সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

কোল্ড ইনজুরি বা শীতে বীজতলার ক্ষতি এড়াতে করণীয়

কোল্ড ইনজুরিতে নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা
কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত বীজতলা
অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং কুয়াশার কারণে ধানের বীজতলায় চারা হলুদ রঙ ধারণ করে ক্রমে শুকিয়ে মরে যাওয়ার সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। একে কৃষিবিদরা বলেন ‘কোল্ড ইনজুরি’। ঠান্ডা ও শৈতপ্রবাহের সঙ্গে কুয়াশা থাকলে এ সমস্যা বেশি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে ত্বরিৎ ব্যবস্থা না নিলে সব চারা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন নতুন করে বীজতলা করতে গেলে ধান নাবী হয়ে যাবে। আর বাজার থেকে চারা সংগ্রহ করতে চাইলেও পারেন। তবে কাঙ্ক্ষিত জাতের ধান নাও পেতে পারেন। আবার মানসম্মত চারা পাওয়ার নিশ্চয়তাও দেওয়া যায় না। এ কারণে শীতকালে ধানের চারা বাঁচাতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই ভালো-

* সেচ পাম্পের কাছে বীজতলা তৈরি করতে হবে। যাতে বিকাল বেলায় মাটির তলা থেকে উঠে আসা গরম পানি বীজতলায় দেওয়া যায়। আবার সাতসকালে বীজতলা থেকে ঠান্ডা পানি বের করে দিতে হবে।
* জিঙ্ক ইডিপিএ প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম এবং ট্রাইসাইক্লোজোল লিটার প্রতি পানিতে শূন্য দশমিক ৭৫ গ্রাম মিশিয়ে কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত চারায় প্রয়োগ করতে হবে। তবে ওষুধ প্রয়োগের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বীজতলায় পানি দেওয়া যাবে না।
* বীজতলায় ছাই ছিটিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কারণ ছাই জমির তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আবার এর মধ্যে থাকা পটাশ এবং জৈব পদার্থও চারাগাছের পক্ষে উপকারী।
* অতিরিক্ত ঠান্ডার সময় বীজতলাকে স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে।
* প্রতিদিন সকালে চারার উপর জমা শিশির ঝড়িয়ে দিতে হবে। এতে চারা ভালোভাবে বেড়ে উঠবে।
* বীজতলার চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতাংশ বীজতলার জন্য ২৮০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। তারপরও চারা হলুদ থাকলে প্রতি শতাংশে ৪০০ গ্রাম হারে জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।
* অধিক শীত ও কুয়াশায় সম্ভাব্য রোগ দমনের জন্য বীজতলায় মাত্রানুযায়ী ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- ডাইথেন এম-৪৫ বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা জ্যাজ ২ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।

শীতকালে তাপমাত্রা খুব ওঠানামা করলে চারাগাছ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এসময় করণীয়:
* বীজতলার চারা পাতা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত হলে সকালে রশি টানা দিয়ে চারা থেকে কুয়াশার পানি ফেলে দিতে হবে। তারপর প্রতি শতাংশ বীজতলার জন্য ৫০ গ্রাম হারে পটাশ সার দিতে হবে। তবে মানে রাখতে হবে এই সময় ইউরিয়া প্রয়োগ বন্ধ রেখে বীজতলা থেকে সেচের পানি বের করে দিতে হবে। পুনরায় ১ সপ্তাহ পর সেচ দিতে হবে।
* চারা পোড়া বা পাতা ঝলসানো রোগ দমনের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার অ্যাজোঅক্সিস্ট্রবিন বা পাইরাকোস্ট্রবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে দুপুরের পর স্প্রে করতে হবে।
* রোপণের জন্য কমপক্ষে ৩৫-৪৫ দিন বয়সী চারা ব্যবহার করতে হবে। এ বয়সের চারা রোপণ করলে শীতে ও চারার মৃত্যু হার কমে, চারা সতেজ থাকে ও ফলন বেশি হয়।
* চারা রোপণকালে শৈত্য প্রবাহ শুরু হলে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার পযন্ত অপেক্ষা করুন।
* ধানের চারা রোপণের পর শৈত্য প্রবাহ হলে জমিতে ৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে।
* অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যাবে না।

Post a Comment

0 Comments