স্টিভিয়ার চিনি |
ক্রিস্তোস স্তামেতিস শুধু নিজে তামাক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। বরং আশপাশের কৃষক ও খামারিদের তামাকের ক্ষতির দিকটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রিসের ফিওতিদা অঞ্চলের অনেক কৃষক তামাকের পরিবর্তে স্টিভিয়া চাষ শুরু করেছেন। এক দশকের ব্যবধানে স্থানীয় ১৫০ কৃষক ও খামারিকে নিয়ে ক্রিস্তোস একটি সমবায় সমিতি তৈরি করেছেন। সমিতির সদস্যরা সবাই তামাক ছেড়ে স্টিভিয়া চাষ শুরু করেছেন।
শুরুতে অলাভজনক হলেও বর্তমানে এ সমবায় সমিতির প্রত্যেক সদস্য শেয়ারপ্রতি ৫৫৭ ডলার লাভ করতে পারছেন। এ সমিতি এখন ইউরোপের প্রথম বাণিজ্যিক উদ্যোগে স্টিভিয়া চাষের স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানে প্রায় ৩০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
সমিতির সদস্যরা বর্তমানে দুটি ব্র্যান্ডের অধীনে স্টিভিয়ার তরল ও গুঁড়ো উৎপাদন করছেন। গ্রিসের সীমানা ছাড়িয়ে এসব পণ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ইউরোপের অন্যান্য দেশ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন সুপারশপে। ক্রিস্তোস স্তামেতিসের সাফল্যের পথ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার তামাকচাষীরাও স্টিভিয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, স্টিভিয়া কী? আমরা কেনইবা পণ্যটি নিয়ে এত আগ্রহী?
স্টিভিয়া বিরুৎ জাতীয় (Herb) একটি উদ্ভিদ। এর পাতা ও কাণ্ড প্রচণ্ড মিষ্টি। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক টেবিল চামচ চিনির তুলনায় স্টিভিয়ার কয়েকটি পাতার মিষ্টতা ৩০ থেকে ১৫০ গুণ বেশি। ফলে সহজেই এটিকে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। স্পেনের বিখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও ইউনিভার্সিটি অব ভ্যালেন্সিয়ার বোটানির অধ্যাপক পেট্রাস জ্যাকোবাস স্টিভাসের নামানুসারে এটির নাম রাখা হয়েছে স্টিভিয়া।
আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে স্টিভিয়ার অস্তিত্বের কথা জানা গেছে। ওই সময় দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের মানুষ চা-ওষুধে মিষ্টি উপাদান হিসেবে স্টিভিয়া ব্যবহার করত। ১৮৯৯ সালে সুইস উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মোজেস সান্তিয়াগো বারটোনি এ উদ্ভিদ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেন। তার গবেষণার কারণে এটি আলোচনার কেন্দ্রে আসে। এর উপকারিতা সম্পর্কে প্রথম প্রথাগত জ্ঞান লাভ করে মানুষ।
২০০৯ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টিভিয়ার পাতার গুঁড়ো নিয়মিত সেবনে মানবদেহে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। পরের বছর আরেকটি গবেষণা প্রমাণ করে যে রক্তে ইনসুলিন ও গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখতে এটি বেশ সহায়ক। ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে স্টিভিয়া। একই সঙ্গে এতে ন্যূনতম মাত্রায় ক্যালরি রয়েছে। ফলে যারা ডায়েট করেন কিংবা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য চিনির সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হতে পারে স্টিভিয়া। তবে সঠিক স্বাদ পেতে হলে এর পরিমিত ব্যবহার করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা।
গত শতকের শেষের দিকে মনে করা হতো, স্টিভিয়ায় ক্যান্সারের উপাদান রয়েছে। এ কারণে ১৯৯১ সালে এটিকে নিষিদ্ধ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। তবে পরবর্তী সময়ে এ ধারণা ভুল প্রমাণ হওয়ায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি (ইএফএসএ) স্টিভিয়াকে নিরাপদ ঘোষণা করেছে। এ কারণে ইউরোপ, আমেরিকায় চিনির বিকল্প হিসেবে স্টিভিয়ার তরল কিংবা গুঁড়ো দিয়ে তৈরি চা, কফি, স্মুদি, দই, কোমল পানীয় জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
স্টিভিয়ার ক্ষেত |
0 Comments