সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ভেড়া বা গাড়লের পশম কাটবেন কেন?


ভেড়ার পশম (লোম বা চুল নয়) কেটে দেওয়া খুব জরুরি। অনেকে মনে করেন এটা ঠিক নয়, এতে ভেড়ার ক্ষতি হয়। আসলে তা নয়- পশম কাটলে বরং ভেড়া আরাম পায়, ঘুরে ফিরে ঘাস খেতে সুবিধা হয়, বিশেষ করে বাতাসে যখন জলীয় বাষ্প বেশি থাকে এবং গরমকাল। তাছাড়া পশম বেশি বড় হয়ে গেলে ময়লা আবর্জনা, প্রস্রাব পায়খানা , ধুলাবালি, ইত্যাদি জমে এবং আস্তে আস্তে বিভিন্ন পোকা, উকুন, আঠালি, বাসা বাঁধে আর ভেড়ার রক্ত চুষে খায় এবং বিভিন্ন চর্মরোগ, রক্ত স্বল্পতা, স্বাস্থ্য খারাপ, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি হতে পারে । উন্নত দেশে ভেড়ার পশম কাটাকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় কারণ সেখানে পশমের অনেক ব্যবহার আছে। এ কারণে পশমে ময়লা জমে, ঝটা ধরে যাতে রঙ নষ্ট না হয় সেদিকে তারা খেয়াল রাখে। 

তাছাড়া অতিরিক্ত পশমের কারণে বাজারে ক্রেতা আকৃষ্ট হয় না। যদি রোজার ঈদের পর এক সপ্তাহের মধ্যে পশম কেটে দেওয়া যায় তাহলে ১-২ মাস পর এত সুন্দর লাগবে যে ২০-৩০% ক্রেতা এবং মূল্য বৃদ্ধি পাবে ।

যাই হোক ভেড়ার পশম কাটা রীতিমতো একটা দক্ষতার ব্যাপার। দক্ষ না হলে পশম কাটতে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে যেতে পারে। অনেক দেশেই ইলেক্ট্রিক ট্রিমার দিয়ে পশম কাটা। অবশ্য িএটি চুল কাটার ট্রিমারের মতো সাধারণ ট্রিমার নয়। এটিকে বলে ইলেক্ট্রিক শিয়ার মেশিন। এই মেশিন দিয়ে কাটলে সবগুলো পশম একসাথে কম্বলের মতো উঠে আসে।

তবে কাঁচি দিয়েও পশম কাটা যায়। উন্নত দেশে খামারিদের অনেকে নিজেরাই এই কাজটা করেন। আবার অনেক পেশাদার লোকও আছে যারা শুধু ভেড়ার পশমই কাটে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই এই পেশাদারদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঙ্গরাজ্যে এখন সরকারিভাবে এই পশম কাটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে বোঝেন সেখানে পশমের কেমন চাহিদা!

একজন পেশাদার নাপিত দুই মিনিটেরও কম সময়ে একটি ভেড়ার পশম কাটতে পারে। এযাবত বিশ্ব রেকর্ড হলো ৩৭.৯ সেকেন্ড! ২০১৬ সালে আয়্যারল্যান্ডের আইভান স্কট এই রেকর্ড করেন। অন্যান্য বিশ্বরেকর্ডগুলোর মধ্যে আছে-  ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ডের রডনি সাটন ৯ ঘণ্টায় ৮৩৯টি ভেড়ার বাচ্চার পশম কাটেন। আর ২০০৩ সালে হাঙ্গেরির জ্যানস মার্টন কাঁচি দিয়ে ৮ ঘণ্টায় ৫০টি ভেড়ার পশম কেটেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই রেকর্ড।

বছরের এক থেকে দুইবার পশম কাটলেই যথেষ্ট। বাচ্চা প্রসবের আগে- তাহলে মা ও বাচ্চাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে। আর গ্রীষ্মকাল শুরুর দিকে, অর্থাৎ বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য (মার্চ-এপ্রিল)।

আবার মাঝে মাঝে পেটের নিচে, জট, দড়ির মতো প্যাঁচযুক্ত পশম কেটে দিলে ভালো। এই ধরনের পশম সাধারণত কোনো কাজে আসে না। কিন্তু বিদেশে এরও ব্যবহার আছে। যেমন : যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের একটি কোম্পানি পেটের পশম দিয়ে উল ফার্টিলাইজার পিলেট বানায়।
কাচি দিয়ে পশম কাটার নিয়ম

১০ নম্বর কাপড় কাটার কাচি এই কাজের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। বাজারে ৪৫০ টাকায় পাবেন। তবে কাচিটি কেনার পর দুই মাথা অবশ্যই ভোঁতা করে নিবেন, যাতে পশম কাটার সময় চোখা অংশের গুতা লেখে ভেড়ার চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আর যখন নাভী , পাঠার বা খাসির প্রস্রাবের জায়গা, লেজ আস্তে আস্তে সাবধানে কাটতে হবে।

পশম কাটার সময় গলাতে দড়ি দিয়ে টান করে বাঁধবেন, তবে খেয়াল রাখবেন যেন টানাটানি করে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে না যায় । দুই জন লোক দুই পাশে ধরে রাখবেন, তবে এই কাজটা কাঠের ফ্রেমের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে দিয়েও করতে পারেন। ভেড়া যখন স্থির হবে তখন কাটা শুরু করবেন । সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাটবেন। তারপরও কেটে ফেললে ডেটল বা অন্য কোনো জীবাণুনাশক লাগিয়ে দিবেন ।

পশম কাটার নতুন প্রযুক্তি
ভেড়ার পশম কাটা খুবই দক্ষতা ও পরিশ্রমের কাজ। এই কাজটা সহজ করতে কিছু পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে একটি হলো- একজন অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী রাসায়নিক উপায়ে পশম ঝরিয়ে ফেলার উপায় বের করেছেন। এই পদ্ধতিকে বায়ো ক্লিপ বলে। এই পদ্ধতিতে ভেড়ার শরীরে একটি প্রাকৃতিক প্রোটিন/আমিষ পুশ করা হয়। এতে পশমের গ্রন্থিগুলো ভেঙে যায় ফলে আপনা আপনি পশম ঝরে যায়।

এছাড়া বিশেষ ধরনের একটি টেবিলও আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই টেবিলে শুইয়ে দিলে ভেড়াকে আর আলাদা একজনে ধরে রাখতে হয় না। এছাড়া রোবট দিয়েও পশম কাটার কাজ করা হয়।
ইলেক্ট্রিক ট্রিমার দিয়ে পশম কাটা

পশম কাটার পর যত্ন
ভেড়ার পশম কাটার পর একটু আলাদা যত্ন নেওয়া দরকার। কারণ পশমগুলো চামড়ার প্রটেকশন দেওয়ার মতো লম্বা হতে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে। পুরো শরীর পশমে ঢেকে না যাওয়া পর্যন্ত যেকোনো ধরনের আঘাত থেকৈ নিরাপদ রাখতে হবে। তাছাড়া বিশেষ করে ঠান্ডার সময় শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এই সময়টা খাবারের রেশনও বাড়িয়ে দিতে হবে।

Post a Comment

0 Comments