সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ছোলা বা বুট ডালের চাষ পদ্ধতি

ছোলা চাষে বেশি লাভ
ছোলা
ছোলা বা বুট আমাদের দেশে অতি প্রয়োজনীয় একটি ডাল জাতীয় শস্য। বিশেষ করে রমজানের সময় এ ডালের চাহিদা থাকে তুঙ্গে, তখন দামও থাকে আকাশ ছোঁয়া। এ ডাল ঘরে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে কৃষক নিশ্চিত লাভ পেতে পারেন। ছোলার চাষ পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

মাটি
দোআঁশ ও এটেল মাটিতে ছোলা ভাল জন্মে।

জমি তৈরি
৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরি করতে হবে।

বপন পদ্ধতি
ছিটিয়ে ও সারি করে বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেমি রাখতে হবে।

বীজের হার
বীজের হার ৪৫-৫০ কেজি/হেক্টর, ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ কিছু বেশি অর্থাৎ ৫০-৬০ কেজি/হেক্টর দিতে হয়।

বপন সময়
অগ্রহায়ণ মাসের ৫ থেকে ২৫ (২০ নভেম্বর-১০ডিসেম্বর)। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ (অক্টোবর শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ) সময়ে বীজ বপন করতে হবে।

সারের পরিমাণ
জমিতে শেষ চাষের সময় হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০-৫০ কেজি
টিএসপি ৮০-৯০ কেজি
এমপি ৩০-৪০ কেজি
বরিক এসিড ১০-১২ কেজি
অণুজীব সার ৫-৬ কেজি

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুপারিশ মত নির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম হারে অণুজীব সার প্রয়োগ করতে হবে। ইনোকুলাম সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
বপনের ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতি বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সে জন্য অতিরিক্ত পানি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে বপনের পর হাল্কা সেচ দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহ
চৈত্রের প্রথম সপ্তাহ থেকে মধ্য- চৈত্র (মধ্য- মার্চের শেষ) সমফেসল সংগ্রহ করতে হবে।

অন্যান্য পরিচর্যা
ছোলার উইল্ট বা নুইয়ে পড়া রোগ দমন
ফিউজেরিয়াম অক্সিসপোরাম নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। চারা অবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত গাছ মারা যায় এব পাতার রংয়ের কোন পরিবর্তন হয় না। পরিপূর্ণ বয়সে গাছ আক্রান্ত হলে পাতা ক্রমান্বয়ে হলদে রং ধারণ করে।  আক্রান্ত গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। লম্বালম্বিভাবে কাটলে কান্ডের মাখখানের অংশ কালো দেখা যায়।

প্রতিকার
১. রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন বারি ছোলা-৩ এবং বারি ছোলা-৪ এর চাষ করতে হবে।
২. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।

ছোলার গোড়া পচা রোগ দমন
স্কেলেরোসিয়াম রফফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। চারা গাছে এ রোগ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ হলদে হয়ে যায় এবং শিকড় ও কান্ডের সংযোগ স্থলে গাছের গোড়ায় ছত্রাকের জালিকা ও সরিষার দানার মত স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা যায়।

প্রতিকার
১. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
৩. ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন  করতে হবে।

ছোলার বট্রাইটিস গ্রে মোল্ড রোগ দমন
বট্রাইটিস প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগ ঘটে থাকে। ছোলার বৃদ্ধি অবস্থায় কিংবা ফল আসার শুরম্নতেই এ রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। জমিতে গাছ বেশি ঘন থাকলে এবং বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে এ রোগ ব্যাপকতা লাভ করে। এ রোগের লক্ষণ কান্ড, পাতা, ফুল ও ফলে প্রকাশ পায়। আক্রান্ত স্থানে ধূসর রংয়ের ছত্রাকের উপস্থিতি দেখা যায়।

প্রতিকার
১. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. ব্যাভিস্টিন অথবা থিরাম প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
৩. ব্যাভিস্টিন ০.২% হারে ১০-১২ দিন অমত্মর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

ছোলার পড বোরার দমন
পোকার কীড়া (শুককীট) কচি পাতা, ফুল ও ডগা খায়। ফল বড় হওয়ার সময় ছিদ্র করে ভিতরের নরম অংশ খায়। একটি কীড়া পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পূর্বে ৩০-৪০ টি ফল খেয়ে ফেলতে পারে। এ রোগে ছোলার উৎপাদন অনেক হ্রাস পায়।

প্রতিকার
১. কীড়া ছোট অবস্থায় হাত দ্বারা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।
২. ডিসিস ২.৫ ইসি বা রিপকর্ড ১০ ইসি বা সিমবুস ১০ ইসি বা ফেনম ১০ ইসি ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন অমত্মর ১-২ বার স্প্রে করতে হবে।

Post a Comment

0 Comments