সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

প্রাগৈতিহাসিক ফসল বাজরার চাষ পদ্ধতি

খরা ও বন্যা সহনশীল ফসল বাজরা
ভারতে প্রচুর বাজরা চাষ হয়

বাজরা বা ইংরজিতে pearl millet, ভারত ও আফ্রিকায় প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ব্যাপকভাবে চাষ হয়। এসব অঞ্চলে এটি একটি জনপ্রিয় ফসল। বাজরা খরা ও বন্যা দুটোই সহ্য করতে পারে। এটি মূলত ঘাষ জাতীয় উদ্ভিদ। বিনাযত্নে এমনকি চাষ ছাড়াই বাজরা চাষ করা যায়। তবে ভালো ফলন পেতে হলে চাষ দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সার ও সময়মতো সেচ দিতে হয়। নিচে বাজরা চাষের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।

জমি তৈরি
বাজরার জন্য ভালো বীজতলা তৈরি করা প্রয়োজন। বাজরার বীজ খুব ছোট, একারণে খেয়াল রাখতে হবে বীজতলার মাটি যেন ঢেলাযুক্ত না হয়। এতে বীজ গজানোতে সমস্যা হবে। দুই থেকে তিনবার লাঙ্গল দেওয়া দরকার। চাষ কমপক্ষে ১৫ সেমির গভীর হলে ভালো। বাজরা চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। জমিতে কোনোভাবেই যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বীজতলার মাটিতে বীজ গজানোর মতো যথেষ্ট রস থাকা দরকার।

বীজ এবং চাষ
১ হেক্টরের জন্য ৫ কেজি বীজ যথেষ্ট।  প্রতিটি সারির মধ্যবর্তী দূরত্ব ৪৫ সেমি এবং প্রতিটি গাছের মধ্যেবর্তী দূরত্ব ১০ থেকে ১২ সেমি হওয়া ভালো। বীজ ২-৩ সেমি গভীরতায় বপন করতে হবে। বাজরার চাষ সাধারণত বীজ ছিটিয়ে চাষ হয়। এই পদ্ধতি কার্যকর না হয় তাহলে আলুর মতো করে বপন করতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে এবং ভালো অঙ্কুরোদ্গম হবে।

সময়
বাজরার ভালো ফলন পেতে পানি সেচ দরকার। কাছাকাছি সেচের ব্যবস্থা আছে এমন জমিতে বাজরা চাষ করুন। প্রধানত জুন-জুলাই মাসে (জৈষ্ঠ্য-আষাঢ়) বাজরা চাষ করা হয়। বাজরা সময় মতো না চাষ করতে না পারলে পুনঃরোপন করেও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। কারণ পুনঃরোপিত ফসলের চারা বিরূপ আবহাওয়ার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক  থাকে।

পুনঃরোপন
২০০ বর্গমিটার জমিতে ২ কেজি বীজ বুনলে এক হেক্টর জমিতে চাষে প্রয়োজনীয় বাজরা চারা পাওয়া যায়। চাষ করা সমান জমিতে বীজ বুনতে হবে। ১০ সেমি দূরত্বে এবং ১.৫ সেমি গভীরতায় বীজ বুনতে হবে।  তিন সপ্তাহ পর চারা তুলে পুনরায় রোপন করতে হবে। এটা হলো পুনঃরোপনের জন্য প্রস্তুত করা চারা।

যখন চারা তোলা হয় তখন মাটি ভিজে থাকা প্রয়োজন যাতে শিকড়ে কোনো আঘাত না লাগে। পুনঃরোপনের সময় প্রতি থরাং একটি করে চারা লাগাতে হবে। প্রতিটি সারির দূরত্ব হবে ৫০ সেমি এবং প্রতিটি চারার মধ্যে দূরত্ব হবে ১০ সেমি।

সেচ ব্যবস্থা
বাজরা বৃষ্টির পানিতে হওয়া ফসল। যথেষ্ট বৃষ্টি হলে সেচ প্রয়োজন হয় না। তবে খরা হলে দুটো সেচের প্রয়োজন হয়।
বাজরা জলমগ্নতা সহ্য করতে পারে না। পানি জমতে দ্রুত বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আগাছা দমন
চাষের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহ পর নিড়ানি দিতে হবে। ফুল আসার আগে পর্যন্ত ২-৩ বার নিড়ানি দিতে হয়অ

ফসল তোলা
প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ২০% আর্দ্রতা থাকে। অর্থাৎ গাছ প্রায় মরে শুকিয়ে মনে যাওয়ার অবস্থা হয়। খড় রঙের শস্য দেখা যায়। পুরো গাছ কেটে ফসল সংগ্রহ করা হয়। অথবা ইয়ার হেড (শীষ) প্রথমে তোলা হয় এবং বাকি গাছ পরে কেটে ফেলা হয়।  থ্রেশার বা মাড়াই মেশিন দিয়ে ইয়ারহেড থেকে দানা বের করা হয় এবং এরপর বাতাসের বিপরীতে ধরে বা কুলা দিয়ে হাকিয়ে অথবা ফ্যানের বাতাসে খোসা উড়ানো হয়।

ফসল তোলার পরবর্তী ব্যবস্থা
শস্যকে রোদে শুকানো হয়, সংরক্ষণের জন্য আর্দ্রতা কমিয়ে ১২-১৪% করে নেয়া হয়। সংরক্ষণ করা হয় মাটির পাত্রে। এর খড় উৎকৃষ্টমানের পশুখাদ্য বা হে। শুকিয়ে যত্ন করে রেখে দিলে শীতকাল পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

Post a Comment

0 Comments