সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

গরুর নীরব ঘাতক ‘ব্লাড প্রোটোজোয়া’, লক্ষণ ও প্রতিকার

ব্লাড প্রোটোজোয়ায় আক্রান্ত গরু
ব্লাড প্রোটোজোয়ায় আক্রান্ত গরু
হেমো প্রোটোজোয়া বা ব্লাড প্রোটোজোয়া, সোজা কথায় বলতে গেলে রক্তের পরজীবী। গবাদিপশু বিশেষ করে গরুতে এ রোগ হয় সারা বিশ্বেই। কারণ রোগটি ছড়ায় মূলত আঁটুলি, মাছি এ ধরনের বহিঃপরজীবীর মাধ্যমে। আর এসব একেবারে শীতপ্রধান এলাকা ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই আছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর খামারিরা সাধারণত খামারে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারেন না। এ কারণে এসব দেশে ব্লাড প্রটোজোয়ায় খামারের ক্ষতি বেশি হয়। এ ধরনের সমস্যা আক্রান্ত হলে পশুর দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যহানী এবং উৎপাদন কমে যায়।

ব্লাড প্রোটোজোয়ার ধরনের মধ্যে রয়েছে থেলারিওসিস, টাইপানোসোমিওসিস, ব্যাবিসিওসিস এবং অ্যানাপ্লাজমোসিস। আক্রান্ত গরুর মধ্যে সাধারণত জ্বর, রক্তস্বল্পতা, গর্ভপাত, এনারোক্সিয়া (ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাবারে অরুচি), কাশি, শ্বাসকষ্ট, কিটোসিস বা রক্তের গ্লুকোজের অভাবের কারণে কিটোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এসব লক্ষণ দেখা যায়। সমস্যাটি যদি ক্রনিক হয়ে যায় (মাঝে মধ্যেই হয় এমন) তাহলে চূড়ান্ত পযায়ের গরু মারাও যেতে পারে।

রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার পর একটা গরু দীর্ঘদিন ধরে বাহক হিসেবে ভূমিকা রাখে। ফলে আক্রান্ত গরু সুস্থ হলেও খামারে একসঙ্গে রাখলে অন্য গরুর মধ্যে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গাভীর মধ্যে এ রোগের লক্ষণ বুঝতে একটা বাস্তব পরিস্থিতি খেয়াল করুন:

গাভী বাচ্চা দেওয়ার পর অনেক সময় দেখা যায় হঠাৎ করে শুয়ে যায়, ওঠার শক্তি পায় না। তাছাড়া গর্ভবতী গাভী, বাছুর, বকনা, ষাঁড় অনেক সময় খাবার কম খায়, এরপর আমরা যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হই গরুকে বিভিন্ন চিকিৎসা দিতে বলা হয়। এতে গরু সাময়িক সুস্থ হয় বটে কিন্তু কয়েকদিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থতার ধরন একেক সময় একেক রকম হতে পারে। অনেক সময় তা মিল্ক ফিভার বা দুধ জ্বরের মতো, অনেক সময় হাঁপানি ও কাশি থাকে, অনেক সময় তা কিটোসিসের মতো, আবার অনেক সময় অরুচি ও অন্যান্য উপসর্গ থাকে। বেশিরভাগ সময়েই এ জাতীয় সমস্যা রক্ত পরীক্ষা করলে প্রোটোজোয়া পজিটিভ পাওয়া যায়।

দেখা যায়, সাত মাসের গাভীন থেকে বাচ্চা দেওয়া পর্যন্ত বা যেকোনো বয়সে যদি গরুর জ্বর হয়, জ্বর যদি খুব বেশি উঠানামা করে, খাবার কম খায়, প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে জ্বর আসে, চিকিৎসা দেওয়ার পরও গরু সুস্থ না হয় তাহলে অবশ্যই গরুর ব্লাড প্রোটোজোয়া (ব্যাবিসিয়া, এনাপ্লাজমা, থাইলেরিয়া, টিপ্নোসমা) পরীক্ষা করাতে হবে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য এলাকায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের বেশ কিছু ল্যাবে অল্প খরচে বা বিনামূল্যে এই টেস্ট করানো যায়। তবে কোন টেস্ট করতে চান সেটি উল্লেখ করতে হবে।

প্রোটোজোয়া পজিটিভ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গরুর চিকিৎসা করাতে হবে।

আগাম সতর্কতা হিসেবে যা করা উচিত
নিজের খামারের পাশাপাশি আশেপাশের খামারের গরুর র‌্যানডম ব্লাড টেস্ট বা দৈবচয়নে রক্ত পরীক্ষা করুন। অর্থাৎ খমারের মধ্য থেকে দুয়েকটি গরুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করুন।
আক্রান্ত গরুকে মশা মাছি  আঁটুলি কামড় দিয়ে সুস্থ গরুকে কামড়ালে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে খামার থেকে এসব যেকোনো মূল্যে দূর করুন।
খামারের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
রক্ত পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করতে পারলে অল্প খরচেই এ রোগের চিকিৎসা করা যায়।

Post a Comment

0 Comments