![]() |
হাঁস-মুরগী ঝুলিয়ে বহন করা দণ্ডনীয় অপরাধ |
পশু-পাখির প্রতি মানবিক আচরণ করা মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য। কারণ আমাদের চারপাশের বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণের এসব প্রাণীর যেমন ভূমিকা আছে তেমনি তারা আমাদের অনেক উপকারও করে থাকে। এসব প্রাণী তাদের ক্ষুধা ও কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না- শুধু এটুকু বিচেনায় হলেও তাদের প্রতি আমাদের মতো বুদ্ধিমান ও শ্রেষ্ঠ জীবের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্বটিই আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাঁস-মুরগী উল্টো করে বহন ও বিক্রয় করা যাবে না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও এখনো বাজারে এভাবে হাঁস-মুরগী বিক্রি করতে দেখা যায়। গ্রামের অনেক মানুষই বাইসাইকেলে উল্টো করে ঝুলিয়ে হাঁস বা মুরগী বহন করে। এটা চরম নিষ্ঠুরতা।
৮ জুলাই, ২০১৯ সংসদে পাস হয়েছে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে প্রাণী কল্যাণ বিল-২০১৯। ১৯২০ সালের আইনটি বাতিল করে নতুন আইন করা হয়। আইনে বলা হয়েছে, মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কোনো প্রাণীকে হত্যা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল হবে। পাশাপাশি কুকুরকে চলাফেরার সুযোগ না দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বেঁধে রাখলেও তা নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে এবং একই শাস্তি হবে। যেখানে ১৯২০ সালের আইনে প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য আইনের শাস্তি ছিলো খুবই নগণ্য।
![]() |
এভাবেও মুরগী বহন করে মানুষ! |
আইন অনুযায়ী, প্রাণীকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করানো, মারধর করা, প্রয়োজনীয় খাবার না দেওয়া, বসবাসের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে না দেওয়া, বিরক্ত করা, ক্ষতিকর ওষুধ দেওয়া, আহত প্রাণীর চিকিৎসা না করা, অনুমোদন ছাড়া বিনোদনের স্বার্থে ব্যবহার করাও প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। এ বিধান লঙ্ঘন অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে বিচার ও সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া নিবন্ধন ব্যতিরেকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পোষা প্রাণী উৎপাদন ও এই উদ্দেশ্যে কোনো খামার স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না। বিলের বিধানে উল্লেখ আছে, যৌক্তিক প্রয়োজনে ভেটেরিনারিয়ান সার্জনের লিখিত পরামর্শ ও পদ্ধতি অনুযায়ী কোনো প্রাণীর অজ্ঞান বা ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
এর আগে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ, হাঁস-মুরগী উল্টো করে ঝুলিয়ে বহন ও বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ বলে রায় দিয়েছিলেন। অবশ্য সে নির্দেশনা বাস্তবায়নে আজও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অবশ্য জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা আইন, ১৯২০-এর ৪(খ) ধারায় এ কথা বলা আছে।
ওই ধারায় বলা আছে, জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতাসহ হত্যার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এখানে জীবজন্তু বলতে গৃহপালিত বা আটককৃত জন্তুকে বোঝানো হয়েছে। এই আইনে বলা আছে, ‘কোনো লোক যদি কোনো জন্তুকে এমনভাবে বাঁধিয়া রাখে, যাহাতে জন্তুটি কষ্ট পায় বা জন্তুটি যন্ত্রণা ভোগ করে। এই অপরাধের জন্য এক শত টাকা জরিমানা কিংবা অনূর্ধ্ব তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হইবে।’
0 Comments