সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ষাঁড় গাভী ও বাছুরের খাবারের সরল হিসাব


কর্ষণ ডটকম: খামারে জৈব নিরাপত্তার (বায়ো সিক্যুরিটি) পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক মাত্রায় ও ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করা। পুষ্টির ভারসাম্য নিশ্চিত করতে চাইলে খাবার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। কোন বয়সী ও কতো ওজনের পশুকে কী পরিমানে ঘাস, দানাদার খাবার ও খনিজ (মিনারেলস) দিতে হবে সেটি বুঝতে পারাটা জরুরি। 

এই হিসাবে গড়মিল হওয়ার কারণে অনেক খামারি অনেক টাকা বিনিয়োগ করেও সফলতা পান না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পশু কাঙ্ক্ষিত ওজনের হয় না বা কাঙ্ক্ষিত সময়ে হিটে আসে না আবার সেই পরিমানে দুধও দেয় না। নিচে সংক্ষেপে এই খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

দানাদার খাবার
গরুর সহায়ক খাবার হিসেবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গরুর বডি ওয়েটের ২ শতাংশ  দানাদার খাবার স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। 

দুধের গরুকে প্রথম ৩ কেজি দুধের জন্য ৩ কেজি দানাদার খাবার, পরের প্রতি ৩ কেজি দুধের জন্য ১ কেজি দানাদার খাবার। 

দানাদারের মধ্যে ৫৫-৬০ শতাংশ শর্করা (চালের কুড়া, ভুট্টা, গমের ভুষি), ২৫-৩০ শতাংশ  প্রোটিন ( ডালবীজ যেমন : এঙ্কর, মসুর, মুগ, খেসারি, মাষকলাই বা ডালবীজের খোসা), ১০-১২ শতাংশ  ফ্যাট ( তেলজাতীয় বীজের খৈল, যেমন: সরিষা, তিল, নারিকেল, সয়াবিন, কালোজিরার খৈল), ভিটামিন ও মিনারেল ২-৩ শতাংশ  (যেমন : লবণ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, জিংক, বিট লবণ, লালীগুড়/চিটগুড়)। 

তবে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি দিলে অন্য খাবার কমিয়ে দেয়া যায় এবং দানাদার খাবারের পরিমান পুষ্টিমানের ওপরেও নির্ভর করে। প্রতি কেজি মধ্যম মানের কার্বোহাইড্রেট জাতীয় দানাদার খাবার থেকে গড়ে ১০-১২ মেগাজুল, প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে গড়ে ১২-১৪ মেগাজুল এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে ২৫-৪০ মেগাজুল শক্তি গরু পেয়ে থাকে।

ঘাস/খড়/হে/সাইলেজ
ঘাস খড় গরুর প্রধান খাবার এবং গরুকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। কমপক্ষে বডি ওয়েটের ৫ শতাংশ ঘাস দিতে হবে। অর্থাৎ গরুর ওজন ১০০ কেজি হলে ঘাস খাবে ৫ কেজি। মধ্যম পুষ্টি মানের যেকোনো ১ কেজি ঘাস থেকে গড়ে ২ মেগাজুল শক্তি পাওয়া যায়। 

খড়ে পুষ্টি কম থাকলেও রুমেনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য খড় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোখাদ্য। প্রতি কেজি খড় থেকে গড়ে ৫-৬ মেগাজুল শক্তি পাওয়া যায়। 

সাইলেজ ঘাসের বিকল্প খাবার এবং পুষ্টিগুণ প্রায় ঘাসের সমান বা সামান্য বেশি। তবে সাইলেজ তৈরির উপাদান ও পদ্ধতির ওপর পুষ্টিগুণ অনেকখানি নির্ভর করে। প্রতি কেজি মধ্যম মানের সাইলেজ থেকে গড়ে ৩ মেগাজুল শক্তি পাওয়া যায়।ই
ঘাস, খড় ও সাইলেজ মিলে বডি ওয়েটের কমপক্ষে ১০ শতাংশ রাফেজ জাতীয় খাবার (সেলুলোজ)  দিতে হবে।

ষাঁড়ের জন্য ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র (ইউএমএস)
লাইভ ওয়েটের সর্বোচ্চ ০.১ শতাংশ  দেয়া যেতে পারে। ০.০৫ শতাংশ  থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে এবং  ইউএমএস দিলে অন্য খাবার কমিয়ে দিতে হবে। অসুস্থ গরুকে খাওয়ানো যাবে না এবং কোনো কারণে খাওয়ানো বন্ধ করে পুনরায় অল্প অল্প করে শুরু করে বাড়াতে হবে। অতিরিক্ত ইউএমএস গরুতে এবং মাংসে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। 

বাছুরের জন্য দুধ
পর্যাপ্ত দুধ বাছুরের পুষ্টি এবং সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে জরুরি। কমপক্ষে বাছুরের ওজনের  ১০ শতাংশ  দুধ দিতে হবে।

মনে রাখবেন, গরুকে ৮ কেজির বেশি দানাদার দেওয়া ঠিক নয়। কারণ অতিরিক্ত দানাদার খাবার গরুর হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়, এসিডিটি সৃষ্টি করে এবং প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। 

গরুর জাত ভেদে এবং দুধের পরিমাণ ভেদে দানাদার খাবারের শতকরা হিসাবে সামান্য হেরফের হতে পারে।

Post a Comment

0 Comments