সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

ঔষধি গাছ দুধসাগর বা দুধস্বর

দুধস্বর গাছ

দুধসাগর, দুধস্বর বা দুধকশি- একটি ঔষধি গুল্ম।  গাছটির পুরো শরীর সাদা তরল পদার্থ বা দুধে ভরপুর। গাছটির যে কোনো জায়গায় একটু চিমটি কাটলেই সাদা তরল আঠালো রস বের হয়ে আসে। আর এই জন্য গাছটির নাম দুধসাগর। তবে কেউ কেউ এর নাম দেন দুধস্বর। সাধারণত বরেন্দ্র অঞ্চলের যে কোনো শুষ্ক বা আর্দ্র বেলে দো-আঁশ মাটি, রোদ বা ছায়াযুক্ত, স্যাঁতস্যাঁতে সব ধরনের মাটিতেই দুধসাগর গাছ জন্মায়।

দুধসাগর গাছটি ডাটাযুক্ত, গাছটির উচ্চতা সাধারণত ৮/১০ ফুট লম্বা, গাছটির আকৃতি ঝোপ জাতীয়, এই গাছের কোন পাতা নেই, তবে গাছটির গায়ের আবরণ একটু খসখসে, গাছটির শাখাপ্রশাখাগুলো ঘন সবুজ রঙের । এই গাছে কোনো প্রকার ফুল বা ফল দেখা যায় না । এই গাছের ডাটাগুলোর অগ্রভাগ ঝোপ প্রকৃতির হয়ে থাকে। দুধসাগর গাছের ডাটাগুলো এক প্রকারের গন্ধ আছে, আর এই গন্ধের কারণে গরু -ছাগল সহজে নষ্ট করতে পারে না। গাছটির গোড়া বা শিকড় মাটির গভীরে থাকে। গাছটি ডাল বছরের যে কোন সময় লাগানো যায়। এই গাছটি লাগানোর জন্য নিদির্ষ্ট কোন জায়গায় লাগে না, বাড়ির আশেপাশে বা পুকুর পাড়ে লাগানো যায়। গাছটির ডাল লাগানোর ১০/১৫ দিনের মধ্যেই ডালে কুশি গজায়। গাছটির বাড়ন্ত এমন যে বছরে দুই বার ডাল ছেঁটে দিতে হয় ।

দুধসাগর গাছের কিছু ওষুধি গুণাগুণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গৃহপালিত পশুর দুধজ্বর, দুধহীনতা ও ওলান ফোলা রোগের সমস্যা দুধসাগর বেশ কার্যকর। গাছের কচি ডালগুলো টুকরো টুকরো করে কেটে খড়ের সাথে একত্রে মিশে খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া এই গাছের ডাটা টুকরো করে কেটে বাঁশের পাতা, কলা পাতার সাথে জড়িয়ে খাওয়াতে হবে। তবে সকালে খালি পেটে খাওয়ালে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
বাড়ির সামনে দুধস্বর গ্রাছ

গবাদি পশুর উপকারের পাশাপাশি এই গাছ মানুষেরও উপকারে আসে। গ্রাম অঞ্চলে অনেক মায়ের দুধের ঘাটটি দেখা দিলে এটি খাওয়ানো যেতে পারে। অনেকে দুধসাগরের কচি ডাল রান্না করে খেয়ে থাকেন। শিং, মাগুর, কৈ, ফলি, টাকি মাছের সাথে ডাটাগুলো টুকরো করে কেটে রান্না করে ঝোল খেলে মায়ের দুধের ঘাটটি পূরণ হয় বলে অনেকের ধারনা।

ঔষধী গ্রাম
নাটোর সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম নিয়ে ঔষধী গ্রাম অবস্থিত। এলাকায় প্রবেশের সাথে সাথে রাস্তার দু‘ধারে দেখা যায় ঔষধী গাছের সমারোহ। ঔষধী গাছ গাছড়ার মধ্যে দুধসাগর, পাথরকুচি, কাশাবা, উলুটকমল, কর্ণপলাশ, শিমুল মূল, দাউদ মূল বাসক, তুলশি ,ঘৃত কাঞ্চন (অ্যালোভেরা ),শতমুলি, শিমুল, অশ্বগন্ধা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। . ঔষধি গ্রাম বিখ্যাত হওয়ার কারন ---- প্রায় ৪০ বছর আগে কবিরাজ আফাজ পাগলা (পুরো নাম মো. আফাজ উদ্দিন) কবিরাজি চিকিৎসার জন্য একান্ত নিজের প্রয়োজনে নিজ বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশে ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেছিলেন। তার দেখাদেখি ও উৎসাহে গ্রামের অন্যরাও ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেন। একসময় অনেকেই এ চাষে জড়িয়ে যান। আস্তে আস্তে এ গ্রামের নাম হয়ে যায় ঔষধি গ্রাম। . ঔষধি গ্রামের চাষের এলাকা : খোলাবাড়িয়া, কাঁঠালবাড়িয়া, ইব্রাহিমপুর, লক্ষীপুর, সুলতানপুর, চুরারিয়া, পিজ্জিপাড়া, দরাপপুর, টলটলিয়াপাড়াসহ নাটোর ও এর আশপাশের গ্রাম। . বেশি চাষ হয় : ঘৃত কাঞ্চন, শিমুলের মূল, শতমূল, হস্তীপলাশ, বিজ্জিমূল, পাথরকুচি, মিসরিদানাসহ কয়েকটি অতিপরিচিত ঔষধি গাছ। কারণ এসব ঔষধি গাছের চাহিদা তুলনামূলক অন্যান্য গাছের চেয়ে একটু বেশি।

কাঁঠালবাড়িয়া নতুন বাজার, হাটলক্ষীপুর, খোলাবাড়িয়াসহ এখানকার বিভিন্ন হাটবাজারের এই ঔষধি গাছ বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অনেক কবিরাজ, আয়ুর্বেদিক, ভেষজ বিক্রির হকার ও পাইকাররা তা কিনেন।

ঔষধি গ্রামের ভেষজ চাষিদের একত্র করে এ গ্রামে গড়ে উঠেছে লক্ষীপুর খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রাম সমবায় সমিতি লিমিটেড। এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবিরাজ মো. আফাজ উদ্দিন পাগলা। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনে বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০ জন। বর্তমানে এসব গ্রামের কৃষকেরা অধিকাংশ কৃষিজমি ও বাড়ির আঙ্গিনার আশেপাশে প্রায় ৩০০ প্রজাতির ঔষধীজাত গাছ গাছড়ার চাষাবাদ করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করে থাকে।

Post a Comment

0 Comments