সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

সহজে বিনাখরচের ফসল বার্লি বা জব চাষ পদ্ধতি

বার্লি বা জব চাষ পদ্ধতি
বার্লি বা জব

মাটি
পানি জমে না এমন  বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি বার্লি চাষের জন্য উপযুক্ত। জমিতে ‘জো’ আসার পর মাটির প্রকারভেদ ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।

বপনের সময়
মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাস (নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।

বীজের হার
বার্লি ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। ছিটিয়ে হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ১০০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সারিতে বুনলে ২ সারির মাঝে দূরতব ২০-২৫ সেমি রাখতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে ৩.৫ সেমি গভীর নালা টেনে তাতে বীজ বুনে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

আগাছা দমন
চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ৮-১০ সেমি দূরতেব একটি চারা রেখে বাকি চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।

সারের পরিমান
সাধারণত অনুর্বর জমিতে বার্লি চাষ করা হলেও সুপারিশমত সার প্রয়োগে এর ফলন বাড়ানো যায়।
বার্লির জমিতে নিমণরূপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়।

সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ১৭০-১৮৫ কেজি
টিএসপি ১১৫-১২৫ কেজি
এমপি ৭৫-৮৫ কেজি

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ কিস্তিতে বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি  বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিন পর  সেচের পর ) প্রয়োগ করতে হবে।

পানি সেচ
রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২ টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়।

ফসল সংগ্রহ
শীষ খড়ের রং এবং পাতা বাদামি হয়ে এলে বুঝা যাবে ফসল পেকেছে। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহ থেকে মধ্য সপ্তাহ (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ)।

বার্লির পাতা ঝলসানো রোগ দমন
ড্রেক্সলেরা প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগটি ঘটে। সবুজ পাতার ঈষৎ বাদামি রঙের ছোট ছোট ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এ সকল দাগ বাড়তে থাকে ও গাঢ় বাদামি থেকে কালো বর্ন ধারণ করে। দাগ একত্রিত হয়ে সমসত্ম পাতা বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং ঝলসানোর লক্ষণ দেখা যায়। ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ  রোগ বিসত্মার লাভ করে । বায়ুর অধিক আর্দ্রতা  ও ২৫ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রা এ রোগ বিসত্মারের সহায়ক।

প্রতিকার
১. গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১ মিলি ঔষধ আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

বার্লির গোড়া পচা রোগ দমন
স্কেলেরোসিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ জীবাণু প্রায় সকল ক্ষেত্রে মাটির নিকটবর্তী কান্ড ও মূলের সংযোগস্থলে আক্রমণ করে।
প্রথমে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়, পরে দাগ গাঢ় বাদামি হয়ে আক্রামত্ম স্থানের চারিদিক ঘিরে ফেলে, ফলে গাছ শুকিয়ে মরে যায়। অনেক সময় গাছের গোড়ায় ও মাটিতে সরিষার দানার মত বাদামি থেকে কালো রংয়ের স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা যায়।
রোগের জীবাণু মাটিতে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং বৃষ্টি ও সেচের পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আর্দ্রতাপূর্ণ মাটিও রোগ দ্রুত বিস্তারের জন্য সহায়ক।

প্রতিকার
১. সব সময় মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
২. ভিটাভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম) মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments