সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

দুনিয়াজুড়ে অদ্ভূত ৮ কৃষি খামার

একটি সাধারণ খামারের কথা চিন্তা করতে বললে চট করে যেসব ধরনের খামারের চিত্র মাথায় আসবে এগুলো মোটেও সেরকম কিছু নয়। এ ধরনের ব্যতিক্রম খামারের কয়েকটি হচ্ছে- জোঁকের খামার, মুক্তার খামার, মাকড়সার জাল সৃষ্টিকারী দুধ দেওয়া ছাগলের খামার ইত্যাদি। আসুন, এক ঝলকে জেনে নেওয়া যাক এমন আটটি খামারের তথ্য।

মুক্তা চাষ
pearls are farmed in places like Japan, China, Australia, and Tahiti
সমুদ্রে ঝিনুকের খামার

শরীরের ভেতর যন্ত্রণা সৃষ্টিকারী কোনো জিনিস ঢুকে পড়লে সেটির চারপাশে বিশেষ তরল ক্ষরণ করে ঝিনুক। আর এভাবেই তৈরি হয় মুক্তা। ঝিনুক সংগ্রহের জন্য আগে নদী সমুদ্র থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু এভাবে তো ব্যবসা চলে না। তাই শুরু হলো মুক্তা চাষ। এভাবে খুব দ্রুত প্রচুর মুক্তা পাওয়া যায়।
কামোকা পার্ল- এমন একটি খামার। এটি একটি ফরাসি পলিনেশিয়ান দ্বীপ  আহেতে অবস্থিত। এখানে ঝিনুকগুলো সুরক্ষিত জাল বা ঝুড়িতে পালন করা হয়। যখন একটি ঝিনুক যথেষ্ট বড় হয়, তখন ধরে খোলস ফাঁক করে ভেতরে নিউক্লিয়াস (খোলসের টুকরা) ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া এবং তাহিতির মতো জায়গায় সর্বাধিক মুক্তা চাষ করা হয়, তবে নিউক্লিয়াসগুলো ঐতিহ্যগতভাবে সংগ্রহ করা হয় মিসিসিপি নদীর অববাহিকা থেকে।

স্পাইডার গট
spider goat farm run by Utah State University
উটাহ স্টেট ইউনিভার্সিটি পরিচালিত স্পাইডার ছাগলের খামার

বাইরের পর্যবেক্ষকদের কাছে, উটাহ স্টেট ইউনিভার্সিটির পরিচালিত এই খামারটি একটি সাধারণ দুধ উৎপাদনকারী ছাগলের খামার বলেই মনে হবে। কিন্তু আসলে এখানে এসব ছাগলের দুধে বিশেষ কিছু রয়েছে: সুপার-স্ট্রং মাকড়সা রেশম!

এখানে তথ্য জানা থাকা ভালো- মাকড়সা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী তন্তুর (সুতা/রেশম) মধ্যে একটি তৈরি করে। কিন্তু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বছরের পর বছর এসব মাকড়সা চাষ করা বড় চ্যালেঞ্জ।  এই সমস্যা সমাধানের জন্য, গবেষকরা জিন সম্পাদন করে (জিন এডিটিং) একটি জিএম (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড) ছাগলের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এদের বলা হয় স্পাইডার গট। এই স্পাইডার গট কিন্তু সাধারণ ছাগলের মতোই, তাদের ডিএনএর সঙ্গে সোনালী চোখের মাকড়সা জিনের রিকম্বিনেশন করা হয়েছে। এই ছাগলের দুধ দোয়ার পরে মাকড়সা রেশমের বিশেষ প্রোটিনটি আলাদা করা হয়। এই রেশম দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য শরীরের বর্ম, মাছ ধরার সুতা, কৃত্রিম লিগামেন্ট এবং রগ তৈরি করা হয়।

সবচেয়ে ঝাল মরিচ
The pepper bred by crossing a Pakastani Naga with a Red Habanero
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার এড কুরির খামারের মরিচ

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার এড কুরি  তার খামারে যে ফসলটি চাষ করেন সেটি মোটেও সুস্বাদু কিছু নয়। তার খামারের বিশেষত্বই হচ্ছে ভয়ঙ্কর ঝাল মরিচ। এটির নামই হয়ে গেছে: ক্যারোলিনা রিপার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচ। একটি রেড হাবেনেরোর সঙ্গে পাকিস্তানী নাগা মরিচের সংকর করে এই জাত তৈরি করা হয়েছে। মরিচটি ২.২ মিলিয়ন স্কোভাইল তাপ ইউনিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যেখানে মেক্সিকান জালাপেনো কাঁচা মরিচ ৫০০০ ইউনিট এবং পিপার স্প্রে প্রায় ২ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছাতে সক্ষম।
২0১১ সালে ক্যারোলাইনা রিপার বিখ্যাত হয়ে যায় যখন আমেরিকার ন্যাশনাল পাবিলক রেডিওর (এনপিআর) একজন রিপোর্টার একটুকরো মরিচ খেয়ে মেঝেতে ভিড়মি খেয়ে পড়ে যান এবং পরে জাতীয় প্রচার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে হ্যালুসিনেশনের কথা জানান। এই ঘটনার দুই বছর পর  সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে নাম লেখায় ক্যারোলাইনা রিপার।

পাখির বাসার স্যুপ
soup made from the nests of swiftlet birds
এই পাখির বাসা দিয়েই বানানো হয় সুস্বাদু স্যুপ

সুইফটলেট পাখিদের বাসা থেকে তৈরি হয় বিশেষ ধরনের স্যুপ! বিশ্বাস হচ্ছে না তো! কিন্তু এই স্যুপ এশিয়ার কোনো কোনো দেশে বিরল অমৃত হিসেবে পরিচিত। এক বাটি স্যুপ ১০০ মার্কিন ডলারেও বিক্রি হয়।
বাসাগুলো সাধারণত বিভিন্ন গুহার দেয়াল থেকে সংগ্রহ করা হয়। কারণ এসব পাখি গুহার দেয়ালে বাসা বাঁধতেই পছন্দ করে।  ইন্দোনেশিয়াতে, শহুরে এলাকার বহু উঁচু ভবনে নানা কৌশলে এসব পাখি আকৃষ্ট করে ফাঁদ পাতা হয়। অবশ্য চাহিদার কারণে এখন এসব পাখির খামার করার কথাও অনেকে চিন্তা করছেন।

পিৎজা খামার
Most pizza farms produce their own herbs, wheat, tomatoes, and dairy, and some even go so far
পিৎজা খামারের একটি জমি এভাবে আবাদ করা হয়

দুঃখের বিষয় হল, এই খামারগুলো আসলে পিজার চাষ করে না, নাম দেখে যেমনটি আপনার মনে হয়েছে। তবে, তারা পিৎজা তৈরির জন্য যা কিছু লাগে সবকিছুই উৎপাদন করে। তারা এ ব্যাপারে রীতিমতো এক্সপার্ট। বেশিরভাগ পিৎজা খামারগুলো তাদের নিজস্ব গুল্ম (হার্ব), গম, টমেটো এবং দুধ উৎপাদন করে। এমনকি কিছু খামার তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের পিৎজা বানানোর চুলা জ্বালাতে ব্যবহৃত কাঠও নিজেরা উৎপাদন করে। কিছু খামার এমনভাবে ফসলের জমি সাজায় উপরে থেকে স্লাইস করা একটি পিৎজা পাই বলেই মনে হয়। আমেরিকার মধ্য পশ্চিমাঞ্চলে এরকম প্রচুর খামার রয়েছে।

মুজ খামার
Sumarokovo Moose Farm provides milk to the nearby Ivan Susanin Sanatorium
রাশিয়ার মুজ খামার

মুজ একটি বন্য প্রাণী, আর দুধও হয় খুব কম। ফলে মুজের দুধ দিয়ে কিছু বানানোর কথা চিন্তা করাই বোকামি। কিন্তু রাশিয়াতে, মুজের একটি খামারই রয়েছে শুধু দুধ উৎপাদনের জন্য। ১৯৬৩ সালে দুটি বাছুর নিয়ে খামারটি শুরু হয় এবং এরপর থেকে তারা ৮০০টিরও মুজ পালন করেছে।
সুমারোকোভো মুজ ফার্মটি ইভান সুসানিন সানাটোরিয়ামের দুধ সরবরাহ করে, যেখানে এটি পেপটিক আলসার এবং অন্যান্য সমস্যায় চিকিৎসার পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই দুধে একটি এনজাইম রয়েছে যা আলসার সৃষ্টিকারী
 ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। যদিও ডাক্তারদের মতে, দুধ আসলে আলসারকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

ক্যাকটাসের খামার
Nopales, a.k.a. prickly pears, were the sixth most popular vegetable in Mexico in 2007
ক্যাকটাসের খামারও হতে পারে দারুণ লাভজনক

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রুক্ষ্ণ মরুভূমিকে খামার করার জন্য একটি আদর্শ জায়গা হিসেবে কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু এখানেও অত্যন্ত লাভজনক একটি খামার করা সম্ভব। সেটা হতে পারে ক্যাকটাসের খামার। ২০০৭ সালে মেক্সিকোতে ছয়টি সর্বাধিক জনপ্রিয় সবিজর মধ্যে ছিল নোপালেস প্রজাতির ক্যাকটাস। সেবছর ১৫০ মিলিয়ন ডলারের নোপালেস বিক্রি হয়েছিল!
ক্যালিফোর্নিয়ার রেড রক র্যাঞ্চের মতো এবং অ্যারিজোনায় বাখ এর ক্যাকটাস নার্সারি খামারগুলো বিশাল বিশাল।

জোঁকের খামার
 leech therapy as a common treatment for a variety of conditions
রাশিয়ার জোঁকের খামার

বিভিন্ন রোগের নিরাময়কারী হিসেবে জোঁকের ব্যবহার সুপ্রাচীন কাল থেকে হয়ে আসছে। এখনো বিশ্বের অনেক দেশে বিভিন্ন সমস্যার  সাধারণ চিকিৎসা হিসেবে লিচ থেরাপি (জোঁক দিয়ে রক্ত চোষানো) ব্যবহার করে। এই রক্তপিপাষুদের চাহিদা এতোই বেশি যে ব্যাপকভাবে প্রজনন ও উৎপাদন করা হয়। নানা দেশে জোঁকের বাণিজ্যিক খামার রয়েছে।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর কাছে ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল লিচ সেন্টার বছরে ৩ মিলিয়ন জোঁক বিক্রি করে। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের তথ্য মতে, একবার জোসেফ স্ট্যালিনের মাথা ব্যাথা ও বিষণ্নতার চিকিৎসায় জোঁক ব্যবহার করা হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে সেটি ভালোই কাজ করেছিল!

Post a Comment

0 Comments