চিচিঙ্গা |
জলবায়ু ও মাটি
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় চিচিঙ্গা ভাল জন্মে। শীতের দু’ তিন মাস বাদ দিলে বাংলাদেশে বছরের যেকোন সময় চিচিঙ্গা জন্মানো যায়। সব রকম মাটিতে চিচিঙ্গার চাষ করা যায় তবে জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আশঁ ও বেলে দো-আশঁ মাটিতে ভালো জন্মে।
জাত
বিএডিসি ‘ঝুম লং’ নামের একটি জাতের বীজ উৎপাদন করছে। এর ফল নীলাভ কালচে সবুজ ও দীর্ঘ। ফলধারী আরো একটি জাত ‘সাদা সাভারী’ নামে পরিচিত। তাছাড়া তিস্তা, তুরাগ, সুরমা, রূপসা, বিভিন্ন জাত এদেশে চাষ হয়।
জীবন কাল
মোট জীবনকাল প্রায় পাঁচ মাস। তবে জাত ও আবহাওয়া ভেদে সময় কমবেশী হতে পারে।
উৎপাদন মৌসুম
এদেশে চিচিঙ্গা প্রধানত খরিফ মৌসুমেই হয়ে থাকে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাসের মধ্যে যে কোন সময় চিচিঙ্গার বীজ বোনা যেতে পারে।
বীজের হার
চিচিঙ্গার জন্য হেক্টর প্রতি ৪-৫ কেজি (১৬-২০ গ্রাম/শতাংশ) বীজের প্রয়োজন হয়।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি
জমির তৈরির সময় থেকে শুরু করে কয়েক ধাপে সার প্রয়োগ করতে হয়। নিচের সারের নামের পাশপাশি হেক্টরপ্রতি প্রয়োজনীয় সারের পরিমাণ দেওয়া হলো:
পচা গোবর ২০ টন ৮০ কেজি ৪০ কেজি ৫ কেজি - - - -
টিএসপি ১৭৫ কেজি ৭০০ গ্রাম ৩৫০গ্রাম ৩০ গ্রাম - - - -
ইউরিয়া ১৭৫ কেজি ৭০০ গ্রাম -১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম ১৫ গ্রাম
এমপি ১৫০ কেজি ৬০০গ্রাম ২০০ গ্রাম ২০ গ্রাম ১৫ গ্রাম - - -
জিপসাম ১০০ কেজি ৪০০ গ্রাম ৪০০ গ্রাম - - - - -
দস্তা সার ১২.৫ কেজি ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম - - - - -
বোরাক্স ১০ কেজি ৪০ গ্রাম ৪০ গ্রাম - - - - -
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড ১২.৫ কেজি ৫০ গ্রাম - ৫ গ্রাম - - - -
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
আগাছা সবসময় পরিষ্কার করে সাথে সাথে মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।
খরা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। জুন-জুলাই মাস থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আর সেচের প্রয়োজন হয় না।
বাউনী দেয়া চিচিঙ্গার প্রধান পরিচর্যা। চারা ২০-২৫ সেমি উঁচু হতেই ১.০-১.৫ মিটার উঁচু মাচা তৈরি করতে হবে । বাউনী দিলে ফলন বেশী ও ফলের গুনগত মানও ভালো হয়।
ফসল সংগ্রহ ও ফলন
চারা গজানোর ৬০-৭০ দিন পর চিচিঙ্গার গাছ ফল দিতে থাকে। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১০-১৩ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুই আড়াই মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে চিচিঙ্গার হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ)
বীজ উৎপাদনে করনীয়
কৃত্রিম পরাগায়নঃ বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আশেপাশে অন্য জাতের চিচিংগার গাছ থাকলে নির্বাচিত গাছের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটার আগে (সকাল ৯ঃ০০ ঘটিকা থেকে দুপুর ২ঃ০০ ঘটিকার মধ্যে) পেপার ব্যাগ দ্ধারা বেধেঁ নিতে হবে। অতঃপর ফুল ফোটার পর কৃত্রিম পরাগায়ণ করতে হবে এবং পরাগায়ণ শেষে স্ত্রী ফুলটি আবার ব্যাগিং করে রাখতে হবে। ৩-৪ দিন পর ব্যাগ খুলে ফেলা যাবে। কৃত্রিম পরাগায়ণ অবশ্যই সকাল ৬ঃ০০ ঘটিকা থেকে ৯ঃ০০ ঘটিকার মধ্যেই সমাপ্ত করতে হবে।
সূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস
0 Comments