তিল ক্ষেত |
মাটি
পানি জমে থাকে না এমন প্রায় সব ধরনের মাটিতে তিলের চাষ করা যায়। উঁচু বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি তিল চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
জমি তৈরি
তিল চাষের জন্য মাটি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
বপনের সময়
তিল খরিফ ও রবি উভয় মৌসুমেইাচাষ করা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে অর্থাৎ ফাল্গুন-চৈত্র মাসে (মধ্য-ফেব্রুয়ারি হতে মধ্য-এপ্রিল), খরিফ-২ মৌসুমে অর্থাৎ ভাদ্র মাসে (মধ্য-আগষ্ট হতে মধ্য-নভেম্বর) তিলের বীজ বপনের উত্তম সময়।
বপন পদ্ধতি
তিলের বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে অমত্মর্বতীকালীন পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫ সেমি রাখতে হবে।
বীজের হার
প্রতি হেক্টরে ৫.৫-৬.৫ কেজি।
সারের পরিমাণ
তিলের জমিতে নিমণরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ১০০-১২৫ কেজি
টিএসপি ১৩০-১৫০ কেজি
এমপি ৪০-৪৫ কেজি
জিপসাম ১০০-১১০ কেজি
জিংক সালফেট (প্রয়োজনে) ০-৫ কেজি
বরিক এসিড (প্রয়োজনে) ৮-১০ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
ইউরিয়া সারের অর্ধেক ও বাকি সব সার জমি শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
পানি সেচ
রবি মৌসুমে চাষ করলে বীজ বোনার ২৫-৩০ দিন পর ফুল আসার সময় একবার সেচের প্রয়োজন হয়। জমিতে রস না থাকলে ৫৫-৬০ দিন পর ফল ধরার সময় আর একবার সেচ দেওয়া যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ
তিল ফসল সংগ্রহ করতে ৮৫-৯৫ দিন সময় লাগে।
অন্যান্য পরিচর্যা
তিল গাছের পাতার দাগ রোগ দমন
সারকোস্পোরা সিসেমী নামক এক প্রকার ছত্রাকের কারণে তিলের এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগের আক্রমণে প্রথমে পাতায় ছোট, গোলাকার, বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি রঙের দাগ পড়ে। দাগ বিভিন্ন আকারের হয় এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে।
প্রতিকার
১. এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে ১ গ্রাম হারে বেভিষ্টিন বা ২ গ্রাম হারে ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর জমিতে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২. পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসলের চাষ করতে হবে।
তিলের কান্ড পচা রোগ দমন
তিল গাছ কান্ড রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ম্যাক্রোফোমিনা ফাসিওলিনা নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত গাছের কান্ডে, ছোট, লম্বা, আঁকা বাঁকা বিভিন্ন ধরনের গাঢ় খয়েরি ও কালচে দাগ দেখা যায়। এ দাগ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সমস্ত কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত গাছের পাতা মরে যায়।
প্রতিকার
১. বীজ বপনের পূর্বে ভিটাভেক্স-২০০ ছত্রাকনাশক দ্বারা (২-৩ গ্রাম/কেজি বীজ) বীজ শোধনের মাধ্যমে রোগের আক্রমণ কমানো যায়।
২. এ রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ১ গ্রাম হারে ব্যাভিস্টিন বা ২ গ্রাম হারে ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. ফসল কাটার পর গাছের শিকড়, আগাছা, আবর্জনা ইত্যাদি পুড়ে ফেলতে হবে।
0 Comments