সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

তুলা চাষ পদ্ধতি: তুলা চাষে কম বিনিয়োগে লাভবান হওয়ার কৌশল

কার্পাস তুলা চাষ, সার প্রয়োগ ও রোগ দমন
কার্পাস তুলা

প্রশ্নোত্তরে তুলা চাষ ও তুলার সঙ্গে অন্যান্য সাথী ফসল চাষ পদ্ধতি:

প্রশ্ন: ১।   কি ধরণের জমি তুলা চাষের জন্য উপযোগী?
উঁচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি বা বর্ষার পানি জমে থাকে নাএরুপ জমি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। ছায়াযুক্ত স্যাঁতস্যাতে জমি তুলা চাষেরজন্য উপযুক্ত নয়।

প্রশ্ন: ২।   সব ধরণের মাটি তুলা চাষের উপযোগী কিনা ?
তুলা চাষের জন্য উৎকৃষ্ট মাটি হচ্ছে বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশপ্রকৃতির মাটি। এছাড়াও এটেল দো-আঁশ ও পলিযুক্ত এটেল দো-আঁশ মাটিতে তুলা চাষকরা যায়। অতি অন বা অতি ক্ষার উভয় প্রকার মাটি তুলা চাষের জন্য অনুপোযোগী।মাঝারি লবণাক্ততা সম্পন্ন উঁচু জমিতেও তুলা চাষ করা যায়।

প্রশ্ন: ৩।  আচ্ছা, অন ও ক্ষার, মাটি বলতে কি বুঝায়, বুঝিয়ে বলুন ?
মাটির নির্দিষ্ট পিএইচ মান থাকে। যে মাটির পিএইচ মান ৬ এরনিচে তাকে অমস্ন মাটি বলে এবং যে মাটির পিএইচ মান ৭ এর উপরে তাকে ক্ষারমাটি বলে। ৬-৭.৫ পিএইচ মানসম্পন্ন মাটি হলো নিরপেক্ষ মাটি। তুলা চাষের জন্যমাটির পিএইচ মান ৬-৭.৫ থাকা ভাল।  তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টকর্মকর্তার সহায়তায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন অফিসের মাধ্যমে মাটির পিএইচমানজেনে নিয়ে তুলা চাষাবাদ করা ভাল।

প্রশ্ন: ৪।  অনুর্বর পতিত জমিতেও কি তুলা চাষ করা যাবে ?
হ্যাঁ, আপনার সবচেয়ে অনুর্বর জমিতেও তুলা চাষ করে সন্তোষজনকফলন পাওযা সম্ভব। তুলা চাষ করলে আপনার জমির মাটিতে প্রাকৃতিক উপায়ে তুলারপাতা পড়ে জৈব সার যোগ হবে, সাথে সাথে তুলার শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করেমাটির নিচের সারের পানি ও খাবার সংগ্রহ করতে পারে। তাই উঁচু অনুর্বর পতিতজমিতে তুলার মত গভীরমূলী  ফসল চাষ করা যায়।

প্রশ্ন: ৫। দেশের কোন কোন এলাকায়/অঞ্চলে তুলা চাষ বেশি হচ্ছে ?
বর্তমানে ৪টি অঞ্চলে তুলার চাষ হচ্ছে। এ অঞ্চলগুলো হলো-যশোর, রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম। যশোর ও রংপুর অঞ্চলের অধীনস্থ যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর ও রাজশাহী এলাকায সবচেয়ে বেশি তুলাহয়।

প্রশ্ন: ৬। আমাদের দেশে কি ধরণের তুলা চাষ হয় ?
আমাদের দেশে দুই ধরনের তুলার চাষ হয়। দেশের সমতল ভূমিতেআমেরিকান আপল্যান্ড জাতীয় তুলাচাষ করা হয়। এ তুলার আশঁ মাঝারী লম্বা এবংবসকলে ব্যবহার উপযোগী। পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলের ৩টি জেলাতে পাহাড়িতুলার চাষ হয়।

প্রশ্ন: ৭। পাহাড়ি তুলার আশঁ কি ধরণের এবং ইহা কি কাজে ব্যবহ্রত হয় ?
পাহাড়ি তুলার আশঁ মোটা, খাটো ও কিছুটা খসখসে বিধায় আধুনিকবসকলে কাপড় তৈরীতে ব্যবহার যায় না। এ তুলা উলের সাথে মিশিয়ে কম্বল এবংপশমী কাপড় তৈরীতে ব্যবহ্রত হয়। তাই বিদেশে এ তুলার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।উপজাতীয়রা তাদের নিজস্ব কাপড় তৈরীতে এ তুলা ব্যবহার করে।& উপজাতীয়দেরধর্মীয় উৎসব কঠিন চিবর দান অনুষ্ঠানে এ তুলা দিয়ে তৈরী পোষাক ধর্মীয় গুরুকেউপহার দেয়া হয়।

প্রশ্ন: ৮। তুলা বীজ বপনের উপযুক্ত সময় কখন ?
জাত ভেদে তুলার বীজ ১ আষাঢ় থেকে ১৫ শ্রাবন পর্যন্ত (১৫ জুনথেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত)  বপনের  উপযুক্ত সময়। তবে ৩০ শ্রাবন অর্থাৎ ১৫আগষ্ট পর্যন্ত বীজ বপন করা যেতে পারে। হাইব্রিড জাত আগাম বপন করা উত্তমউপযুক্ত সময়ে বীজ বপন করা হলে রিলে ফসল হিসেবে বা তুলা উঠিয়ে ঐ জমিতে সহজেইবোরো ধান, আলু, গম, ভূট্টা ও সবজির মতো উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ করা যায়।

প্রশ্ন: ৯। তুলা চাষের জন্য জমি কিভাবে তৈরী করে নিতে হবে ?
জমি চাষ দেবার আগেই বিঘা প্রতি ১.০-১.৫ টন গোবর/কম্পোষ্ট সারজমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। আষাঢ় মাসে প্রায়ই বৃষ্টিপাত হয় তাই বৃষ্টির ফাঁকেমাটির ‌জো  আসামাত্রই প্রথম সুযোগে জমি চাষ করতে হবে। অবস্থা বুঝে ৩-৪টিচাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এসাথে বিভিন্ন আবর্জনা ওআগাছা উত্তমরূপে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
         
প্রশ্ন: ১০। মাঠ পর্যায়ে কি কি জাতের সমভূমির তুলার আবাদ হচ্ছে ?
বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলারজন্য সিবি -৯ , সিবি-১০ ও সিবি-১২ জাতের তুলা এবং  বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়াজেলার জন্য সিবি-৫, সিবি-৯, সিবি-১০,সিবি-১১ ও সিবি-১২  জাতের তুলার আবাদহচ্ছে ।

প্রশ্ন: ১১। তুলা চাষের জন্য ভাল/ উন্নত মানের বীজ কোথায় পাওয়া যাবে ?
তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর খামারসমূহে এবং চুক্তিবদ্ধচাষীদের মাধ্যমে উন্নতমানের বীজতুলা উৎপাদন করে থাকে যা পরবর্তী মৌসুমেসাধারণ চাষীদের মধ্যে বিতরণ করে থাকে। আপনি ভর্তুকি মূল্যে ১ বিঘা জমিরজন্য ৩০-৪০ টাকা ব্যয়ে আপনার নিকটস্থ তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ইউনিট অফিসসমূহেরমাঠকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে মানসম্পন্ন তুলা বীজ সংগ্রহ করতে পারেন।

প্রশ্ন: ১২। প্রতি বিঘা জমিতে তুলা চাষের জন্য কি পরিমান বীজ লাগবে?
তুলা উন্নয়ন বোর্ডেরনিজস্ব  উফশী ওপি জাতের ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ১.০ কেজি এবং হাইব্রিড এরক্ষেত্রে ৫০০-৬০০ গ্রাম তুলা বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের পূর্বে তুলাবীজ৩-৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে শুকনো মাটি বা ছাই দিয়ে ঘষে নেয়া উত্তম। মনে রাখতেহবে উচ্চ ফলনের জন্য বিঘা প্রতি কমপক্ষে ৩ হাজার গাছ থাকা আবশ্যক।

প্রশ্ন: ১৩। অতিবৃষ্টির কারণে জমি চাষ করতে না পারলে তুলা বীজ বপনের ভিন্ন ব্যবস্থা আছে কি ?
প্রতিকূল পরিবেশের কারণে জমি চাষ করতে না পারলে সময় নষ্ট না করেবিনা চাষে ডিবলিং পদ্ধতিতে তুলা বীজ বপন করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। পরে জোআসলে দুই সারির মাঝে কোদাল দিয়ে মাটি ঝুর ঝুর করে দিতে হবে।

প্রশ্ন: ১৪। ১ বিঘা জমিতে তুলা চাষের জন্য কি পরিমান সারের প্রয়োজন হয় ?

সারের নাম        সারের পরিমাণ (কেজি/বিঘা)
ইউরিয়া               ২৫-৩০
সলুবর বোরণ       ২.৫-৩
টিএসপি/ডিএপি       ২৫-৩০
জিংক               ২.৫-৩
এমওপি               ৩০-৩৩
ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ২.৫-৩
জিপসাম       ১৪-১৬
গোবর/আবর্জনা পচাঁ সার ৬০০-৮০০

প্রশ্ন: ১৫। তুলা বীজ বপনের পূর্বে জমিতে কি কি সার প্রয়োগ করতে হবে ?
তুলার জমি তৈরীর সময় বিঘাপ্রতি জমিতে ১.৫-২.৫ কেজি ইউরিয়া, ১০-১২ কেজি টিএসপি, ৩-৪ কেজি এমওপি ৪-৫ জিপসাম এবং ১-১.৫কেজি হারে সলুবরবোরণ, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ৬০০-৮০০ কেজিগোবর/আবর্জনা/পচাঁ সার প্রয়োগ করতে হবে।

প্রশ্ন: ১৬। তুলাবীজ বপন পদ্ধতি সম্বন্ধে বিস্তারিত বলুন ?
তুলা বীজ সারিতে বপন করতে হয়। সারি উত্তর-দক্ষিণ বরাবরলম্বা-লম্বি করে তৈরী করতে হবে। উপযুক্ত সময়ে বীজ বপন করা হলে সব জাতেরক্ষেত্রেই সারি থেকে সারি ৯০ সেঃমিঃ (৩ ফুট বা ২ হাত) এবং গাছ থেকে গাছেরদূরত্ব ৪৫ সেঃমিঃ (১.৫ ফুট বা ১ হাত) বজায় রেখে বীজ বপন করতে হবে। সারিবরাবর মাটি উঁচু করে তার উপর বীজ বপন করা উত্তম কারণ এতে জমি থেকে পানিনিষ্কাশন সহজ হয়, চারা গাছ জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পায়। ফলে চারা গাছেরবৃদ্ধি ভাল হয়। সারির উপর নির্দিষ্ট দূরত্বে আধা ইঞ্চি গভীরে ২-৩ টি বীজসামান্য মাটির দ্বারা হাল্কা ভাবে ঢেকে দিতে হবে। বীজ মাটির দ্বারা শক্তকরে ঢেকে দিলে অথবা গর্ত করে বেশী গভীরে বীজ দিলে চারা গজাতে অসুবিধা হতেপারে।

প্রশ্ন: ১৭। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে নাইট্রোজেন ও পটাশ সার প্রয়োগ কি পরিমানে প্রয়োগ করতে হবে বুঝিয়ে বলুন ?
পটাশ ও নাইট্রোজেন সার কিস্তিতে প্রয়োগ করলে তুলার ভাল ফলনপাওয়া যায়। প্রথম বার চারার বয়স ২০-২৫ দিন হলে বিঘাপ্রতি ২.৫-৩ কেজি ইউরিয়াএবং ৫-৬ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। এরুপে ৪০-৫০ দিন বয়সে এবং ৬০-৭০দিন পর একই হারে ৭.৫-৯ কেজি ইউরিয়া এবং ৯-১০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতেপারেন।

প্রশ্ন: ১৮। তুলার চারা গজোনোর পর কি ধরণের পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে ?
* তুলার বীজ বপনের পর যে সব হিলে (গর্তে/মাদায়) চারা গজায় নাই সে সকল গর্তে পুনরায় বীজ বপন করে    শূন্যাস্থান পূরণ করতে হবে।
* তুলার চারা গজোনোর পর চারা পাতলা করা ও আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে ।
* গোড়া মাটি দ্বারা বেঁধে দেয়া দিতে হবে।
* সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে
* অঙ্গ ছাটাই ও ডগা কর্তন করে দিতে হবে।
* রগিং বা অবাঞ্চিত জাতের গাছ তুলে ফেলতে হরে।
           
প্রশ্ন: ১৯। কি নিয়মে ও কখন চারা পাতলা ও আগাছা পরিস্কার করতে হবে বুঝিয়ে বলুন ?
চারা গজানোর ১০ দিনের মাথায় প্রতি মাদায় ২টি এবং ২০ দিনেরমধ্যে প্রতি মাদায় ১টি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকী চারা তুলে ফেলতে হবে ।চারা পাতলা করনের সময় হাত/কাঁচি/কোদাল দ্বারা আগাছা দমন করতে হবে। গাছেপুরোদমে ফুল না আসা পর্যমত্ম অর্থাৎ বপনের ৬০-৭০ দিন পর্যমত্ম জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। আগাছানাশক ব্যবহার করেও আগাছা দমন করা যেতে পারে, তবেআগাছানাশক নির্বাচন এবং এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: ২০। চারার শূন্যস্থান পূরণ কিভাবে করতে হবে ?
বীজ বপনের ৭-৮ দিনের মধ্যে যে সব হিলে (গর্তে/মাদায়) চারাগজায় নাই সে সকল মাদায় বা তার পার্শ্বে পুনরায় বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনেরসময় জমির কিনারায় কিছু অতিরিক্ত বীজ বপন করে বাড়তি চারা উৎপাদন করলেপরবর্তীতে উক্ত চারা দ্বারা সহজেই গ্যাপ ফিলিং করা যায়। চারা উঠিয়ে গ্যাপফিলিং বৃষ্টি বা মেঘলা দিনে করা উত্তম।

প্রশ্ন: ২১। কখন/ কিভাবে গাছের গোড়া মাটি দিয়ে বেধে দিতে হবে ?
বীজ বপনের ৪০ দিন পর ১ম বার অর্থাৎ ২য় ইউরিয়া সারের পার্শ্বপ্রয়োগের সময় এবং আবার বীজ বপনের ৬০      দিন পর ২য় বার অর্থাৎ ৩য়ইউরিয়া সারের পার্শ্ব প্রয়োগের সময় গাছের গোড়া মাটি দিয়ে ভাল করে বেঁধেদিতে    হবে। কোদাল দ্বারা দুহসারির মাঝের মাটি টেনে গাছের গোড়া বাঁধারকাজটি করা যেতে পারে। ফলে গাছ সহজে ঢলে পড়বে না এবং জমি থেকে পানি নিষ্কাশনও মাটিতে পরিমিত রস ধরে রাখা সহজ হবে।

প্রশ্ন: ২২। তুলা চাষের জন্য পানি সেচের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন ?
তুলা চাষের জন্য বার্ষিক প্রায় ৭০০-১৩০০ মি: মি: বৃষ্টিপাতেরপ্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত প্রায়১৩০০-২০০০ মি: মি: অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়েও বেশি। এই বৃষ্টিপাতের বন্টনওসঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে সংঘঠিত হয় না বলে কোন কোন সময় বিশেষ করে নাবীবপনকৃত(ভাদ্রমাস) ফসলে কার্তিক মাসে বৃষ্টি না হলে ঐ সময়ে ১/২টি হাল্কাসেচের প্রয়োজন হতে পারে। তুলার জমিতে বোল ফাঁটা শুরু করা পর্যাপ্ত যাতে পরিমিত রস থাকে তানিশ্চিত করা দরকার। সাধারনত গাছের বয়স ৫ মাস হলে আর সেচ দেয়া উচিত নয়, এতেফসল নাবী হওয়ার আশংকা থেকে মুক্ত থাকবে।

প্রশ্ন: ২৩। তুলা গাছের অঙ্গ ছাটাই ও ডগা কর্তন কেন করা হয় ?
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেখা যায় যে, তুলা গাছের গোড়ার দিকে১-২টি অংগজ শাখা কেটে দিলে গাছের উপরাংশের ফলধারী শাখা-প্রশাখার বিকাশ ওবৃদ্ধি ভাল ঘটে। আলো বাতাসের চলাচল বাড়ে এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমন কম হয়ফলে ফলন বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন: ২৪। রগিং কি বুঝিয়ে বলুন ?
যে জাতের তুলাচাষ করা হয় সে জাত ভিন্ন অন্য জাতের তুলা গাছকে ‘রগ’ বা অবাঞ্চিত জাতের গাছ বলে।    অবাঞ্চিত জাতের গাছগুলোফুল ফোটার পর্বে তুলে ফেলাকে ‘রগিং’ বলে। জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য ‘রগিং’        অতি জরুরি।

প্রশ্ন: ২৫। পাট কাটার পর ঐ জমিতে তুলা চাষ করা যাবে কিনা; কিভাবে ?
যেখানে আগাম পাট চাষ হয়েছে সে সমস জমিতে পাট কাটার পর সঙ্গেসঙ্গে বিনা চাষে ‘ডিবলিং’ পদ্ধতিতে তুলাবীজ বুনে দিতে হবে। কারণ, পাটেরজমি পরিষ্কার থাকে এবং আগাছা জন্মাতে আরও ২০/২৫ দিন সময় লাগে এবং চাষ করলেবৃষ্টি হয়ে কাদা হয়ে যায় ফলে বীজ বপন অনুপযোগী হবে। তাই ডিবলিং পদ্ধতিতেবীজ বপন করলে চারা গজাতে অসুবিধা নেই। চারা গজানোর সাথে সাথে (৭-১০ দিন)চারার আশেপাশে নিড়ানী দিয়ে মাটি আলগা করে দিতে হবে। পরে আগাছা উঠা শুরু হলেকোদাল দিয়ে কুপিয়ে সহজেই আগাছা দমন করা যায় এবং মাটি ঝুরঝুরে করা যায়।

প্রশ্ন: ২৬। তুলার সাথী ফসলের চাষ ও গুরুত্ব সমর্ঙকে বুঝিয়ে বলুন?
এক খণ্ড জমিতে একই সাথে কোন প্রধান ফসলের পাশাপাশিস্বল্পসময়ের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে দুই বা ততোধিক ফসল চাষের পদ্ধতিকে সাথীফসল চাষ বলা হয় । তুলার সাথে সাথী ফসল চাষের প্রধান উদ্দেশ্য হলো একই সাথেএকই জমিতে একাধিক ফসল আবাদ করে অধিক মুনাফা অর্জন করা।

সাথী ফসল চাষের উপকারিতা
(১) একক ফসলের চেয়ে আন্ত:ফসল চাষ করে মোট উৎপাদন বেশী পাওয়া যাবে এবং মোট আয় বৃদ্ধি পায়।
(২) আন্ত:ফসল চাষে জায়গা ও সময়ের সদ্ব্যবহার করা যায়।
(৩) কোন কারণে একটি ফসল নষ্ট হলে অন্যটি দ্বারা ক্ষতিপূরণ সম্ভব।
(৪) এতে প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার হয়।
(৫) ভূমি ক্ষয় ও আগাছার প্রকোপ কম হয়।

প্রশ্ন: ২৭। তুলার সাথী ফসল নির্বাচনে কিকি বিষয় বিবেচনা করতে হবে?
সঠিক সাথী ফসল নির্বাচন যেমন একজন চাষিকে অত্যন্ত লাভবান করতে পারে, তেমনি ভুল ফসল নির্বাচনের ক্ষেত্রে চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই সাথী ফসল নির্বাচনে নিম্নোক্ত বিষয়াবলী মনে রাখতে হবে:-

(ক) সাথী ফসলের বৃদ্ধি ও পরিপক্কতার সময় মূল ফসলের বৃদ্ধি পরিপক্কতার সময়ে ভিন্নতা থাকবে।
(খ) সাথী ফসল যেন তুলার সাথে আলো, বাতাস, পানি, খাদ্যোপাদান এবং জায়গা নিয়ে কোন প্রতিযোগিতা না করে।
(গ) সাথী ফসলের ক্ষতিকর প্রভাব যেন তুলার ওপর না পড়ে।
(ঘ) সাথী ফসলের পরিচর্যা পদ্ধতি যেন তুলার পরিচর্যার সাথে মিল থাকে।
(ঙ) সাথী ফসলের পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই যেন তুলা ফসলকে আক্রমণ না করে।
(চ) তুলা গাছকে পেঁচিয়ে আরোহণ করতে পারে এমন সাথী ফসল অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না।         

প্রশ্ন: ২৮। তুলার সাথে শাক-সব্জি চাষ কিভাবে করা যায় এর পদ্ধতি সমঙর্কে বুঝিয়ে বলুন ?
তুলা বপনের পর দু’সারির মাঝে স্বল্পমেয়াদী শাকসব্জি শ্রাবণমাসে ছিটিয়ে বপন করতে হয়। সব্জি চারা গজানোর ৭-৮ দিন পর বিঘা প্রতি ৫-৮কেজি ইউরিয়া সার ছিটাতে হয়। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সব্জি খাবার উপযুক্তহয় এবং নিড়ানী দেয়ার সময় তুলে ফেলতে হয়। লাল-শাক, ডাটা-শাক, মূলা-শাক, কলমী-শাক, ধনে পাতা সাথী ফসল হিসাবে চাষ করা যায়। গীমা কলমীর বেলায় দু’লাইনতুলার মাঝে দু’লাইন গীমা কলমী ১৫ সে:মি: ´ ১০ সে:মি: দূরত্ব দিয়ে লাগাতেহয়। ২০-২৫ দিনে প্রথম কলমী শাক সংগ্রহ করা যায়। সংগ্রহের পর বিঘাপ্রতি ৫-৮কেজি ইউরিয়া ছিটাতে হয়। এভাবে প্রায় তিনবার কলমী শাক সংগ্রহ করা যায়।এছাড়া, তুলার সাথে সাথী ফসল হিসাবে আরলি-৪০ জাতের মূলা, শসা, বাঁধাকপি, ফুলকপি চাষ করা যায়।

প্রশ্ন: ২৯। আউশ ধানের জমিতে তুলা চাষ  করা যায় কি?
আউশ ধান পাকতে দেরি হলে তুলার বীজ সময় মতবুনতে হলে আউশ ধান কাটার আগেই ধানের গাছ বিলি করে দু’পাশে সরিয়ে লাইন করতেহয়। এই লাইন বরাবর ডিবলিং পদ্ধতিতে তুলার বীজ বপন করতে হয়। ধান কাটার পরকোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হয় এবং প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিলেতুলার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। কুষ্টিয়া জোনের প্রাগপুর ও অন্যান্য ইউনিটেরচাষিরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করছেন।
         
প্রশ্ন: ৩০। তুলার সাথে কি কি ফসল রিলে করে চাষ করা যায় ? বুঝিয়ে বলুন।
আদা/হলুদের সাথে তুলার চাষ:শ্রাবণ মাসে দু’লাইন আদা/হলুদের মাঝে এক লাইন তুলার বীজ ৪৫ সে:মি:  ডিবলিং পদ্ধতিতে বপন করা যায়।
মরিচের সাথে তুলার চাষ:  জুলাই-আগস্ট মাসে দু’সারিমরিচের মাঝে ১ সারি তুলা ডিবলিং পদ্ধতিতে বপন করতে হয়। মরিচ গাছ মরে যেতেথাকবে এবং তুলার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। যশোরকুষ্টিয়া অঞ্চলের চাষিরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করছেন।
তুলার সাথে গমে ও ভুট্টার চাষ:নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিথেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তুলা ফসলের মাঝে গম বীজ বোনা যায়।এই সময় তুলার ২/১টি পিকিং হয়ে থাকে। বৃষ্টি হলে অথবা সেচ দিয়ে জমি ‘জো’ অবস্থা সৃষ্টির পর দু’লাইন তুলার মাঝে কোদাল দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে গমবুনতে হয়। পাশাপাশি তুলা উঠানো চলতে থাকে। এতে একই সাথে তুলা ও গমের ভালফলন পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: ৩১। তুলা গাছে কত দিনে ফুল আসে ?
সঠিক সময়ে বীজ বপন ও উপযুক্ত পরিচর্যা করলে তুলা গাছে ৪৫-৫০ দিনের কাছাকাছি সময়ে প্রথম ফুল ফোটে।

প্রশ্ন: ৩২। একটি তুলা গাছ থেকে কয়টি ফল/বোল পাওয়া যায় ?
একটি তুলা গাছে কমপক্ষে প্রায় ১৫-২৫ টি ফলধারী শাখা গজায়।প্রতিটি শাখায় ২-৭ টি কুড়ি হিসাবে একটি গাছে প্রায় ১০০ টি কুড়ি গজাতে পারে।তবে বিভিন্ন কারনে যেমন প্রতিকূল আবহাওয়ায়, পোকামাকড়ের আক্রমণ, পানি, খাদ্য ও পরিচর্যার অভাব প্রভৃতির কারনে শেষ পর্যন্ত ২০-২৫ টি পরিপক্ক বোলটিকে থাকতে দেখা যায়। যাতে হেক্টর প্রতি ১৫০০-২০০০ কেজি বীজতুলার ফলন পাওয়াযেতে পারে। প্রতিটি ধাপে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ ফলন আরও বাড়ানো যেতেপারে।

প্রশ্ন: ৩৩। তুলা সংগ্রহের পর ঐ জমিতে কি কি ফসলের চাষ করা যায় ?
তুলা চাষের পর ঐ জমিতে লাভজনক ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, মুখী কচু, পুঁই শাক, বরবটি, মুগ, তিল, আউশ ধান ও পাট প্রভৃতি আবাদকরা যায়

প্রশ্ন: ৩৪। তুলার ক্ষতিকর পোকগুলো কি কি ?
ক্ষতির ধরণ অনুসারে তুলা ফসলের অনিষ্টকারী পোকা-মাকড়কেপ্রধানত: দু’শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-  (ক) শোষক ও (খ) চর্বনকারী পোকা।

(ক) শোষক পোকা
যেসব পোকা-মাকড় গাছের কচিপাতা, ডগা, কুঁড়ি, ফুল ইত্যাদি অংশ থেকে রসশোষণ করে গাছের সমূহ ক্ষতিসাধন করে থাকে তাদেরকে শোষক পোকা বলা হয়। তুলারপ্রধান প্রধান শোষক পোকা হলো:-
জ্যাসিড , জাব পোকা, লাল গান্ধি পোকা, সাদা মাছি, থ্রিপস, লাল মাকড়সা

(খ) চর্বনকারী পোকা
এ পোকাগুলো গাছের মূল, পাতা, ফুল, কুঁড়ি চর্বন করে এবং ডগা বা বোল ছিদ্রকরে ভিতরে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন করে থাকে। এই পোকা সাধারণত: শুককীটঅবস্থায় গাছের ক্ষতি করে থাকে। এ ধরণের ক্ষতিকারক পোকাগুলো হলো:-
গুটি পোকা ,আঁচা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, ঘোড়া পোকা, কাটুই পোকা।

প্রশ্ন: ৩৫। চারা গজনোর কতদিন পর জ্যাসিড পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে ?
এ পোকা তুলা গাছের মারাত্বক ক্ষতিসাধন করে থাকে। চারা গজানোর ২-৩ সপ্তাহ পর থেকেই এই পোকার আক্রমণ শুরু হয়।

প্রশ্ন: ৩৬। জ্যাসিড পোকা দেখতে কেমন, এদের স্বভাব ও আক্রমনের লক্ষণগুলো কি কি ?
জ্যাসিড পোকা দেখতে সরু ও ছোট আকারের (২.৫ থেকে ৩.০ মি:মি:)।পূর্ণবয়স্ক পোকা সবুজাভ হলদে বর্ণের হয়ে থাকে। পূর্ণবয়স্ক পোকার পাখারপিছনের অংশে ঝকঝকে দু’টি কালো দাগ থাকে। এরা পার্শ্বে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।এদেরকে ‘‘হোপার’’ বলা হয়। এরা পাতার নিচের পৃষ্ঠে অবস্থান করে। সী জ্যাসিডপাতার শিরা, বোটা অথবা কচি ডগার গভীরে একটি গাদায় ৩০-৩৫টি ডিম পাড়ে। তবেডিম পাড়ার জন্য এরা কচি পাতা বেশি পছন্দ করে। ৬-৭ দিনের মধ্যে ডিম থেকেবাচ্চা বের হয়। জ্যাসিডের বাচ্চাকে ‘‘নিম্ফ’’ বলে। নিম্ফগুলো পূর্ণাঙ্গজ্যাসিডের মতই। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট এবং এদের কোন ডানা থাকে না। এরা হালকাসবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। নিম্ফ সাধারণত: দিনের বেলায় পাতার নিচে থাকে, সন্ধ্যার দিকে পাতার ওপরে উঠে আসে এবং সূচালো মুখের সাহায্যে পাতার রস চুষেখায়। আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য নিম্ফগুলো পূর্ণাঙ্গ হতে ৭-১৪ দিন সময় লাগে।

প্রশ্ন: ৩৭। জ্যাসিড পোকা কি অবস্থায় গাছের ক্ষতি করে এবং ক্ষতির লক্ষণগুলো কি কি ?
পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ উভয় অবস্থায় এরা ক্ষতিকারক। নিম্ফ(অপূর্ণাঙ্গ) কচি পাতার কিনার থেকে রস শোষণ করে। রস শোষণকালে তাদের লালাপাতার রসের সংগে মিশে যায়। ফলে পাতা নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়। প্রথমে ইহাহলুদ বর্ণ ধারণ করে, পরে লাল হয়ে পুড়ে যাওয়ার মত দেখা যায়। এই অবস্থাকে‘‘হোপার বার্ণ’’ বলে। এতে গাছ খর্বাকৃতি হয়। সময়মত ঐ পোকা দমন না করলেফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়, এমনকি সমগ্র ফসলও বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: ৩৮। জ্যাসিড পোকা দমনে কি ধরণের ব্যবস্থা নিতে হবে ?
১। জ্যাসিড পোকা নিয়মণে ফাঁদ ফসল ও সাথী ফসল চাষ করে উপকারী পোকা ও পাখি বসার ব্যবস্থা করতে হবে ।
২। উপকারী পোকামাকড় যেমন লেডি বার্ড বিটল এর বংশবৃদ্ধির সুযোগ দিতে হবে।
৩। নিম এর তেল স্প্রে করা যেতে পারে ।
৪। আগাম বীজ বপন করতে হবে।
৫। বপন দূরত্ব যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।
৬। কীটনাশক দ্বারা বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
৭। উপরোওু ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও পোকার আক্রমন ইটিএল (অর্থনৈতিকপ্রান্তিক সীমা) অতিক্রম করে তবে অনুমোদিত মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করতেহবে।

প্রশ্ন: ৩৯। জাব পোকা দেখতে কেমন ? এ পোকার ক্ষতির লক্ষণগুলো কি কি ?
এই পোকা আকারে ছোট। নাদুস-নুদুস, নরম শরীর বিশিষ্ট সাধারণত:ফিকে সবুজ, কালচে সবুজ, ধসর বর্ণ বা হলদে রং এর হয়ে থাকে। এরা থোকায় থোকায়কলোনী আকারে থাকতে ভালবাসে। শীতের সময় এদের কোন পাখা থাকে না, কিন্তুগ্রীষ্মে পাখা হয়। জাবপোকা জৈবিক এবং অজৈবিক উভয় পদ্ধতিতেই বংশবিস্তারেসক্ষম। তবে অজৈবিক পদ্ধতিতেই বেশি বংশ বিস্তার করে। এ পদ্ধতিকে‘‘পার্থিনোজেনেসিস’’ বলে। এর জীবনকাল সম্পর্ণ হতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। এইপোকার পেছনের দিকে দুটি সরু নল থাকে, তা হতে এক প্রকার আঠাঁল রস বের হয়। এরস মিষ্টি স্বাদের, তাই একে মধুকনা বলে। এজন্য জাবপোকা আক্রান্ত গাছে কালোপিপঁড়ার উপস্থিতি দেখা যায়। কালো পিপঁড়া একদিকে মধুকনা খায় অন্যদিকে শত্রুরহাত থেকে জাবপোকাকে রক্ষা করে।

পূর্ণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয় অবস্থায়ই তুলা গাছের কচি ডগা এবং কচি পাতার মধ্যশিরার দু’পাশে অবস্থান করে এবং শুঁড় ঢুকিয়ে পাতার রস শোষণ করে। ফলে পাতারমাঝখানের অংশটি কুঁকড়ে ক্যাপের মত দেখায়, একে পঁঢ়ঢ়রহম বলে। ডগায় আক্রমণকরলে ডগার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। এ পোকার পুচ্ছ থেকে নির্গত আঠাঁলো রস পাতা, কান্ড ও বোলে লেগে থাকে এবং এর ওপর সুটিমোল্ড নামক এক প্রকার ছত্রাকেরজম্ম হয়। এতে পাতার স্বাভাবিক কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ হয় এবং মৌসুমের শেষেরদিকে আক্রমণ করলে তুলার আঁশের অনেক ক্ষতি হয় এবং আঁশের গুণগতমান কমে যায়।

প্রশ্ন: ৪০। সাদা মাছি পোকাগুলো দেখতে কেমন এ পোকা গাছে কখন আক্রমণ করে?
এ মাছি আকারে খুবই ছোট এবং দেখতে সাদা তাই একে সাদা মাছি বলে।তুলা ছাড়াও এরা ঢেঁড়স, কুমড়া, শিম, তামাক, টমেটো ইত্যাদি ফসলে আক্রমণ ওঅবস্থান করে। সেজন্য এসব ফসলকে বিকল্প আশ্রয়দানকারী বলা হয়। এরা সাধারণত:তুলা গাছের মাঝামাঝি অবস্থানে পাতার নিচে অবস্থান করে। রাতের বেলায় পাতারনিচে থাকে কিন্তু সূর্য্য ওঠার ১ ঘন্টার মধ্যেই পাতার ওপরে চলে আসে। ডিমথেকে বাচ্চা বের হওয়ার ১২-৪৮ ঘন্টার মধ্যেই পুরুষ পোকার সংগে মিলিত হয়ে ডিমদেয়। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পুনরায় ডিম দেয়ারউপযোগী হয়। এভাবে ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যেই তাদের জীবনচক্র সম্পন্ন হয়। এজন্য এপোকার দ্রুত বংশ বৃদ্ধি হয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যেই ডিম থেকেবাচ্চা বের হয়। এদের পাখা সাদা মোমে আবৃত।

প্রশ্ন: ৪১। সাদা মাছি পোকার ক্ষতির লক্ষণগুলো কি কি ?
সাদা মাছি রস শোষণকারী পোকা। এরা পাতার ওপরে এক ধরণের মধুকনানি:সরণ করে। সেখান থেকে সুটিমোল্ড নামক এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। অনেক সময় আঁঠালো পদার্থ তুলার আঁশের সংগে মিশে গুণগতমান কমিয়ে দেয়। এদের আক্রমণে ফলনমারাত্মকভাবে কমে যায়। এ পোকা তুলার লিফ কার্ল (খবধভ পঁৎষ) রোগের বাহক বাভেক্টর হিসেবে কাজ করে। মারাত্মক আক্রমণে পাতার স্বাভাবিক কার্যক্রমদারুণভাবে ব্যহত হয়।

প্রশ্ন: ৪২। তুলা ক্ষেতে কত ধরণের বোলওয়ার্ম পোকা দেখা যায় ?
বাংলাদেশে সাধারণত: তিন ধরণের বোলওয়ার্ম বা গুটি পোকা দেখাযায়। যথা-স্পটেড বোলওয়ার্ম, আমেরিকান বোলওয়ার্ম এবং পিংক বোলওয়ার্ম ।

প্রশ্ন: ৪৩। আমেরিকান বোলওয়ার্ম পোকা গাছের কোন অবস্থায় ফসলে আক্রমন করে? ইহা দেখতে কেমন ?
এ পোকা তুলা ফসলের একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক পোকা। গাছের বয়স ৯-১০সপ্তাহ হলে অর্থাৎ গাছে ফুল ও বোল আসার পর এ পোকার ছোট কীড়া প্রথমে কচিপাতা, কচি ডগায় আক্রমণ শুরু করে। ।
 পূর্ণবয়স্ক পোকা ১৬-১৮ মি:মি: লম্বা। মথ দেখতে ধূসর বাদামী রংয়ের। এর সামনের পাখার বিভিন্ন স্থানে বড় দাগ আছে। এই পোকা তুলা মৌসুমে ৫-৭ বার বংশবিস্তার করে।

প্রশ্ন: ৪৪। আমেরিকান বোলওয়ার্ম পোকা কিভাবে বংশ বৃদ্ধি করে ?
স্ত্রী মথ কচিপাতা, স্কয়ার এবং ফুলে ৫০০-১০০০টি ডিম দেয়। এদেরডিম দেখতে সাদাটে হলুদ বর্ণের। কীড়া বিভিন্ন বর্ণের হতে পারে। যেমন- সবুজ, বাদামী, কমলা এবং লালচে। পূর্ণবয়স্ক কীড়া ৩৬-৪০ মি:মি: লম্বা হয়। কীড়াঅবস্থায় এরা ১৫-৩৫ দিন থাকে। মাটিতে বা শুকনো পাতায় পিউপ্যাশন সম্পন্ন হয়।জীবনকাল সম্পূর্ণ করতে প্রায় ২৮-৫৪ দিন সময় লাগে।

প্রশ্ন: ৪৫। বোলওয়ার্ম পোকার আক্রমনে ফসলের কি ধরণের লক্ষণ দেখা যায় ?
ক্ষুধার্ত অবস্থায় এরা গাছের পাতা পর্যন্ত খেয়ে ফেলে। এপোকার কীড়া আকারে বেশ বড় হওয়ায় এক জায়গায় স্থির থাকে না। এবং একটা বোলকুঁড়ি পুরাপুরি না খেয়েই নতুন বোল ও কুঁড়ি আক্রমণ করে। কীড়ার বয়স বাড়ারসাথে সাথে গাছের ওপরের দিক থেকে নীচের দিকে আক্রমণ করতে থাকে অর্থাৎ কীড়াখুব ছোট অবস্থায় ওপরের দিকে ছোট কঁচি কুঁড়িকে আক্রমণ করে এবং পরে বোলেআক্রমণ করে। আমেরিকান বোলওয়ার্মের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এরা আক্রমণেরসময় শরীরের অর্ধেক বোলের ভিতরে রাখে এবং বাকি অর্ধেক বোলের বাহিরে রাখে।এদের আক্রমণে সম্পূর্ণ বোল নষ্ট হয়ে যায়।

Post a Comment

0 Comments