সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

হাইড্রোপনিক গাইড পর্ব-০১: হাইড্রোপনিক পদ্ধতি কী ও কতো প্রকার

hydroponic culture crops

হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল চাষের সম্পূর্ণ গাইড, তিনটি পর্বে প্রকাশিত। এখানে হাইড্রোপনিক পদ্ধতি কী, কেন, কীভাবে সিস্টেম তৈরি করতে হয়, ইসি, পিএইচ নিয়ন্ত্রণসহ বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

প্রথম পর্ব: হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল চাষ নিয়ে প্রাথমিক আলাপ। হাইড্রোপনিক পদ্ধতি কী ও কতো প্রকার।

কর্ষণ ডটকম: হাইড্রোপনিক কালচার, ফসল উৎপাদনের একটি আধুনিক ও সাশ্রয়ী উদ্ভাবনী চাষ পদ্ধতি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো এ পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে। অনেক দেশেই বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল বিশেষ করে টমেটো ও লেটুসের মতো শাকসবজি ও সালাদের ফসল চাষ করা হচ্ছে।

এ পদ্ধতিতে মাটির প্রয়োজন হয় না, পাশাপাশি বাড়তি সেচ এবং কীটনাশকও সাধারণত ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না। সে হিসাবে এ পদ্ধতিতে উৎপাদিক ফসল সম্পূ্র্ণ নিরাপদ বলা যায়। 

তবে ব্যবস্থাটি যেহেতু বেশ জটিল এবং এটি সফলভাবে ব্যবহার করতে উচ্চ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে সেহেতু বাজারে উচ্চমূল্য পাওয়া যাবে এমন ফসলই এ পদ্ধতিতে চাষ করা বেশি লাভজনক। 

বাংলাদেশে অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করছেন। তবে এখনো বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার দৃষ্টান্ত নেই।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের  উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দের সবজি বিভাগ এ পদ্ধতি নিয়ে কিছু কাজ করেছে। যদিও তারা মাঠ পর্যায়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও পর্বেক্ষণ যাচাই করে দেখেনি। তারা সবজি, ফল ও ফল জাতীয় ফসলের মোট ১৬টি জাত হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সফলভাবে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। কেউ এ পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে প্রয়োগ করতে চাইলে এই গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তারা হয়তো আপনার সঙ্গে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সহায়তা করতে পারেন।

বাংলাদেশে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন করছে। এই পদ্ধতিতে সারা বছরই পলি টানেল, নেট হাউজ বা গ্রিন হাউজে সবজি, ফল ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব। 

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সবজি বিভাগ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে মাটিবিহীন বড় স্টিলের বা প্লাস্টিকের ট্রেতে পানির মধ্যে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, খাটো শিম, শসা, ক্ষীরা এবং স্ট্রবেরি, গাঁদা, গোলাপ ইত্যাদি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। এবং এসব ফসল উৎপাদনে তারা কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেননি। 

এছাড়া হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সারা বছর সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদন সম্ভব। অবশ্য এ পদ্ধতিতে  অবকাঠামো তৈরিতে প্রাথমিক খরচ একটু বেশি। কিন্তু একবার স্থাপন করলে কয়েক বছর চলে যায়। সামগ্রিকভাবে খরচ কমে এবং এক বছরের মাথায়ই লাভজনক প্রকল্পে পরিণত হয়। 

শহরাঞ্চলের বাড়ির ছাদ, বারান্দা ইত্যাদি স্থানে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও সবজি চাষের সুযোগ রয়েছে। জলাবদ্ধ, লবণাক্ত, পাহাড়ি এবং বন্যাকবলিত এলাকায় হাইড্রোপনিক পদ্ধতি দারুণ সুফল বয়ে আনতে পারে।

হাইড্রোপনিক পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জানতে পড়ুন: হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ শুরুর আগে জানুন সুবিধা ও অসুবিধাগুলো

হাইড্রোপনিক পদ্ধতির প্রকারভেদ
সাধারণত দুই উপায়ে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা যায়। (ক) সঞ্চালন পদ্ধতি (Circulating System) (খ) সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি (Non-circulating System)

সঞ্চালন পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানগুলো সঠিক মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে একটি ট্যাংকিতে নেয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ (Nutrient solution) নির্দিষ্ট সময় পরপর সঞ্চালন করা হয়। 

এটি খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পাম্প এবং পাইপসহ আনুষঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরের বছর থেকে শুধু রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচের বাইরে অন্য কোনো খরচ থাকে না। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকখানি কমে যায়। 

সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানগুলো পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোনো পাম্প বা পানি সঞ্চালনের দরকার হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রুবণ ও তার উপর স্থাপিত কর্কশিটের মাঝে ২-৩ ইঞ্চি পরিমান জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। অথবা কর্কশিটের উপরে ৪-৫ টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশিটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। 

ফসলের প্রকার ভেদ অনুযায়ী সাধারণত ২-৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। এটি সরলতম পদ্ধতি। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ খুব সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে স্টিলের ট্রে, প্লাস্টিকের বালতি, পরিত্যাক্ত পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করেই বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সবজি উৎপাদন করতে পারে। এতে খরচ তুলনামূলক কম । তেমন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতারও দরকার নেই। গৃহিনী বা বাসার যে কোনো লোক এ কাজটি সহজেই করতে পারবে। 

আরো পড়ুন:

Post a Comment

0 Comments