরিণতি ও বৃদ্ধির হার কমে যায়। ফুল ও ফলের সংখ্যা কমে যায়। ফল-ফুল তাড়াতাড়ি ঝরে য়ায়। উদ্ভিদের শিকড়ের খুব কাছে ফসফরাস প্রয়োগ করা উচিত যাতে উদ্ভিদ তা ব্যবহার করতে পারে। দস্তা (জিঙ্ক) বাদ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস ব্যবহার করলে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
সুস্থ শিকড় এবং অঙ্কুর বৃদ্ধির জন্য ফসফরাস প্রয়োজন। মাটিতে সাধারণত ফসফরাসের ঘাটতি হয় না। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং গভীর কাদামাটিতে এর ঘাটতি হতে পারে।
প্রতিকার: সুপারফসফেট বা বোন মিল প্রয়োগ করে ফসফরাসের ঘাটতি মেটানো যায়।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি
ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিজনিত পাতার অবস্থা |
লক্ষণ: পাতার শিরাগুলোর মাঝে হলুদ হওয়া, কখনও কখনও লালচে বাদামি রঙের ফোঁটা এবং কচি বা পূর্ণবয়স্ক পাতা ঝরে পড়া। টমেটো, আপেল, আঙুর, রাস্পবেরি, গোলাপ এবং রোডোডেন্ড্রনে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি বেশি দেখা যায়। অর্থাৎ সবজি ও ফুলচাষী উভয়ের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ: এটি ক্লোরোফিল অণুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং কার্বোহাইড্রেট, শর্করা ও চর্বি উৎপাদনে এটি উদ্ভিদের উৎসেচকগুলোকে সহায়তা করে। ফল ও বাদাম ফলনে এটি ব্যবহৃত হয়, বীজের অঙ্কুরোদ্গমের জন্যও এটি জরুরি। ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে উদ্ভিদ পাণ্ডু বর্ণ (ফ্যাকাশে) হয়ে যায়, পাতার রঙ হলুদ হয়ে যায়, পাতা ঝুঁকে পড়ে। গাছে জল দিলে ম্যাগনেসিয়াম বেরিয়ে যায়। গাছে সার দেওয়ার সময় তাই অবশ্যই ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োগ করা উচিত। ঘাটতি মেটানোর জন্য ফোলিয়ার স্প্রে হিসাবে ম্যাগনেসিয়াম দেয়া দরকার।
সুস্থ পাতা এবং সূর্যের শক্তিকে কাজ লাগিয়ে শক্তি তৈরির (সালোকসংশ্লেষণ) জন্য ম্যাগনেশিয়াম খুব জরুরি। ঝরঝরে, বেলে মাটিতে ম্যাগনেসিয়ামের মাটির ঘাটতি বেশি দেখা যায়। বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম সারের ব্যবহারের (যেমন টমেটো ফিড) কারণেও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। কারণ গাছপালা পটাশিয়াম গ্রহণের মাত্রার ওপর নির্ভর করেই ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করে।
প্রতিকার: স্বল্পমেয়াদে সমাধান চাইলে গ্রীষ্মকালে উপরি প্রয়োগ হিসেবে ইপসোম লবণ প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইপসোম লবণ সঙ্গে কয়েক ফোঁটা তরল ডিটারজেন্ট মিশিয়ে নিন। ১৫ দিনের ব্যবধানের দুই থেকে তিনবার স্প্রে করুন। তবে পাতার ঝলসে যাওয়া এড়াতে আর্দ্র এবং মেঘলা দিনে স্প্রে করা ভালো।
দীর্ঘমেয়াদে সমাধান হলো, ডলোমাইট লাইমস্টোন (ক্যালসিয়াম-ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট) প্রতি বর্গমিটারে ১০০ গ্রাম বা ইপসোম সল্ট (ম্যাগনেসিয়াম সালফেট) প্রতি বর্গমিটারে ৩০ গ্রাম ছিটিয়ে গোড়ায় প্রয়োগ করুন। ডলোমাইট চুনাপাথর মাটিকে আরও ক্ষারীয় করে তুলবে, তাই এরিক্যাসিয়াস (অম্লীয় মাটি পছন্দ করে এমন ফসল) ফসল যেমন রোডোডেন্ড্রন বা ক্যামেলিয়াসে ব্যবহার করা উচিত নয়। অথবা মাটি যদি আগে থেকেই ক্ষারীয় হয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ করা যাবে না।
ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রনের ঘাটতি
লক্ষণ: অম্লীয় মাটিতে ভালো হয় এমন ফসলের ক্ষেত্রে এই দুই উপাদানের ঘাটতিতে পাতার কিনারা বাদামি এবং শিরাগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে হলুদ হয়ে যাবে।
কারণ: উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার জন্য এই ম্যাঙ্গানিজ ও লৌহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাটিতে এগুলোর ঘাটতি সাধারণত হয় না। তবে মাটি ক্ষারীয় হলে গাছের শিকড় দিয়ে ম্যাঙ্গানিজ এবং আয়রন গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। ক্ষারীয় মাটি বা ছোট পাত্রে তৈরি কম্পোস্টে জন্মানো ফসল যদি এরিকেসিয়াস (অম্ল-প্রেমী) হয় তার ক্ষেত্রে এই দুই উপাদানের ঘাটতি হওয়ার স্বাভাবিক।
আয়রন ঘাটতির কারণে পাতার ক্রম পরিবর্তন |
লোহা বহু উৎসেচককে কার্যকর করার ক্ষেত্রে জরুরি। এটি ক্লোরোফিল সংশ্লেষে অনুঘটকের কাজ করে। উদ্ভিদের নতুন কুঁড়ি বা পাতার জন্য এটি জরুরি। এর অভাবে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়, পরবর্তীতে পাতার রঙ হলুদ হয়ে যায় ও গাছের শিরা বড় হয়ে যায়। লোহা মাটি থেকে খুব সহজেই বেরিয়ে গিয়ে মাটির একেবারে তলার অংশে সঞ্চিত থাকে। মাটিতে ক্ষারের মাত্রা খুব বেশি হলে লোহা মাটিতে থাকলেও উদ্ভিদ তা ব্যবহার করতে পারে না। লোহাসহ পুষ্টিদায়ক অম্ল দ্রবণের প্রয়োগ এই সমস্যা মেটাতে পারে।
ম্যাঙ্গানিজের ঘাটতির কারণে পাতার ক্রম পরিবর্তন |
ম্যাঙ্গানিজ সালোকসংশ্লেষণ, শ্বসন, নাইট্রোজেন বিপাকে উৎসেচকের কাজে প্রয়োজন। নতুন পাতায় ম্যাঙ্গানিজের অভাব ঘটলে পাতার রঙ হাল্কা সবুজ হয়ে যায় এবং অসংখ্য সবুজ শিরা দেখা দেয়। লোহার অভাবেও এমন হয়। সমস্যা গভীর হলে সবুজ অঙ্গ সাদা হয়ে যায়, পাতা ঝরে যায়। গাছের শিরার পাশে বাদামি, কালো বা ধূসর ছোপ ছোপ হয়ে যায়। ভারসাম্যযুক্ত বা ক্ষার জাতীয় মাটিতে উদ্ভিদে ম্যাঙ্গানিজের অভাবজনিত লক্ষণ প্রকাশ পায়। অতিরিক্ত অম্লধর্মী মাটিতে এতটাই ম্যাঙ্গানিজ থাকে যে তা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
প্রতিকার: উদ্ভিদের শিকড়ের চারপাশের মাটিতে চিলেটেড আয়রন (ভক্ষণযোগ্য লৌহ) এবং ম্যাঙ্গানিজ ট্রিটমেন্টস যেমন সিকোস্টেরিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
মলিবডেনামের ঘাটতি
ফুলকপির পাতা: মলিবডেনাম ঘাটতির কারণে পাতার ক্রম পরিবর্তন |
লক্ষণ: ক্ষারীয় মাটিতে ফুলকপি বা অন্যান্য ব্রাসিকাস উদ্ভিদের দীর্ঘ পাকানো পাতা। মলিবডেনামের ঘাটতি সাধারণত ফুলকপি এবং ব্রাসিকাস উদ্ভিদেই বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে যখন এসব ফসল যথেষ্ট ক্ষার নেই এমন মাটিতে আবাদ করা হয় তখন এ সমস্যা বেশি হয়।
কারণ: যেসব উৎসেচক নাইট্রেটকে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত করে, সেগুলোতে মলিবডেনাম থাকে। এর অভাবে প্রোটিন সংশ্লেষ বন্ধ হয়ে যায় এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি থেমে যায়। শিকড়ে নাইট্রোজেন জোগান দেয় যে ব্যাকটেরিয়া, তারও মলিবডেনাম প্রয়োজন হয়। এর অভাবে বীজের গঠন সম্পূর্ণ হয় না এবং উদ্ভিদে নাইট্রোজেনের অভাব ঘটে। এর অভাবে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কিনারের দিকগুলো ভাঁজ হয়ে যায়।
উদ্ভিদের বিভিন্ন ধরনের বৃদ্ধির জন্য মলিবডেনাম দরকার হয়। যদিও পরিমাণে লাগে খুব সামান্য। মাটিতে সাধারণত এটি ঘাটতি হয় না। তবে অম্লীয় মাটিতে উদ্ভিদের জন্য মলিবডেনাম প্রাপ্তি কঠিন হযে যেতে পারে।
প্রতিকার: চুন প্রয়োগ করতে হবে। কৌশলটি হলো মাটিতে ক্ষারীয় তুলতে পারলে মলিবডেনাম শোষণ গাছের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
বোরনের ঘাটতি
বোরনের ঘাটতির কারণে ফুলকপির ভেতর ও বাইরের অবস্থা |
লক্ষণ: বোরনের অভাব হলে গাছের ডগার পাতার নিচের দিককার রঙ ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, পাতা ভঙ্গুর হয়ে যায়। ভাঙন শুরু হয় গোড়া থেকে। পাতার রঙ ধীরে ধীরে ফ্যাকাসে থেকে লাল মর্চের রং ধারণ করে। বৃদ্ধি থেকে যায়। লেটুস পাতার ডগা মরে যায়।
কারণ: বোরন কোষপ্রাচীর গঠন, ঝিল্লিকে ধরে রাখা, ক্যালসিয়াম গ্রহণ এবং অনেক ক্ষেত্রে শর্করার স্থানচ্যুতি ঘটানোয় সাহায্য করে। উদ্ভিদের অন্তত ১৬টি কাজে বোরনের ভূমিকা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুল ফোটা, পরাগরেণু বেরোনো, ফল ধরা, কোষ বিভাজন, পানির ব্যবহার ও হরমোনের চলাচল। উদ্ভিদের জীবনজুড়েই বোরন প্রয়োজন। এর অভাবে কুঁড়ি ঝরে যায় এবং গাছে ছোপ ছোপ হয়ে যায়, পাতা পুরু হয় এবং কুঁকড়ে ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফল, কন্দ ও মূল বিবর্ণ হয়ে যায়, ফেটে যায় এবং বাদামি ছোপ ধরে।
সুস্থ কোষ গঠনে বোরন দরকারি উপাদান। মাটিতে সাধারণত এটি ঘাটতি হয় না। তবে ক্ষারীয় মাটিতে এটি গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
প্রতিকার: ফসল বোনার আগে বোরাক্স (ডাই সোডিয়াম টেট্টাবোরেট) প্রয়োগ করুন। প্রতি ২০ বর্গমিটারে ৩৫ কেজি করে প্রয়োগ করুন। ভালো ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত করতে সঙ্গে সামান্য বালু মিশিয়ে ছিটাতে পারেন।
বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিতে মরিচ গাছের বিভিন্ন অংশের পাতার পরিবর্তন |
0 Comments