সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

অবিশ্বাস্য উপকারী অবহেলিত ননিয়া শাক

ননিয়া, নূনে বা নোনতা শাক
ননিয়া বা নোনতা শাক

নুনিয়া বা নুন খুড়িয়া, অন্যান্য স্থানীয় নাম: বুল খুরিয়া, নূনে শাক, বুল খুরিয়া; বৈজ্ঞানিক নাম : Portulaca oleracea; পরিবার : Portulacaceae। প্রধান ব্যবহার : শাক হিসেবে খায়, ওষুধি; অন্যান্য ব্যবহার :শাক হিসেবে এবং মিশ্র সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়।  এর ওষুধিগুণও যথেষ্ঠ রয়েছে।

আখ ক্ষেত ও মিশ্র ফসলের জমিতে জন্মায়।  ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত হয়।  নুনিয়া ও নুন খুড়িয়া শাক শাক দেখতে প্রায় একই রকম। তবে নুন খুড়িয়ার পাতা নুনিয়া শাকের চাইতে একটু ছোট হয়।

কাণ্ড মসৃণ, লাল রঙ বা লালচে সবুজ, মাটিতে বিস্তৃত কাণ্ড ও ডাল পালা পর্যান্বিত পাতা গিঁটে গিঁটে এবং ডগায় সাজানো।  হলুদ রঙের ফুল ৬ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে বছরের যে কোনো সময় ফুল ফোটে।পাতা গুচ্ছের মাঝখানে একটি করে ফুল ফোটে। সূর্যের অলো বিকশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে ফুল ফোটে।ফল পাকার পরে ফেটে বীজ ঝরে পড়ে। লম্বা শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং খরার সময় টিকে থাকে।

এটি একটি বর্ষজীবী, রসাল, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।  পাতা তেলতেলে এবং রসালো।  পাতা গাঢ় সবুজ রংয়ের।  উন্নতমানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সমৃদ্ধ শাক।  এতে রয়েছে-ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, এবং ভিটামিন-সি। এত রয়েছে ওমেগা-৩ এর মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি এসিড যা হার্টের জন্য খুবই উপকারী। এতে খনিজ পদার্থের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনিসিয়াম, পটাশিয়াম এবং আয়রন। এই শাক বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়।  এছাড়া এশিয়া, ইউরোপ, মেক্সিকো এবং মধ্যপ্রাচ্যে শাক এবং সালাদ হিসেবে এই শাকের ব্যবহার রয়েছে।

এই শাক অন্যান্য শাকের সাথে মিশিয়ে ভাজি করা হয়। স্বাদ একটু লোনতা এবং টক ধরনের। এই শাকে প্রচুর পুষ্টিগুন রয়েছে।

পুষ্টিগুণ: এর পাতায় রয়েছে কার্বোঅক্সালিক এসিড, অক্সালিক এসিড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, থাইয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যারোটিনসহ অন্যান্য প্রয়েোজনীয় উপাদান।এ শাকে যথেষ্ট পরিমানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে। প্রতিগ্রামে ০.০১ মিলিগ্রাম ইকোচ্যাপেনটানিক এসিডও রয়েছে।

ওষুধি এবং অন্যান্য ব্যবহার: এ শাক যকৃৎ, স্পিলিন, কিডনি ও হৃদরোগে উপকারী। এছাড়া ডায়াবেটিস ও এ্যাজমা রোগীদের পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ননিয়া শাক অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন



উপকারিতা

> নুনে শাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনিসিয়াম যা শরীরের হাড়কে মজবুত করে। 

> নুনে শাকে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। 

> চোখ উঠলে চোখে ময়লা জমে চোখ খোঁচা খোঁচা ভাব হয়। তাহলে নুনে শাকের রস দিলে সমস্যা দূর হয়ে যায়। 

> নুনে শাকের রস কিছুক্ষণ মুখে ধরে রেখে ফেলে দিবেন এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে তোতলামি ভালে হবে। 

> বিষাক্ত কোন কিছু লেগে গা চুলকালে নুনে শাক বেটে উষ্ণ করে প্রলেপ দিলে জ্বালা ও চুলকানি ভালো হয়। 

> নুনে শাক থেঁতো করে এই রস হালকা গরম করে সেবন করলে বাচ্চাদের কাশি ভালো হয়। 

> নুনে শাক থেঁতলে রস হালকা গরম করে মধুর সাথে মিশিয়ে সকাল বিকেল সেবন করলে আমাশয় ভালো হয়। 
           

নুনেশাক দিয়ে গরুর মাংস
নুনে বা ননিতা শাক দিয়ে গরুর মাংস রান্না করলে অন্যরকম স্বাদ আসে

নুনেশাক মোটেই নোনতা না, টক-স্বাদের এই শাক দিয়ে গরুর মাংস রান্নার প্রচলন পুরান ঢাকায় বেশ পুরনো।  মাংস রান্নায় ভিন্ন স্বাদ আনে এই শাক।

গরুর মাংসের সঙ্গে নুনেশাক আদি ঢাকাইয়াদের মধ্যে কেউ খায়নি- এমন হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঢাকার অনেক ঐতিহ্যের মতো নুনেশাকের ঐতিহ্য যুগ যুগ ধরে লালন করে চলেছে ঢাকাইয়ারা।

ঢাকাই ঐতিহ্যবাহী নুনেশাক দিয়ে গরুর মাংস রান্নার রেসিপি

উপকরণ: নুনেশাক ১ কেজি। গরুর মাংস ১ কেজি (পায়ের উপরের মাংস হলে খুব ভালো হয়, দোকানে ক্যারেলির মাংস বলে চেনে। না হলে হাঁড় যুক্ত মাংস নেবেন। গরু ছাড়াও খাসি দিয়েও রান্না করা যায় তবে স্বাদ অত ভালো হবে না)। এলাচ ২টি। দারুচিনি ২ টুকরা। তেজপাতা ২টি। হলুদগুঁড়া ১ চামচ। মরিচগুঁড়া ২ চামচ। আদা ও রশুন বাটা আধা কাপ করে। পেঁয়াজ ২৫০ গ্রাম। সায়াবিন তেল ২৫০ গ্রাম। লবণ পরিমাণ মতো। কাঁচামরিচ ৮টি। লেবুর রস ১ চা-চামচ। জিরাগুঁড়া পরিমাণ মতো।

পদ্ধতি: শুরুর আগে নুনেশাক বাছতে হবে ভালো করে। তারপর একটা গামলায় নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে পাঁচ মিনিট। কয়েকবার ভালো করে শাক ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে কোনো রকম ময়লা না থাকে।

মাংস ভালো করে ধুয়ে কেটে নিন।

এবার আদা ও রশুন বাটা, পেঁয়াজকুচি, মরিচ ও হলুদ গুঁড়া, এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, লেবুর রস ও তেল ভালোভাবে মাখিয়ে হালকা আঁচে রান্না করে মাংস ছেড়ে দিন।

ভাজা ভাজা করে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার করা নুনেশাক মাংসের ওপর ঢেলে দিন।

১৫ থেকে ২০ মিনিট হালকা আঁচে রান্না করে চুলা থেকে নামানোর আগে আস্ত মরিচ দিয়ে তিন-চার মিনিটি হালকা ভাবে নেড়ে জিরার গুঁড়া ছিটিয়ে নামিয়ে নিন।

ব্যস প্রস্তুত স্পেশাল ঢাকাইয়া ব্যঞ্জন  নুনেশাক দিয়ে গরুর মাংস। এবার গরম গরম পরিবেশন করুন।  মনে রাখবেন রান্না যত বাসী বা পুরান হবে, স্বাদ ততই বাড়বে!

নুনে শাকের উপকারিতা বুঝতে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন:

Post a Comment

1 Comments