সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

জমি ছাড়াই বস্তায় আদা চাষ করে বেশি লাভ

আলু বা সারের বস্তায় বিনা খরচে আদা চাষ
চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। আবার একটি ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যাবে। খরচ নেই বললেই চলে!

অবিশ্বাস মনে হচ্ছে তো! না, এটা খুবই সম্ভব। এবং আপনার হাতের নাগালেই আছে সবকিছু। সিমেন্ট বা আলুর বস্তায় ফলানো যেতে পারে শাক–সবজি থেকে আদা–হলুদ!

এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠোন, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এর জন্যে আলাদা কোনও জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। 

বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জায়গাতে এই পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন। সাধারণত বাঁশবাগানের তলায় কোনও ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। সেই বাঁশবাগানে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন। 

পদ্ধতি
প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে। যাতে ঝুরঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সেজন্যে ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে হাড়ের গুঁড়ো, গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্যে বসাতে হবে ৭৫ গ্রামের একটি করে কন্দ। সামান্য জল দিতে হবে। এরপর বস্তার উপর ঢেকে দিতে পারলে ভালো হয়, তাতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকবে। অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসবে। 

আরেকটু বিস্তারিত পদ্ধতি
একটি বস্তায় তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি বালি, এক ঝুড়ি গোবর সার ও ২৫ গ্রাম ফিউরাডন লাগবে। বালি জল নিষ্কাশনে সাহায্য করে, ফিউরাডন উইপোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা করবে। মাটির সঙ্গে গোবর, বালি ও ফিউরাডন ভালোভাবে মিশিয়ে সিমেন্টের বস্তায় ভরে ঝাঁকিয়ে নিন তাতে মিশ্রনটি ভালোভাবে চেপে যাবে। আলাদা একটি বালি ভর্তি টবে তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিন। ২০-২৫ দিন পর ওই আদা থেকে গাছ বের হবে। তখন আদার চারা সাবধানে তুলে বস্তার মুখে তিন জায়গায় বসিয়ে দিন। দিনের অধিকাংশ সময় রোদ পায় এমন স্থানে বস্তাটি রাখতে হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদা গাছ বাড়তে থাকবে। চারা লাগানোর দু’মাস পরে চার চা চামচ সর্ষে খৈল এবং আধ চামচ ইউরিয়া প্রয়োগ করুন মাটিতে। মাঝে খুঁড়ে মাটিটা একটু আলগা করে দিলে ভালো হয়।

আদার কন্দ লাগানোর আগে ব্যাভিস্টিন দিয়ে শোধন করে নিলে ভালো হয়। এতে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচবে। চাইলে অন্য কোনো ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করতে পারেন। শোধনের পর আধা ঘণ্টা ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে।

জুন-জুলাই মাসে আদা লাগালে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে তোলার উপযুক্ত হয়ে যাবে। এক একটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে এক-দেড় কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। আদা তুলে নেওয়ার পর সেখানে সবজি চাষ করা যেতে পারে। সে জন্যে নতুন করে মাটি তৈরি করারও দরকার নেই। 

৩০০ বস্তা আদা চাষের জন্যে সাড়ে ৭০০ টাকার মাটি তৈরি এবং সার বাবদ আরও ১০০০ টাকা খরচ হতে পারে। প্রতিটি বস্তায় দেড় কেজি আদা হলে ৩০০ বস্তায় পাচ্ছেন ৪৫০ কেজি। ১০০ টাকা কেজি ধরলে আপনার আদার মোট দাম দাঁড়াচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা। যেখানে খরচ হয়েছিল মাত্র ১৭শ ৫০ টাকা!

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের “আত্মা” প্রকল্পের আওতায় গ্রামের নারী, দরিদ্র কৃষকদের এই প্রযুক্তি শেখানো হচ্ছে। আমাদের দেশের সরকার এগিয়ে না এলে আমাদেরই নিজেদের স্বার্থে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

Post a Comment

1 Comments

  1. আমি 150 বস্তা আদা চাষ করেছি। 30 বস্তা ধ্বসা রোগে মারা গেছে। বাকি 120 বস্তায় 95 কেজা আদা হয়েছে। আমার মোট কীটনাশক বাবদ খরচ 1000 টাকা ,সার সিমেন্ট বস্তা নিয়ে 500/- গোবর 600/- মাটি 1000/- নিয়ে মোট খরচ 3100/- আয় 9500/-
    লাভ 9500-3100 =6400/- ।আমার প্রশ্ন আমি 2019 সালে 2000বস্তা চাষ করব। এর জন্য বস্তা ও গোবর সার পাব কোথায়।
    সরকারী কোন সাহায্য পাব

    ReplyDelete