সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

গরুর পেটের পোকা আসলে কী? এটা কি ক্ষতিকর?

রুমেন ফ্লুক

পাকস্থলীর পোকা, কৃমি, চেটো- নানা নাম প্রচলিত আছে।  অনেকে বলেন- এসব পোকা সব তৃণভোজীর পাকস্থলীতে থাকে, খাবার হজমে সাহায্য করে, নিজেউ হজম হয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করে।

এই সব ধারণাই ভুল। এগুলো আসলে এক ধরনের পরজীবী (Parasite), যেমন: কৃমি।  এই পরজীবীকে বলে Rumen Fluck ((paramphistomes)। একই ধরনের পরজীবী যকৃতেও (Liver) হতে পারে।

কৃমি বা উকুনের মতো পরজীবীগুলো পশুর যেমন ক্ষতি করে এই রুমেন ফ্লুকও তেমন ক্ষতি করতে পারে।  গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এই পরজীবীতে আক্রান্ত হতে পারে।

রুমেন ফ্লুকে আক্রান্ত গরু চেনার উপায়
ক্ষুধামন্দা, পানিশূন্যতা, বৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়, দ্রুত ওজন হারানো, কোনো কিছুতেই আগ্রহ না দেখানো, রক্তশূন্যতা, পাতলা পায়খানা (কখনো রক্তও থাকতে পারে)। 

তাছাড়া এই পরজীবী থাকলে খাদ্য হজম ও শোষণ প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়। পশু খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দেয়। ফলে দ্রুত ওজন কমতে থাকে।  পশু অলস বসে থাকে।

অনুবীক্ষণ যন্ত্র বা ম্যাগনিফাইং গ্লাসের নিচে রেখে পশুর গোবর পরীক্ষা করলে ফ্লুকের ডিম চোখে পড়তে পারে।  এছাড়া আক্রান্ত গরুর পোস্ট মর্টেম করেও শনাক্ত করা যায়।

পশুর বড় ধরনের ইনফেকশন হলে এবং বিশেষ করে বাড়ন্তকালীন এই পরজীবী খুব ক্ষতি করে।  এই পরজীবী যখন রুমেন (প্রথম পাকস্থলী) অথবা রেটিকুলামে (দ্বিতীয় পাকস্থলী) অবস্থান করে তখন সাধারণত দৃশ্যমান কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করে না। কিন্তু দীর্ঘদিন এভাবে থাকলে ভয়ানক ইনফেকশন ঘটিয়ে রুমেনের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে।

তাছাড়া অপরিণত ফ্লুক যখন আপার স্মল ইনটেস্টাইনে (সরু নাড়ি/ভুঁড়ি) থাকে তখন ব্যাপক ইনফেকশন ঘটিয়ে পশুকে কঠিন রোগাক্রান্ত করতে পারে এমনকি মৃত্যুও ঘটিয়ে দিতে পারে।
রুমেন ফ্লুকের জীবনচক্র

কারণ
রুমেন ফ্লুক আক্রমণের সঠিক কারণা নির্ধারণ করা মুশকিল। তবে পশু অত্যন্ত স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে থাকলে এই পরজীবীর আক্রমণ বেড়ে যায়।  এর প্রধান কারণ হলো- রুমেন ফ্লুকের অন্তর্বর্তী পোষক (ইন্টারমেডিয়েট হোস্ট) হচ্ছে কাদা বা পানির শামুক।  শামুকের গায়েই থাকে এগুলোর ডিম।  পশু এর সংস্পর্শে এলে প্রথমে অন্ত্র (ভুঁড়ি), এরপর ধীরে ধীরে রুমেনে (পাকস্থলী) গিয়ে বাসা বাঁধে। এই ধরনের পরজীবী গরু/ছাগল/ভেড়ার যকৃতেও (লিভার) হতে পারে।  সে ক্ষেত্রে পশু খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। হজমশক্তি কমে গিয়ে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।  দ্রুত ওজন কমে যায়।

চিকিৎসা

পরিণত রুমেন ফ্লুক
রুমেন ফ্লুক যখন পরিণত থাকে তখন কোনো চিকিৎসাই সরাসরি পশুর উপকারে আসে না।  এটি মূলত ইন্টারমেডিয়েট হোস্ট হিসেবে শামুকের ইনফেকশন সোর্স কমিয়ে দেয়।  ফলে পরবর্তীতে পশুর চারণভূমিতে পরবর্তী প্রজন্মের সংক্রমণকারী ফ্লুক লার্ভার সংখ্যা কমে যায়।  ওষুধ দিতে চাইলে অবশ্যই শরৎ এবং বসন্তকালে (বর্ষার শেষ এবং গ্রীষ্মের শুরু) দিতে হবে।

অপরিণত ফ্লুক
অপরিণত ফ্লুক দিয়ে সৃষ্ট ইনফেকশন থেকে বাঁচতে সবচেয়ে জরুরি হলো আর্দ্র পরিবেশ (পুকুর, নদী, জলাশয়) থেকে পশুকে দূরে রাখা।  আর ওষুধ দিতে চাইলে এই অপরিণত ফ্লুকের জন্যই দিতে হবে। কারণ পরিণত ফ্লুকে কোনো ওষুধ কাজ করে না।  পাশাপাশি ডিহাইড্রেশনের জন্য স্যালাইন এবং দ্বিতীয়মাত্রার ইনফেকশন ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হতে পারে।  তবে যেকোনো চিকিৎসা শুরুর আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ ভেটের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

কৃমির চিকিৎসা
রুমেন ফ্লুকের জন্য এখনো কোনো সমর্থিত চিকিৎসা/ওষুধ নেই, যেমনটি আছে কৃমি বা উকুনের মতো পরজীবীর ক্ষেত্রে। তারপরও ভেটের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ ব্যবস্থা
যেহেতু রুমেন ফ্লকের তেমন কার্যকরী কোনো চিকিৎসা নেই সেহেতু এই ধরনের পরজীবী আক্রমণের আগেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন
১. আক্রান্ত এলাকার পানি সেচে ফেলুন
২. আক্রান্ত এলাকায় পশুর বিচরণ রোধ করতে বেড়া দিন
৩. বিকল্প ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ করুন।  অর্থাৎ ওই এলাকার পানি পান করতে দিবেন না
৪. পরজীবীর জন্য প্রচলিত চিকিৎসা দিয়ে দেখতে পারেন

বসন্ত ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে পশুকে ছেড়ে দিয়ে ঘাস খাওয়াবেন।  তবে গ্রীষ্ম ও শরতের শেষ দিকে এবং শীতের শুরুতে কখনোই পশুকে চারণভূমিতে ছেড়ে দেবেন না। এরপরও যদি স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে একাধারে দীর্ঘদিন চরাতেই হয় তাহলে বাছুর/বাচ্চাকে কখনোই পরিণত পশুর সঙ্গে চরাবেন না।

তবে আশার কথা হচ্ছে, একবার আক্রান্ত হলে গরু/ছাগল/ভেড়ার শরীরে এ ধরনের পরজীবীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এর ফলে আক্রান্ত হলেও আর গুরুতর কোনো ইনফেকশন হয় না। তবে বাছুর বা বাচ্চার এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।  বন্যার পর শুকিয়ে যাওয়া চারণভূমিতে ঘাস খেলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

Post a Comment

0 Comments