সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

মাসকলাই চাষ

মাসকলাই চাষ পদ্ধতি
মাসকলাই
অন্যান্য ডালের মধ্যে খেসারি ও মাসকলাই চাষ অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী। কৃষকরা বাড়তি ফসল হিসেবে এ দুটি ডাল চাষ করতে পারেন। মাসকলাইয়ের চাষ পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

মাটি
মাঝারি  উঁচু ও সহজের পানি নেমে যায় এমন জমি এবং বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি মাসকলাই উৎপাদনের জন্য উপযোগী।

জমি তৈরি
২-৩ টি আড়াআড়ি চাষ ও প্রয়োজনীয় মই দিয়ে মাটি ভালভাবে তৈরি করতে হবে।

বপন পদ্ধতি
ছিটিয়ে এবং সারি করে বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে। খরিফ-২ মৌসুমে ছিটিয়ে বোনা যায়।

বীজের হার
প্রতি হেক্টরে ৩৫-৪০ কেজি। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি দিতে হয়।

বপনের সময়
এলাকা ভেদে বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে, মধ্য-ফাল্গুন থেকে ৩০ শে ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারির শেষ হতে মধ্য-মার্চ) এবং খরিফ-২ মৌসুমে ১লা ভাদ্র থেকে ১৫ ই ভাদ্র (আগস্টের ১৫-৩১)। তবে মধ্য-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বপন করা যায়।

সারের পরিমাণ
অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।

সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০-৫০ কেজি
টিএসপি ৮৫-৯৫ কেজি
এমপি ৩০-৪০ কেজি
অণুজীব সার ৪-৫ কেজি

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুপারিশ মোতাবেক নির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইনোকুলাম সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয় না।

অন্তর্বর্তীকালিন পরিচর্যা
বপনের ২০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। বৃষ্টিপাতের ফলে যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ
খরিফ-১ মৌসুমে মধ্য বৈশাখ  (মে মাসের শেষ) এবং খরিফ-২ মৌসুশে মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর মাসের শেষ) মাসে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যা

মাসকলাইয়ের পাতার দাগ রোগ দমন
সারকোস্পোরা ক্রয়েন্টা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। আক্রান্ত পাতার উপর ছোট ছোট লালচে বাদামি গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান্ত অংশের কোষসমূহ শুকিয়ে যায় এবং পাতার উপর ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতাই ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির ঝাপটার মাধ্যমে এ রোগ বিসত্মার লাভ করে । শতকরা ৮০ ভাগের বেশি আর্দ্রতা ও ২৮* সে. এর বেশি তাপমাত্রায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।

প্রতিকার
১. ব্যাভিষ্টিন (০.২%) নামক ছত্রাকনাশক ১২-১৫ দিন অমত্মর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
২. রোগ প্রতিরোধী জাতের  (যেমন-বারি মাস-১,২,৩) চাষ করতে হবে।

মাসকলাইয়ের পাউডারি মিলডিউ রোগ দমন
ওইডিয়াম প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। এ রোগে পাতার উপর পৃষ্টে পাউডারের মত আবরণ পড়ে। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের অধিক প্রকোপ দেখা যায়। বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

প্রতিকার
১. বিকল্প পোষক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
২. টিল্ট বা থিওভিট (০.২%) ১০-১২ দিন অমত্মর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. এছাড়াও ফসল উৎপাদনে স্বাস্থ্যসম্মত পরিচর্যা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এতে রোগের প্রকোপ অনেক কমে যাবে।

মাসকলাইয়ের হলদে মোজাইক রোগ দমন
মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রামত্ম পাতার উপর হলদে ও গাঢ় সবুজ মিশ্র মোজাইকের মত দাগ পড়ে। দূর থেকে সমগ্র আক্রান্ত মাঠ হলদে বলে মনে হয়ে। সাধারণত কচি পাতা প্রথমে আক্রামত্ম হয়। আক্রামত্ম বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিসত্মার লাভ করে। সাদা মাছি  (হোয়াইট ফ্লাই) নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। বিকল্প পোষক ও সাদা মাছির আধিক্য এ রোগ দ্রুত বিস্তারে সহায়ক।

প্রতিকার
১. রোগ মুক্ত বীজত ব্যবহার করতে হবে।
২. হোয়াইট ফ্লাই নামক পোকা দমনের জন্য নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
৩. আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।

Post a Comment

0 Comments