সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

বেলজিয়ান ব্লু: ছোট খামারে একটি গরুই যথেষ্ট!

বেলজিয়ান ব্লু জাতের গরু
বেলজিয়ান ব্লু
গরু উৎপাদেরন বিশ্বের অন্যতম দেশ হলো বেলজিয়াম। এদেশেরই একটি বিখ্যাত জাত ‘বেলজিয়ান ব্লু’ বা ‘নীল গরু’। ‘হোয়াইট ব্লু’, ‘ব্লু হোয়াইট’, ‘হোয়াইট ব্লু পাইড’সহ আরো অনেক দেশে অনেক নামে  পরিচিত এ গরু। মূলত গায়ের রঙের ওপর ভিত্তি করে এমন নামকরণ করা হয়।

বেলজিয়ান ব্লু গরুর ওজন হয় গড়ে কমপক্ষে ৮০০ কেজি। সে হিসাবে বাংলাদেশী জাতের গরুগুলোর চেয়ে বেলজিয়ান ব্লুর ওজন গড়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেশি। আর বেলজিয়ান ব্লু ষাঁড়ের ওজন হয় গড়ে কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ কেজি পর্যন্ত।

উৎপত্তিস্থল
বেলজিয়ান ব্লু জাতটি ষাটের দশকে মধ্য বেলজিয়াম ও বেলজিয়ামের ওপরের দিককার অঞ্চলে প্রথম বিকাশ লাভ করে। ইউরোপ আমেরিকায় গত প্রায় ৭০ বছর ধরে মাংসের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এই গরুর জাত। ‘বেলজিয়ান ব্লু’ জাতটি বেলজিয়ামের প্রায় দুশ বছরের পুরনো একটি জাতেরই উন্নত সংস্করণ। ১৯৫০ সালে কৃত্রিম প্রজনন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর হ্যাটসেট ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে বেলজিয়ামের আদি একটি জাতকে উন্নত করে বেলজিয়ান ব্লু হিসেবে পরিচিত করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে এটি ছড়িয়ে যায় ইউরোপ ও আমেরিকায়।

বৈশিষ্ট্য
শক্তিশালী পা বিশিষ্ট বিশালদেহী গরুর শরীরে থরে থরে মাংসপেশী সাজানো। প্রাকৃতিকভাবেই মাংসের জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে জাতটির। যথেষ্ট শক্তিশালী ও শান্ত প্রকৃতির গরুটির পিঠে কোনো কুঁজ নেই। এই জাতের গরু ৭০ কেজি ওজন নিয়েই জন্ম নেয়। অর্থাৎ বাছুরের ওজনই আমাদের দেশী গরুর প্রায় সমান! এ কারণে খামারের সব বাছুরই সিজারিয়ান হয়। আর একটি প্রাপ্তবয়স্ক মা–গরু মোট ছয়বার সিজারিয়ান প্রক্রিয়ায় যেতে পারে।

মাত্র এক দিন বয়সী বাছুর প্রতিদিন পাঁচ লিটার পাউডার দুধ খায়। তিন মাস বয়স থেকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দানাদার খাদ্য দেওয়া হয়। প্রতিদিন প্রায় এক কেজি করে ওজন বাড়তে থাকে বাছুরের। দু’বছরের মাথায় কমপক্ষে ৬০০ কেজি ওজন হয় একটি গরুর। তিন বছরে এর ওজন দাঁড়ায় ৭৫০ কেজিতে। এভাবে ওজন বেড়ে ১০০০ কেজি থেকে ১২০০ কেজি পর্যন্ত পৌঁছায়।

দানব আকৃতি দেখে ভাববেন না যা বেলজিয়ান ব্লু গরুকে বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন বা স্টেরয়েড দেয় হয়। আসল ব্যাপার হলো, একেবারেই প্রাকৃতিকভাবেই এ জাতের গরু এতো বড় হয়। এর জন্য দায়ী জাতটির শরীরে দুই ধরনের মিয়োস্ট্যাটিন জিন। এ জিনের বিশেষ মিউটেশনের কারণেই বেলজিয়ান ব্লু ডাবল মাসলিং বৈশিষ্ট্য পায়। শীত, গ্রীষ্ম উভয় আবহাওয়াতেই এ গরু সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সুতরাং এটি বাংলাদেশের মতো উষ্ণ আবহাওয়ার দেশেও পালন করা যাবে।

আমাদের দেশী গরুর গড়ে মাংস হয় সর্বোচ্চ ২০০ কেজি বা ৫ মণ। বিশেষ ব্যবস্থায় লালন-পালনের মধ্য দিয়ে দেড় থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে আট বা নয় মণের মধ্যে ওঠানামা করে একটি গরু থেকে প্রাপ্ত মাংসের পরিমাণ। সেখানে বেলজিয়ান ব্লু জাতটির মাংস আসে গড়ে ৮০০ কেজি বা ২০ মণ থেকে ২৫ মণ পর্যন্ত। এই পরিমাণ মাংস পৃথিবীর আর কোনো গরু থেকে আসে না। এ ক্ষেত্রে বেলজিয়ান ব্লু জাতটিকে দেশে এনে প্রয়োজনীয় গবেষণা সম্পন্ন করে খামার পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া গেলে দেশের মাংসের চাহিদা সহজে পূরণ করে রফতানিও করা যেত।

প্রসঙ্গত, দেশে মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ২০০৮-১০ অর্থবছরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় খামার পর্যায়ে লালন-পালন শুরু হয়েছে বিখ্যাত একটি আমেরিকান জাত ‘ব্রাহমা’।  দেশের ৮০টি উপজেলার খামারে চলছে এই জাতের গরুর লালন-পালন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর খামার পর্যায়ে লালন-পালন করে ‘ব্রাহমা’ ও ‘বেলজিয়ান ব্লু’ এই দুই জাতের একটি তুলনামূলক গবেষণা চালিয়ে দেখতে পারে।

Post a Comment

0 Comments