সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

২১ ধরনের পেঁয়াজ ও নানা ব্যবহার


বাংলাদেশের মসলা ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় পেঁয়াজের। এখন প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজের চাষ হয়। স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে- তাহেরপুরী, ফরিদপুরের ভাতি, ঝিটকা, কৈলাসনগর ইত্যাদি। এছাড়া কৃষি বিভাগ কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব জাতের ফলন বেশি এবং বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। এর মধ্যে অন্যতম জাতগুলো হলো:  বারি পেঁয়াজ-১: জাতটির কন্দ অধিক ঝাঁঝযুক্ত। প্রতিটি গাছে ১০-১২টি পাতা হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ১২-১৬ টন। হেক্টর প্রতি বীজের ফলন ৬০০-৬৫০ কেজি। বারি পেঁয়াজ-১, পেঁয়াজ-২, পেঁয়াজ-৩, পেঁয়াজ-৪ ও পেঁয়াজ-৫।

বারি পেঁয়াজ ১ ও ৪ আগাম রবি মৌসুমে রোপণ করলে ফলন দ্বিগুণ হয় এবং কন্দের মানও উন্নত হয়। উদ্ভাবিত পেঁয়াজের জাত দুইটি উত্তরবঙ্গ, কুষ্টিয়া, যশোর ও ফরিদপুর অঞ্চলে ব্যবসায়িকভাবে চাষ করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পরিচিত ও জনপ্রিয় আরো অনেক ধরনের পেঁয়াজ রয়েছে। এসব  পেঁয়াজের আকার আকৃতি, রঙ, স্বাদ গন্ধ যেমন আলাদা তেমনি এসবের ব্যবহারও ভিন্ন ভিন্ন। নিচে সংক্ষেপে ২১ জাতের পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনা করা হলো:

বারমুডা পেঁয়াজ
বারমুডা পেঁয়াজ
বেশ মিষ্টি স্বাদের এ পেঁয়াজ সালাদ, ভাজা খেতে খুব মজা। এটি শ্যালট বা স্প্যানিশ পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি টবে বা ছোট একখণ্ড জমিতে চাষ করা যায়। বড় আকারের কন্দ পাওয়া যায়। চাইলে পাতা পেঁয়াজ হিসেবেও খাওয়া যায়।
বয়েলিং পেঁয়াজ
বয়েলিং পেঁয়াজ
সাদা ছোট আকারের গোলাকার পেঁয়াজ। এটি সাধারণ কচি অবস্থাতেই সংগ্রহ করা হয় এবং রান্নার কাজে আস্ত পেঁয়াজ কন্দ ব্যবহার করা হয়। এ পেঁয়াজের ঘ্রান কম। স্যুপ, স্ট্যু, ক্যাসেরল বা ক্রিমড ডিশের সঙ্গে এ পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়।
চাইভ বা চিভ
চাইভ বা চিভ
এটিকে বলে অনিয়ন চাইভ। গার্লিক চাইভও রয়েছে। তবে তাদের বৈশিষ্ট্য আলাদা মূল ঘ্রানে ও পাতার গঠনে। চাইভের ঘ্রাণ খুবই মৃদু। আলুর তরকারি, সালাদ এবং স্যুপের মসলা হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। পাতা পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবেও চাইভ ব্যবহার করা যায়।
সিপোল্লিনি পেঁয়াজ
সিপোল্লিনি পেঁয়াজ
গন্ধযুক্ত মিষ্টি পেঁয়াজ এটি। রোস্ট বা কাবাব, ক্যারামেল করা ডিশ, সালাদ, টার্টস বা পিঠা জাতীয় খাবারে এ পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়।
রূপালী খোসা বা সিলভার স্কিন পেঁয়াজ
ককটেল বা রূপালী খোসা বিশিষ্ট পেঁয়াজ
স্বাদে মিষ্টি এ পেঁয়াজের সাধারণত আচার করা হয়। মাংস, ‍রুটি, চিজ ইত্যাদির সাথে এ আচার খাওয়া হয়।
মিশরীয় পেঁয়াজ
মিশরীয় পেঁয়াজ
এটি মূলত শীতকালীন পেঁয়াজ। এর ঘ্রাণও খুব মৃদু। একটি চারা থেকে একাধিক কন্দ হতে পারে। একারণে একে ট্রি অনিয়ন বা ওয়াকিং অনিয়নও বলা হয়। আলুর তরকারি, সালাদ, ক্রিম স্যুপ, ডিম রান্না বা ভাজিতে এ পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়।
স্ক্যালিয়ন বা সবুজ পেঁয়াজ
স্ক্যালিয়ন বা সবুজ পেঁয়াজ
এটি দেশীয় পাতা পেঁয়াজের মতোই একটি জাত। এটিকে স্প্রিং অনিয়ন বা সালাদের পেঁয়াজও বলেন অনেকে। মৃদু ঘাণযুক্ত এবং একটু ঝাল এ পেঁয়াজ অনেক সময় কাঁচাই খাওয়া হয়। তবে সালাদ, স্যান্ডউইচ, ওমলেট, ভাজিতে ব্যবহার করা হয়। এর সবুজ পাতা এবং ছোট্ট সাদা কন্দ দুটোই ব্যবহারযোগ্য।
লিক বা পলাণ্ডু
লিক
এ পেঁয়াজকে পলাণ্ডু নামে অনেকে চেনে। এটির কন্দ হয় না, পাতাগুলো রসুনের পাতার মতো। সারা বছর চাষ করা যায়। মৃদু ঘ্রাণযুক্ত এ পেঁয়াজের প্রধান ব্যবহার স্যুপ, ভাজির সঙ্গে অথবা কাঁচা খাওয়া হয়। তবে এ পেঁয়াজের পাতা খাওয়া যায় না।
মাওয়ি পেঁয়াজ
মাওয়ি পেঁয়াজ
মিষ্টি ও রসালো এ পেঁয়াজে সালফারের পরিমাণ তুলনামূলক কম থাকে, একারণে ঝাঁঝ অনেক কম। এ পেঁয়াজের রিং চিপস, সালাদ, স্যান্ডউইচের সঙ্গে খাওয়া হয়। এটি গ্রিল করে বা মেরিনেট করেও খাওয়া হয়।
মুক্তাদানা পেঁয়াজ
মুক্তা বা বোতাম বা শিশু পেঁয়াজ
ছোট ছোট সাদা রঙের এ পেঁয়াজ মিষ্টি স্বাদযুক্ত এবং গন্ধও বেশি মৃদু। এটি আস্তই খাওয়া হয়। সাধারণত আচার, মাংসের কাবারের সঙ্গে, স্ট্যু ইত্যাদির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
পিকলিং পেঁয়াজ
পিকলিং পেঁয়াজ
এ পেঁয়াজের যেমন ঘ্রাণ তেমন ঝাঁঝ। আচার করা হয় এবং ককটেল অনিয়নের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর ব্যবহার সাধারণ পেঁয়াজের মতোই।
লাল পেঁয়াজ
লাল পেঁয়াজ
বাজারে এটিই এক সময় বোম্বাই পেঁয়াজ নামে বিক্রি হতো। এ পেঁয়াজ আকারে বেশ বড়, স্বাদে মিষ্টি এবং খুবই মৃদু ঘ্রাণ। এ কারণে এটি মানুষ কিনতে চায না। এছাড়া এ পেঁয়াজ দ্রুত পচেও যায়।  সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। এছাড়া স্যান্ডউইচ ও মাংসের কাবারের সঙ্গে এটি পরিবেশন করা হয়।
লাল বোঁটা পেঁয়াজ
লাল বোঁটা পেঁয়াজ
দেখতে অনেকটা দেশী পেঁয়াজের মতোই তবে এর ঘ্রাণ খুবই মৃদু। ঝাঁঝও কম। এ পেঁয়াজ সালাদ হিসেবে খাওয়া হ। এছাড়া স্যান্ডউইচের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
শ্যালট
শ্যালট
মৃদু ঘ্রাণের খুবই সুস্বাদু একটি পেঁয়াজ। ছোট লম্বাটে আকৃতির এ কন্দকে অনেকে পেঁয়াজ বলতে নারাজ। সুস্বাদু খাবার যেমন সস, ড্রেসিং ইত্যাদিতে এ পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। এর ফলন অনেক কম। কিন্তু সুস্বাদু হওয়ার কারণে দামও অনেক বেশি।
স্প্যানিশ পেঁয়াজ
স্প্যানিশ পেঁয়াজ
এটিও মৃদু ঘ্রাণের মিষ্টি স্বাদযুক্ত পেঁয়াজ। সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। এছাড়া বেকড খাবারের সঙ্গে এবং রিঙ চিপস হিসেবে এটি বেশ মজার। শ্যালট বা বারমুডা পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
টেক্সাস সুপার সুইট পেঁয়াজ
টেক্সাস সুপার সুইট পেঁয়াজ
খুই মৃদু ঘ্রাণ ও ঝাঁঝযুক্ত পেঁয়াজ। তবে বেশ সুস্বাদু। সালসা, স্যান্ডউইচ এবং সালাদের সঙ্গে খাওয়া হয়।
ভিদালিয়া পেঁয়াজ
ভিদালিয়া পেঁয়াজ
অসম্ভব মিষ্টি একটি পেঁয়াজ। আচার, ভাজি বা চিপস, সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়।
ওয়াল্লা ওয়াল্লা সুইট পেঁয়াজ
ওয়াল্লা ওয়াল্লা সুইট পেঁয়াজ
ঘ্রাণ ও ঝাঁঝ কমও না বেশিও না। তবে মিষ্টি স্বাদযুক্ত। এ পেঁয়াজ সালাদ, স্যান্ডউইচ, পিৎজা, পাস্তার সঙ্গে খাওয়া হয়। একেবারে কাঁচা অথবা সামান্য সিদ্ধ করে খেলে আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
ওয়েলশ পেঁয়াজ
ওয়েলশ পেঁয়াজ
সামান্য ঝাঁঝ রয়েছে। তবে এটি অনেকটা পাতা পেঁয়াজের মতোই। সাধারণ ভাজিতেই এটি ব্যবহার করা হয়।
সাদা পেঁয়াজ
সাদা পেঁয়াজ
তীব্র ঘ্রাণযুক্ত ও ঝাঁঝাল পেঁয়াজ এটি। গন্ধযুক্ত সালাদ ও সাধারণ রান্নাবান্নার কাজে এ পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। অনেকটা দেশী পেঁয়াজের মতোই।
হলুদ পেঁয়াজ
হলুদ পেঁয়াজ
ঝাঁঝাল তবে সাদা পেঁয়াজের মতো নয়। সাধারণ রান্নার কাজে মসলা হিসেবে এ পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। দেশে সাধারণ এ জাতের পেঁয়াজই চাষ হয়।

আরো পড়ুন:
পেঁয়াজের জন্ম ইতিহাস
পেঁয়াজের বিকল্প চিভ

Post a Comment

0 Comments