মুগ ডালের ক্ষেত |
মুগ ডালে প্রচুর পরিমানে খাদ্য শক্তি ও আমিষ আছে। ডাল হিসেবে প্রধানত খাওয়া হয়। মুড়িঘণ্ট রান্নায় এ ডালের বিকল্প নেই! দেশে অন্যান্য ডাল জাতীয় ফসলের তুলনায় মুগের আবাদ কম হওয়ার কারণে এ বাজারে এ ডালের দামও তুলনামূলক বেশি। কৃষকের বাড়তি আয়ের উৎস হতে পারে মুগ ডাল আবাদ। সংক্ষেপে মুগের চাষ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:
মাটি
বেলে দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি, মাঝারি উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি মুগ আবাদের জন্য উপযোগী।
জাত
বারি মুগ-২ (কানি-): বারি মুগের কানি- জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমের শেষ দিকেও চাষ করা যায়। রান্নার সময়কাল ১৫-১৮ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ০.৯-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।
বারি মুগ-৩ (প্রগতি): বীজ মসৃণ ও রং বাদামি সবুজ। রান্না হওয়ার সময়কাল ১৪-১৭ মিনিট। দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে বিলম্বে আবাদ করা যায়। আমিষের পরিমাণ ১৯-২১%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.০-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।
বারি মুগ-৪ (রুপসা): বীজ মসৃণ ও রং সবুজ। এ জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে বিলম্বে বপন করা যায়। জাতটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। ডাল রান্নার সময়কাল ১৫-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৪ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।
বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী): গাছের পাতা, ফল ও বীজ আকারে বেশ বড়। বীজের রং গাঢ় সবুজ। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪২ গ্রাম। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো যে ফল এক সাথে পাকে। ডাল রান্নার সময়কাল ১৭-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২২%। জাতটির জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৫টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।
বারি মুগ-৬ (রুপসা): একই সময়ে প্রায় সব শুটি পরিপক্ক হয়। পাতা ও বীজের রং গাঢ় সবুজ এবং পাতা চওড়া। ফুল আসার পরে দৈহিক বৃদ্ধি কম। দানার আকার বড়। প্রতি ১০০ বীজের ওজন ৫.১-৫.২ গ্রাম। গম কাটার পর এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ পর্যন- বপন করা যায়। এ ছাড়া খরিফ-২ ও রবি মৌসুমের শেষেও বপন করা যায়। হলুদ মোজাইক ভাইরাস এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল। জীবনকাল ৫৫-৫৮ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫০০ কেজি।
জমি তৈরি
৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও প্রয়োজনীয় মই দিয়ে মাটি ভালভাবে তৈরি করতে হবে।
বপন পদ্ধতি
ছিটিয়ে ও সারি উভয় পদ্ধতিতেই বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে।
বীজের হার
বারি-মুগ-২, বারি মুগ-৩ ও বারি মুগ-৪ এর জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি। বারি মুগ-৫ এর জন্য ৪০-৪৫ কেজি বীজের প্রয়োজন। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হবে।
বপনের সময়
এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে ফাল্গুন মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি শেষ ভাগ হতে মার্চের মধ্য-ভাগ) খরিফ-২ মৌসুমে শ্রাবণ-ভাদ্র মাস (আগস্টের প্রথম হতে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগ)। রবি মৌসুমে বরিশাল এলাকার জন্য বপনের উত্তম সময় পৌষ-মাঘ মাস (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ)।
সারের পরিমাণ
জমিতে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০-৫০ কেজি
টিএসপি ৮০-৮৫কেজি
এমপি ৩০-৩৫ কেজি
অণুজীব সার ৪-৫ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণত অণুজীব সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতিবৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া খরিফ-১ মৌসুমে বৃষ্টি না হলে সঠিক সময়ে বপনের জন্য বপনের পূর্বে বা পরে একটি সেচ প্রয়োজন। সেচ দিলে চারা গজানোর পর মালচিং করে দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
মধ্য-কার্তিক থেকে শেষ ভাগ (অক্টোবর শেষ থেকে নভেম্বর প্রথম)।
মুগের পাতার দাগ রোগ দমন
সারকোস্পোরা ক্রয়েন্টা নামক ছত্রাকত দ্বারা এ রোগ হয়। পাতায় ছোট ছোট লালচে বাদামি বর্ণের গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান্ত পাতার উপর ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বেশি আর্দ্রতা (৮০%) এবং উচ্চ তাপে (২৮* সে.) এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
১. ব্যাভিস্টিন (০.২%) নামক ছত্রাকনাশক ১২-১৫ দিন অমত্মত ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২. রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (বারি মুগ-২,৩,৪ এবং ৫ ) করতে হবে।
মুগের পাউডারি মিলডিউ রোগ দমন
ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগে পাতায় পাউডারের মত আবরণ পড়ে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
প্রতিকার
১. বিকল্প পোষক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. টিল্ট-২৫০ ইসি বা থিওভিট (০.২%) ১০-১২ দিন অমত্মর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
মুগের হলদে মোজাইক রোগ দমন
মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতার উপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে। সাধারণত কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। বিকল্প পোষক ও সাদা মাটির অধিক্য এ রোগ দ্রুত বিস্তারে সহায়ক।
প্রতিকার
১. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২. সাদা মাছি দমনের জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
৩. আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।
0 Comments