সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

স্বাদে গুণে ভরা করলার চাষ পদ্ধতি

করলার বহু গুণ
বাড়ির আঙ্গিনায় করলার মাচা
করলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। করলার তেতো স্বাদের কারণে অনেকে খেতে অপছন্দ করেন। তবে এ সবজিটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। ১০০ গ্রাম ভক্ষণ যোগ্য করলায় ১.৫-২.০ ভাগ আমিষ, ২০-২৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৮-২.০ মিলিগ্রাম লৌহ এবং ৮৮.৯৬ মিলিগ্রাম খাদ্যপ্রাণ সি আছে।  নিয়মিত তিতা করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে নানা রকমের রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় প্রচুর পুষ্টি উপাদান যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। রক্তের সমস্যা দূর করে।

সকালে করলার রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে রক্তের দূষিত উপাদান দূর হয়ে যায়। একই সঙ্গে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। করলায় আরো রয়েছে এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ। এটি এনজাইম বৃদ্ধি করে শরীরের কোষগুলোর চিনি গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী। এর রস শরীরের কোষের ভেতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের চিনির পরিমাণ কমে যায়। করলায় আছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ। তাই চোখের সমস্যা থাকলে নিয়মিত করলা খেতে পারেন। যারা নিয়মিত করলা খান, তাঁদের সর্দি, কাশি, মৌসুমি জ্বর ও অন্যান্য ছোটখাটো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। এটি একটি রুচিবর্ধক সবজি।

উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করলা ভাল জন্মে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে। সব রকম মাটিতেই করলার চাষ করা যেতে পারে। জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আঁশ বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল জন্মে।

জাত
বারি করলা-১
জাতটিতে গাঢ় সবুজ রংয়ের ২৫-৩০ টি ফল ধরে (গাছ প্রতি)
প্রতি ফলের গড় ওজন ১০০ গ্রাম যা লম্বায় ১৭-২০ সেমি এবং ব্যাস ৪-৫ সেমি।
চারা রোপণের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল তোলা যায়।
উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ফলন ২৫-৩০ টন পাওয়া যায়।

গজ করলা
জাতটিতে সবজ রংয়ের ১৫-২০ টি ফল ধরে (গাছ প্রতি)
প্রতি ফলের গড় ওজন ১৫০-২০০ গ্রাম যা লম্বায় ২৫-৩০ সেমি এবং ব্যাস ৬-৭ সেমি।
হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২৫ টন(১০০ ১২০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।

জীবন কাল 
মোট জীবনকাল প্রায় চার থেকে সারে চার মাস। তবে জাত ও আবহাওয়াভেদে কোন কোন সময় কম বেশী হতে পারে।

উৎপাদন মৌসুম
ফেব্র্বয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। কেউ কেউ জানুয়ারী মাসেও বীজ বুনে থাকেন কিন্তু এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্র্বত বাড়তে পারে না, ফলে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না।

বীজের হার
করলা ও উচ্ছের জন্য হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ৬-৭.৫ও ৩-৩.৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

জমি তৈরী ও বপন পদ্ধতি
উচ্ছে ও করলার বীজ সরাসরি মাদায় (৪০x৪০x৪০ সেমি) বোনা যেতে পারে। এৰেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন অথবা পলিব্যাগে উৎপাদিত ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। উচ্ছের ক্ষেত্রে সারিতে ১.০ মিটার এবং করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বের মাদা তৈরী করতে হবে। মাদা বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত: ১০ দিন আগে মাদা নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরী করে নিতে হবে।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ 

ফসল সংগ্রহ ও ফলন
চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। করলার বেলায় প্রায় ২ মাস লেগে যায়।
স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ফলন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে ও করলার হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন (৩০-৪০ কেজি/শতাংশ) এবং ২০-২৫ টন (৮০-১০০ কেজি/শতাংশ) পাওয়া যায়।

বীজের ফলনঃ সময়মত সঠিক পরিচর্যা গ্রহণ করলে হেক্টর প্রতি ৩০০-৪০০ কেজি (প্রতি শতাংশে ১.২-১.৬ কেজি) বীজ হতে পারে।

Post a Comment

0 Comments