পারা ঘাস |
দেশে খামারিদের কাছে সবচে জনপ্রিয় ঘাস নেপিয়ার। এরপরেই সম্ভবত পাকচুং বা পাকচং। এছাড়া ইপিল ইপিল, গিনি, ভুট্টা, সুদান, সুদান-শরগম এগুলোও কমবেশি চাষ হয়। যদিও সবচে বেশি আমিষ সমৃদ্ধ ঘাস আলফালফা চাষ এখনো এদেশে শুরু হয়নি। তবে এই ঘাষগুলোর জন্য উঁচু জমির দরকার। বছরের অনেকটা সময় বা সারাবছর জলাবদ্ধ থাকে এমন জমিতে এগুলোর একটিও চাষ করা যায় না। যাদের উঁচু জমি নেই বা নিচু জলাবদ্ধ জমি যারা খামারের কাজে ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য দুটি ঘাস চাষের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। এ দুটিও উচ্চফলনশীল ঘাস এবং বছরে অন্তত ৪-৫বার কাটা যায়। একবার লাগালে আর কখনোই লাগাতে হবে না। ঘাস দুটি নিয়ে যথাসম্ভব বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
পারা ঘাস
এরকম জলাবদ্ধ জমিতেও চাষ করতে পারেন পারা ঘাস |
পারা ঘাস এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। দেখতে অনেকটা দল ঘাসের মত। এ ঘাস মহিষ বা পানি ঘাস নামেও পরিচিত। জমিতে লাগানোর পর মাটিতে লতার মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প দিনের মধ্যেই সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে যায়। এ ঘাস পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং উচ্চ ফলনশীল। এটি জলাবদ্ধ ও লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং কয়েক দিন বন্যার পানিতে ডুবে থাকলেও এ ঘাস মরে না। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পারা ঘাস চাষ করা যায় এবং উঁচু স্থান অপেক্ষা নিচু জলাবদ্ধ জমিতে ভালো হয়। এ ঘাস গবাদি পশু ছাড়াও বিশেষ করে গ্রাসকার্প মাছের জন্য উৎকৃষ্ট খাবার। শীতকালের সামান্য সময় ছাড়া সারা বছরই চাষ করা যায়।
পুষ্টিমান
[শুষ্ক পদার্থের (ড্রাই ম্যাটার) ভিত্তিতে]
ক) ক্রুড প্রোটিন (অসম্পৃক্ত আমিষ- CP)- ৯.৪%
খ) ক্রুড ফাইবার (আঁশ- CF)- ২৯.৩%
গ) চর্বি (EE) ০.৮%
ঘ) খনিজ (Ash) ১০.৪%
ঙ) নাইট্রোজেন ফ্রি এক্সট্রাক্ট (NFE) ৫০.১%
জমি নির্বাচন
ক) ক্রুড প্রোটিন (অসম্পৃক্ত আমিষ- CP)- ৯.৪%
খ) ক্রুড ফাইবার (আঁশ- CF)- ২৯.৩%
গ) চর্বি (EE) ০.৮%
ঘ) খনিজ (Ash) ১০.৪%
ঙ) নাইট্রোজেন ফ্রি এক্সট্রাক্ট (NFE) ৫০.১%
জমি নির্বাচন
পারা ঘাস প্রায় সব জমিতে আবাদ করা যায়। উঁচু, নিচু, ঢালু জলাবদ্ধ এমনকি লোনা মাটিতেও এ ঘাস ভালো জন্মায় এবং ভালো ফলন দেয়। পারা ঘাস যেহেতু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে তাই যে সমস্ত স্থানে জলাবদ্ধতা আছে এবং পুকুর, ডোবা ও বাঁধের ধারে এ ঘাসের চাষ করা যেতে পারে।
রোপণ সময়
রোপণ সময়
বৈশাখ থেকে আশ্বিন এ ঘাস চাষের উপযুক্ত সময়।
রোপণ দূরত্ব
রোপণ দূরত্ব
সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছ ১.১.৫ ফুট।
বংশ বিস্তার
বংশ বিস্তার
পারা ঘাসের কাটিং বা লতা মাটিতে লাগিয়ে বংশ বিস্তার করা যায়।
চারা তৈরি
পরিপক্ব গাছের কম পক্ষে তিনটি গিট নিয়ে কাটিং তৈরি করতে হয়।
চারার পরিমান
চারার পরিমান
চারার পরিমাণ রোপণ ও দূরত্বের উপর নির্ভরশীল। ১.০X১.৫ ফুট দূরত্বে রোপণ করলে একরে প্রায় ২০ হাজার কাটিং প্রয়োজন।
রোপণের পদ্ধতি
সমতল শুকনা জমিতে প্রথমে ৪/৫ টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে গর্ত করে প্রতি গর্তে ৩/৪ টি কাটিং রোপণ করতে হবে। কাটিং ছাড়া সম্পূর্ণ লতাও রোপণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে লাইন বারাবর ১-১.৫ ফুট দূরত্বে কোদাল দ্বারা সামান্য গর্ত করতে হবে। এরপর ৩/৪ টি লতার গোড়া একত্রে করে প্রথমে গর্তে রেখে ভালভাবে মাটি চাপা দিতে হবে। অতঃপর উক্ত লতা সমূহের গিট অংশ পরবর্তী গর্ত গুলোর উপর বিছিয়ে দিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে। এভাবে সমস্ত জমিতে ঘাসের লতা রোপণ করতে হবে।
কাদা জমিতে
কাদা জমিতে
কাদা জমিতে লতার গোড়ার অংশ পুঁতে দিয়ে মাঝে পা দিয়ে লতার গিটের অংশ চেপে দিতে হবে। কাদা জমিতে চারা ছিটিয়ে গরু দিয়ে বা পা দিয়ে মারিয়ে দিয়েও পারা ঘাস লাগানো যায়। এ পদ্ধতিতে ঘাস লাগালে প্রতিটি গিট হতে নতুন চারা গজিয়ে দ্রুত ঘাসের বংশ বিস্তার ঘটে।
অসমতল/ঢালু জমিতে
অসমতল/ঢালু জমিতে
অসমতল বা ঢালু জমিতে যেমন রাস্তা , বাঁধ ও পুকুর পাড়ের ঢালে লাগালে প্রথমে ভাল ভাবে আগাছা পরিষ্কার করে গর্ত করে প্রতি গর্তে গোবর ও টিএসপি সার দিয়ে ঘাসের কাটিং বা লতা লাগাতে হবে।
সার প্রয়োগ
সার প্রয়োগ
পারা ঘাসের জমিতে সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। পারা ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল ঘাস এবং বছরে অনেকবার কাটা যায়। সুতরাং এ ঘাসের সারের চাহিদা প্রথমতঃ নাইট্রোজেন (ইউরিয়া সার)। সমতল চাষযোগ্য জমিতে যখন পারা ঘাস লাগানো হয় তখনে চাষের সময় একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার এবং প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে।
ঘাস কাটা
ঘাস কাটা
জমিতে চারা লাগানোর প্রায় ৬০-৭০ দিন পর প্রথম বার ঘাস কাটা যায়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪/৫ সপ্তাহ পর ঘাস কাটা যায়। মাটি হতে ৪/৫ ইঞ্চি উপর থেকে ঘাস কাটতে হয়।
ফলন
ফলন
পারা ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল বিধায় একর প্রতি বছরে গড়ে ২৫-৩০ টন সবুজ ঘাস পাওয়া যায়।
সংরক্ষণ
সংরক্ষণ
রোদে শুকিয়ে অর্থা হে করে খড়ের মতো সারা বছর সংরক্ষণ করা যেতে পারে
জার্মান ঘাস
জার্মান ঘাস এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। এ ঘাসের কান্ডের গিঁটে শিকড় থাকে এবং পারা ঘাসের মতো লাগানোর পর ঘাসের লতা সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘাস গরুর খবু পছন্দনীয়, দ্রুত বর্ধনশীল ও উচ্চ ফলনশীল। বাংলাদেশে এ ঘাস আবাদের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
জমি নির্বাচন
জার্মান ঘাস
সারা বছর জলাবদ্ধ থাকে এমন জমিতেও চাষ করা যায় জার্মান ঘাস |
জার্মান ঘাস এক প্রকার স্থায়ী ঘাস। এ ঘাসের কান্ডের গিঁটে শিকড় থাকে এবং পারা ঘাসের মতো লাগানোর পর ঘাসের লতা সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘাস গরুর খবু পছন্দনীয়, দ্রুত বর্ধনশীল ও উচ্চ ফলনশীল। বাংলাদেশে এ ঘাস আবাদের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
জমি নির্বাচন
জার্মান ঘাস পারা ঘাসের মত নিচু ও জলাবদ্ধ জমিতে চাষ করা যায়। জার্মান ঘাস দাঁড়ানো পানিতে জন্মনো যায়। সে সমস্ত জমিতে সারা বছর পানি থাকে অথবা কিছুকাল ডুবে থাকে, সে সব জমিতে এ ঘাস চাষ করা যায়। এছাড়া খাল, বিল, মজা পুকুর, নদীর ধার, ডোবা, নালাতে এই ঘাস চাষের জন্য উপযুক্ত।
রোপণের সময়
রোপণের সময়
মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ঘাস চাষের উপযুক্ত সময়।
রোপণের দূরত্ব
রোপণের দূরত্ব
সারি থেকে সারি গাছে থেকে ১-১.৫ ফুট।
বংশ বিস্তার
বংশ বিস্তার
এ ঘাস থেকে ভালো বীজ উৎপাদন হয় না। কাজেই কাটিং ও মোথা দিয়ে বংশবিস্তার করতে হয়।
কাটিং বা মোথা যেখানে পাবেন
কাটিং বা মোথা যেখানে পাবেন
জেলা বা উপজালার প্রাণিসম্পদ অফিসে। বিনামূল্যে কাটিং বা মোথা বিতরণ করা হয়।
চারা তৈরি
চারা তৈরি
গাছ পরিপক্ব হলে কান্ডের গিঁট থেকে শিকড় বের হয়। এ রকম পরিপক্ব গাছের কমপক্ষে ৩টি গিঁট নিয়ে কাটিং করতে হয়। সমতল শুকনা জমিতে লাগালে কয়েকটা চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত করে নিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে কোদাল দিয়ে গর্ত করে চারা বা কাটিং রোপণ করতে হবে। কাটিংগুলো কাত করে অর্থাৎ ৪৫-৬০ ডিগ্রি কোণে এমনভাবে লাগাতে হবে যেন কাটিং এর একটি গিঁট মাটির নিচে একটি মাটির সমান (লেভেল) এবং অপর গিঁট মাটির উপরে থাকে।
সার প্রয়োগ
সার প্রয়োগ
জার্মান ঘাস উর্বর জমিতে ভালো হয়। ভালো ফলনের জন্য জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গোবর দিতে হবে এবং চারা লাগানোর ২/৩ সপ্তাহ পর একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া ছিটিয়ে দিতে হবে, প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৩৫-৪০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
ঘাস কাটা
ঘাস কাটা
জার্মান ঘাস দ্রুত বর্ধনশীল। রোপণের ৫০-৬০ দিন প্রথম কাটার উপযোগী এবং এরপর প্রতি ৪/৫ সপ্তাহ পর পর কাটা যায়। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এ ঘাস মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ে। শীতকালে এ ঘাসের তেমন বৃদ্ধি ঘটে না।
ফলন
ফলন
জার্মান ঘাস বছরে প্রায় ৫ বার কাটা যায়। উর্বর জমিতে ও ভালো ব্যবস্থাপনায় বছরে একর প্রতি ৩০-৪৫ টন সবুজ ঘাস পাওয়া যায়।
7 Comments
ছায়া যুক্ত স্থানে মানে আমের বাগানে কোন ঘাস ভাল হবে।
ReplyDeleteছায়াযুক্ত স্থানে কোনো ঘাসই ভালো হবে না।
Deleteপারা ঘাস হতে পারে! তাছাড়াও একটা ঘাস আছে যেটা ছায়াযুক্ত স্থানেও হয়! আপনি কোন কৃষিবীদের নিকট জিজ্ঞেস করতে পারেন!
Deleteসরি, আমার এ ব্যাপারে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। আপনার তথ্যটি ট্রাই করে দেখা যেতে পারে। তবে জলাবদ্ধ জমিতে চাষ করার অভিজ্ঞতা আছে।
Delete@Urban আপনার আমের বাগানে যদি গাছ ছোট হয় এবং সারি করে লাগানো থাকে তাহলে সারির ফাঁকে আপনি যেকোনো উন্নত জাতের ঘাসই আন্তঃফসল হিসেবে চাষ করতে পারেন। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে ফলন যে কম হবে তাতো বুঝতেই পারছেন। তাছাড়া শীতকালে কিন্তু খেসারি বুনতে পারেন।
ReplyDeleteপারা ঘাস এবং জার্মান ঘাস কোথায় পাওয়া যাও৷ ১ একর জমির জন্য খরচ কত পরতে পারে।
ReplyDeleteলোনা পানিতে কি কোন ধরণের ঘাস চাষ করা যায়?
ReplyDelete